সিনেমাকেও হার মানায় রাব্বীর টিউশনির গল্প!

মো. আল-আমিন রাব্বী
মো. আল-আমিন রাব্বী

ছাত্র জীবনে টিউশনি করানোর অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। অভিজ্ঞতাগুলো কখনো তিক্ত, কখনো মজার। অনেকেই বলে থাকেন, গৃহশিক্ষকের মতন বিড়ম্বনার কাজ বোধহয় আর নেই। হাইড্রোলিক পিস্টন কিংবা বিক্রম বেতালের ভূতটার মতন চেপে রাখতে হয় পড়াশোনায়। তার পরেও নানান আবদার থেকেই থাকে। আরেকটু বেশি সময় দেয়া যায় কিনা, সুযোগ পেলে বড়টার পাশাপাশি ছোট টাকেও বসিয়ে দেন অভিভাবকেরা পড়াবার আবদারে।’

তারপরও টিউশনি অনেকে পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার মাধ্যম। কারো বা তিনবেলা ভাত খাওয়ার অবলম্বন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমনই একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন যশোর এম এম সরকারি কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ুয়া ছাত্র মো. আল-আমিন রাব্বী

জানতে চাইলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে আল-আমিন জানান, ‘কোনো কাজ না পেয়ে গল্পটি লিখেছি। এটা ভিন্ন ধরণের এক অভিজ্ঞতা ছিল।’ লেখাটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

আল-আমিন লিখেছেন, ‘আজ সকালে ছাত্রীকে পড়াতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি উনি রেডি হয়ে বসে আছেন। আমি বললাম কী ব্যাপার পড়বা না আজ? কোথাও যাবে না-কি? ম্যাডাম বললেন, জি স্যার; ক’দিন পরে তো ঈদ। আমার তো কিছুই কেনা হয়নি। আমি বললাম পড়ে যাও। তা উনি না-কি আজ পড়বেন না। আমার খুব রাগ হলো। রোজার মাসে ৫ কি:মি সাইকেল চালিয়ে আসলাম। আমি তাকে বললাম, একবার ফোন দিলে আসতাম না। ও কিছু না বলে হাসতে শুরু করলো। বলে রাখি- ওর সাথে আমার অনেক ভাল সম্পর্ক। ওর হাসি দেখে আমার খুব রাগ হলো। একটু বকাও দিলাম। বকা দিতেই আঙ্কেল চলে আসল; উনিও মজা নিচ্ছেন। বললেন- কি বাবা ও আজও পড়া পরেনি? বলেই কি অট্ট হাসি বাবা-মেয়ের। আন্টিও চলে আসলেন; তিনিও হাসা শুরু করলেন। মনে মনে ভাবলাম আমি হয়তো পাগলাগারদে আছি। যত সব পাগল। আন্টি বললেন- বাবা সাইকেলটা গ্যারেজে উঠিয়ে দাও।

এবার আমার অবাক হওয়ার পালা। কেন আন্টি? উত্তর আমার পন্ডিত ছাত্রী দিল। আপনিও যাচ্ছেন আমাদের সাথে। আন্টি বললেন- আমাদের একটা ছেলে আছে ওর জন্য কিছু কিনব। আমরা তো আর তেমন বুঝব না। তুমি একটু চলো। কী আর করা; চললাম। আন্টি আঙ্কেল আর পন্ডিত পিছনে বসল। আমি সামনে ড্রাইভারের পাশে। রাগ হচ্ছিল খুব। ফালতু সময় নষ্ট। কিন্তু কিছু করারও নেই। উনাদের টাকায় আমার সংসার চলে। বলে রাখি আমি সংসারে একা। যশোর এর বড় শপিং কমপ্লেক্স সিটিতে নিয়ে গেলেন। উনাদের জন্য অনেক কিছুই কিনলেন। বড় লোকের এলাহি কারবার।

সব শেষে উনার ছেলের জন্য কেনার পালা। অনেক ঘুরে দুইটা শার্ট আর একটা প্যান্ট পছন্দ করলাম। শার্ট শেষ পর্যন্ত একটা সিলেক্ট করলাম। আর একটা প্যান্ট। শেষে জুতা কেনার পালা। বললো জুতা কোথা থেকে নেওয়া যায়? বললাল আ্যাপেক্সে চলুন। ওখানে অনেকবার গিয়েছি। জুতা পছন্দও করা ছিলো। টিউশনে টাকা পেলে ওটা নিতে চেয়েছিলাম। কি আর করা ওটাই নিলাম ওই ছেলের জন্য। উনারাও অবাক, গিয়েই কোনার ওই জুতাটা কেন নিলাম? আমি বললাম আগেও এসে দেখেছি জুতাটা। বলেও ফেললাম ওটা আমিও নিব। উনারা খুশি হয়ে ওই জুতাটাই উনার ছেলের জন্য নিলেন। অবশেষে ফিরে এলাম ছাত্রীর বাসায়।

ওনার ছেলের অনেক ছবি দেখেছি। তবে সব ছোট বেলার ছবি। আবার আমাকে ৫ কিলোমিটার সাইকেল চালাতে হবে। খুব কষ্ট হচ্ছিল। সাইকেল নিতে যাব; এমন সময় ছাত্রী পিছনে এসে দাঁড়াল। বললো আপনাকে ডাকে আম্মু। অগত্যা যেতে হলো। গিয়ে দেখি আন্টি কান্নাকাটি করতেছে। আমারও মন খারাপ হয়ে গেল।

আন্টি বললো- বাবারে আজ আমার ছেলে থাকলে তোমার মতো বড় হত। এবার আমার অবাক হওয়ার পালা। ওই দিন জানতে পারলাম উনার ছেলে ১২বছর বয়সে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এবার আন্টি তিনটা প্যাকেট আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আরও জোরে কাঁদতে লাগল। এটা তোর জন্য কিনেছি। তুই তো আমার ছেলের মতো। তোর মাঝে আমি রাজুকে খুঁজে পায়। বলে আবার কাঁদতে লাগল। আমি নির্বাক। আসার আগে হাতে বেতনের খামটা ধরিয়ে দিল।

পড়ুন: মাতালো নেট দুনিয়া, বিশ্বকাপে জয়ার পারফরম্যান্স(ভিডিও)

আমি রাস্তাতে চলে আসলাম। আর ভাবতে লাগলাম শুধু শুধু নিজেকে ছোট ভাবি। ৫ কিলোমিটার যে কখন চলে আসলাম। রুমে এসে খামটা খুলে টাকাটা বের করে আগে গুনলাম। এমনি আমার বেতন দেয় ৬ হাজার ৫০০ টাকা। এবার একটু বেশি দিয়েছে বোনাসসহ ১০হাজার টাকা। আমি নিজে খুব খুশি হলাম। কিন্তু মনটা পড়ে রইলো আন্টির কাছে। কত বিচিত্র এই পৃথিবী। কত বড় লোক কিন্তু কত কষ্ট তাদের! আমার হয়তো কিছু নেই; কিন্তু আমার জগতে আমিই সবচেয়ে সুখী মানুষ।

পড়ুন: জজ হয়ে মায়ের গহনা ফিরিয়ে দিলেন ছেলে, কাঁদলেন মা!

পড়ুন: আজ তামাকমুক্ত দিবস: ঢাকার স্কুল পড়ুয়া ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থী পরোক্ষ ধূমপায়ী!

পড়ুন: ভাইরাল হওয়া এই ছবি ও তথ্য— সবই ভুয়া!


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence