যদিও ঢাবি ভিসি হয়েও তিনি মেয়েকে সেখানে পড়াননি

আমিনুল ইসলাম
আমিনুল ইসলাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই শিক্ষক একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও ছিলেন। তার সঙ্গে কথা হচ্ছিলো, তিনি খুব গর্ব করে বলছিলেন, আমার মেয়ে হার্ভার্ড থেকে ব্যাচেলর করে এখন অক্সফোর্ডে মাস্টার্স করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মেয়েকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে বললেন না? ভদ্রলোক মনে হলো খানিক অবাকই হলেন। এরপর বললেন, দেশে পড়াশুনা'র মানের যেই অবস্থা!

এই নিয়ে আমার কোন আপত্তি থাকার কথা না। দেশের পড়াশুনার মান তো কমছে, সে আমরা জানি। তাই তিনি তার সন্তানকে অক্সফোর্ড, হার্ভার্ডে পড়াতেই পারেন। এই নিয়েও আমার কোন আপত্তি নেই। আপত্তির জায়গাটা অন্যখানে। এই একই ভদ্রলোক যখন পত্রিকায় আর টেলিভিশনে গিয়ে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতা রাখে। আমরা এই সব ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিং মানি না। অর্থাৎ তিনি মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর অন্য যে কোন ভালো এবং নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো'ই। অথচ তিনিই তার মেয়েকে দেশে পড়াননি। কারণ তিনি মনে করছেন, দেশে পড়াশুনার মান খারাপ!

দেশে যখন প্রতি বছর নিয়ম করে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছিলো, নকল হচ্ছিলো; তখন আমাদের মন্ত্রী মশাই বলে বসলেন, প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে না। সব কিছু ঠিক মতো চলছে। আমাদের শিক্ষার মান অনেক ভালো! তো, দেশের শিক্ষার মান যদি এতোই ভালো হবে- আপনাদের সন্তানরা কেন দেশে পড়াশুনা করে না?

আমার পরিচিত অনেক ডাক্তার আছেন, তারা দিনে-রাতে উঠতে বসতে বলে বেড়ান- দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই ভালো। দেশের মানুষ শুধু শুধু চিকিৎসকদের সমালোচনা করে। অথচ নিজ চোখে দেখেছি, এই চিকিৎসকদের পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে প্রথমেই ভারত কিংবা সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা করায়!

গতকালই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ঢাকার রাজপথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। দেশের সড়ক ব্যবস্থার কেমন অবস্থা সে তো আমরা সবাই কম-বেশি জানি। অথচ আমাদের মন্ত্রী-এমপিরা দাঁত বের করে কি চমৎকার করেই না বলে বসেন, সব কিছু তো ঠিকই আছে। থাকবে না কেন, আপনারা তো আর আমাদের মতো রিকশা কিংবা বাসে করে যাতায়াত করেন না। আপনাদের তো বিশাল বিশাল গাড়ি আছে। পুত্রের জন্য একটা, কন্যার জন্য একটা, স্ত্রীর জন্য একটা আর আপনার জন্য আরকেটা! আর পুত্র কন্যারা রাজপথে গাড়ি চাপা দিয়ে মানুষ হত্যা করে বলে বসে, জানো আমি কার সন্তান! তো, আপনাদের কাছে তো সব ঠিকই মনে হবে!

ঢাকা ওয়াসার প্রধান বলেছেন, ওয়াসার পানি একদম বিশুদ্ধ! বলেছেন, ভালো কথা। তাহলে মানুষগুলো যখন ওই পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে আপনাকে খেতে বলল, তখন খেলেন না কেন? অবশ্য আপনাদের তো আর এইসব খেতে হয় না। আজই পড়লাম এই ভদ্রলোক বলেছেন, শ্রমিক'রা তো এই পানি খাচ্ছে, তাদের তো কোন সমস্যা হচ্ছে না! বাহ, কি চমৎকার! এখন আবার শ্রমিকদের কথা বলছেন! এর মানে আপনি নিজে খাচ্ছেন না! পানি খাচ্ছে শ্রমিকরা।

তা মশাই, পানি যখন এতোই বিশুদ্ধ, খেয়েই দেখুন না শরবতটুকু! যেই ভদ্রলোক তার আশপাশের মানুষজনদের নিয়ে শরবত নিয়ে গিয়েছিলেন, এখন আপনারা তার বাড়িতে গিয়ে হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছেন। এতো চমৎকার এবং অভিনব পন্থায় প্রতিবাদ করার জন্য কোথায় তার প্রশংসা করার কথা, সেটা না করে আপনারা এখন তাকে হুমকি দিচ্ছেন।

অবশ্য এমনই তো হওয়ার কথা। এই জনপদে প্রতিবাদ করলে মরতে হবে। এটাই তো স্বাভাবিক। নুসরাত নামের মেয়েটাকে তো মরতে হয়েছে। কে জানে, শরবত নিয়ে যেই চাচা আপনাদের অফিসের সামনে গিয়েছিল, কোন দিন হয়ত শুনবো তিনি গুম হয়ে গেছেন!আর আপনারা থেকে যাবেন মহা শান্তিতে!
কোন এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গিয়ে বলবেন, এখানে তো বাংলা সংস্কৃতির কোন চর্চাই হচ্ছে না! আপনারা বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে এইসব কি করছেন! আমরা তো বাংলাদেশি! আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে না!
আর আপনাদের ছেলে-মেয়েরা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে, ইউরোপ-আমেরিকার ডিগ্রি নিয়ে বলবে, "হাও ফানি দিজ পুওর পিপল আর!"
হ্যাঁ, আমরা তো ফানিই! শ্রমিক আর গরীব হয়ে জন্মে তো আমরা অপরাধ করেছি! আমাদের নিয়ে যখন ইচ্ছে তখন ফান তো করাই যায়! নইলে কি আর বলতেন, ওয়াসার পানি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ!এখন আমাদের হয় নুসরাতের মতো আগুনে পুড়ে মরতে হবে। নইলে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি'র ওই মেয়েটার মতো সড়ক দুর্ঘটনায় মরতে হবে। শরবত নিয়ে যাওয়া ওই চাচার মতো গুম হয়ে যাবার ভয়ে থাকতে হবে! নয়তো শ্রমিক হয়ে আপনাদের দূষিত পানি খেয়ে প্রমাণ দিতে হবে- ওয়াসার পানি সত্যিই বিশুদ্ধ! (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

আরো পড়ুন: হাঁটছেন ওবায়দুল কাদের (ভিডিও)

পরিবারের বিপরীতে চলে প্রশাসন ক্যাডার গাইবান্ধা কলেজের সোনালী

আমিনুল ইসলাম
সাবেক শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ