স্ত্রীর-সন্তানের পর নিজেও করলেন মরণোত্তর দেহদান

(বাঁ থেকে) অধ্যাপক অজয় রায়, তার স্ত্রী স্ত্রী শেফালি রায় ও ছেলে অভিজিত রায়

অধ্যাপক অজয় রায়ের অন্তিম অনুযায়ী আগামীকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরের পর তাঁর মরদেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার্থে ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজে দান করা হবে। এরআগে একইভাবে তার স্ত্রী ও সন্তানের মরদেহ গবেষণার কাজে হাসপাতালে দান করা হয়েছিল।

অধ্যাপক অজয় আজ সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

অজয় রায়ের ছেলে ব্লগার-লেখক অভিজিৎ রায় ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারীতে একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় জঙ্গিদের হাতে খুন হন। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে যাওয়া মেজর জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে।

ড. অজয় রায় ১৯৩৫ সালের ১ মার্চ দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের প্রায় সব গণতান্ত্রিক ও নাগরিক আন্দোলনের সামনের কাতারের মানুষ। স্কুল এবং কলেজজীবনে পড়াশোনা করেছেন দিনাজপুরে। ১৯৫৭ সালে এমএসসি পাশ করে যোগ দেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে।

তিনি ১৯৫৯ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে সেখানেই করেন পোস্ট ডক্টরেট। ১৯৬৭ সালে শিক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় যোগদান করেন এবং অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানেই কর্মরত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক অজয় রায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যা শুরুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসস্থল ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। অজয় রায় মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা সেলের সম্মানিত সদস্যও ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা অজয় রায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল ভাষা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানেও।

দেশী এবং বিদেশী বহু জার্নালে তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারী পদে ছিলেন। তিনি সম্প্রীতি মঞ্চের সভাপতি, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং এশিয়াটিক সোসাইটির বিজ্ঞান বিভাগের সম্পাদক। অধ্যাপক অজয় রায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

২০১২ সালে পদার্থবিজ্ঞানে একুশে পদক অর্জন করেন অজয় রায়। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই পদার্থবিদের দুটি গবেষণা নোবেল কমিটিতে আলোচিত হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রথম একই পরিবারের ৩জন চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণায় নিজ নিজ দেহ দান করলেন। এর আগে ৩ জানুয়ারী ২০১৯ এ অজয় রায়ের স্ত্রী শেফালী রায়ের মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ ঢাকার আদ-দ্বীন হাসপাতালে দান করা হয়েছিল। তাঁদের সন্তান ব্লগার-বিজ্ঞানী অভিজিৎ রায়ের মরদেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দান করা হয়েছিলো ২০১৫ সালে।