শিক্ষককে লাথি মারার ঘটনায় মামলা, নাম নেই ছাত্রলীগ নেতার: আটক ২

পরীক্ষায় নকল করতে না দেওয়ায় পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারী কলেজের এক শিক্ষকের পিঠে লাথি মারার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এস এম আব্দুল কুদ্দুছ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। এতে দুজনের  নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামী করা হয়েছে। তবে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শামসুদ্দীন জুন্নুনের নেতৃত্বে এই হামলার অভিযোগ উঠলেও তার নাম মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে আজ বৃহস্পতিবার কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এস এম আব্দুল কুদ্দুছ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যাদেরকে চিহ্নিত করা গেছে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। জুন্নুনকে সেখানে দেখা যায়নি। তবে তদন্ত করে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাকেও শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

তিনি বলেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নিয়েছে। অপরাধীদের আইনের মাধ্যমেই শাস্তি নিশ্চিত হবে। এছাড়া শিক্ষক মাসুদুর রাহমানের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন। তার কোন সমস্যা হবে না বলে আমরা আশা করছি।’

এদিকে পাবনায় শহীদ বুলবুল কলেজের শিক্ষক মাসুদুর রহমানকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সাফিন, সজল নামে দুইজন এজাহার নামীয় আসামীকে গ্রেফতার করেছে পাবনা জেলা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ( এডিসি) নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, পাবনা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) নিজে এই মামলার তদারকি করছেন। আরো দু’জন অজ্ঞাতনামাকে ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

মামলার এজাহারে অধ্যক্ষ প্রফেসর এস এম আব্দুল কুদ্দুছ বলেছেন, ‘আমি প্রফেসর আবব্দুল কুদ্দুস(৫৮) আইডি নম্বর-৪৯১০, অধ্যক্ষ, শহীদ বুলবুল সরকারী কলেজ, পাবনা সঙ্গীয় সহকর্মী ১। মো খায়রুজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা, ২। মোঃ ফরিদ আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক, দর্শন, ৩। শরিফুল ইসলাম, প্রধান সহকারী (ভারপ্রাপ্ত), ৪। মোঃ জহুরুল ইসলাম, ডে-গার্ড, সকালে শহীদ বুলবুল সরকারী কলেজ, পাবনা থানায় হাজির হইয়া এই মর্মে এজাগার দায়ের করছি যে, গত ৬ মে পাবনা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা ২০১৯ চলাকালে ১০৬ নম্বর কক্ষে বাংলা বিভোগের প্রভাষক মো. মাসুদুর রহমান ডিউটি করা কালে কতিপয় পরীক্ষার্থীকে অসুপায় অবলম্বন করতে বাধা প্রদান করেন।

উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১২মে বেলা ১টা ২৫মিনিটে পাবনা থানাধীন শালগাড়ীয় মহল্লায় শহীদ বুলবুল সরকারী কলেজের প্রধান গেইটে মোঃ মাসুদুর রহমান পৌছিলে আসামী ১। সজল (২০), পিতা- অজ্ঞাত, সাং- অজ্ঞাত, ২। শাফিন (২০) পিতা- অজ্ঞাত, সাং- অজ্ঞাত থানা ও জেলা পাবনাসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন বহিরাগত আসামী পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীর হাতে হাত দেওয়ার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে উক্ত শিক্ষককে সরকারী কাজে বাধা প্রদান করতে হত্যার উদ্দেশ্যে পথরোধ করে মারপিট শুরু করে।’

আরো বলা হয়েছে, আসামী সজল হত্যা করার উদ্দেশ্যে মাসুদুর রহমানকে গলা চেপে ধরে এবং লাথি ও কিল ঘুষি মারে। আসমী শাফিন মাসুদুর রহমান সাহেবের জামার কলার ধরে টানে। অন্যান্য আসামীগণ মাসুদুর রহমান সাহেবকে কিল ঘুষি মারিতে থাকিলে কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকবৃন্দ ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে গেলে মাসুদুর রহমান কলেজে আসলে কেটে দুই টুকরা করে ফেলবে বলে হুমকি প্রদান করে চলে যায়। উল্লেখিত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে এজাহারে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শামসুদ্দীন জুন্নুনের নেতৃত্বে এই হামলার অভিযোগ উঠলেও তার নাম মামলার এজাহারে উল্লেখ না করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন লিখেছেন, ‘পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারী কলেজের শিক্ষক মো. মাসুদুর রহমান, আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। তাকে কিভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা মূল অপরাধী জুন্নুন ওরফে শামসুদ্দিনকে বাদ রেখে মামলা করতে বলেছেন।

আর শিক্ষক সমিতি নিরাপত্তার কথা ভেবে মূল অপরাধীকে বাদ রেখে মামলা দিয়েছেন। আর এজাহার সেভাবেই দেওয়া হয়েছে। এই মামলা মাসুদ ভাই করেনি। গতকাল রাতে মাসুদ ভাইয়ের সাথে আমার বিস্তারিত কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, জুন্নুন মূল অপরাধী। তার নামে কেন মামলা দেওয়া হলো না, তা আমার বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে আমি শিক্ষকদেরকে বলেছি।

পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করবো, আপনারা মূল অপরাধীকে ধরুন। মাসুদ ভাই নিজের নিরাপত্তার খাতিরে সেই ঘটনার পর থেকে কলেজে যেতে পারেননি। প্রতিনিয়ত হুমকির মধ্যে আছেন।’

আরো পড়ুন: নকল করতে না দেয়ায় বিসিএস ক্যাডার শিক্ষকের পিঠে লাথি ছাত্রের! (ভিডিও)

‘কলেজে আসলে তোর হাত কেটে রাখব’: হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা