তিনশ’ প্রাণ বাঁচানোর নায়ক এবার কলেজ পড়ুয়া শাহান

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুর সেতুর স্প্যান ভেঙে সড়ক পথে সারাদেশের সঙ্গে সিলেটের যোগাযোগ বন্ধের পর সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সিলেট। রোববার রাত ১২টার দিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচাল স্টেশনের পাশে সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসের বগি ছিটকে পড়ে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ছয়জনের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। আহত হয়েছে শতাধিক।

এদিকে ওই ঘটনার পরপরই মধ্যরাতে ন্যাশনাল ইমারজেন্সি সার্ভিস ৯৯৯ নম্বরে ফোনের যে কাজটি করেন, তিনি হলেন শাহান মিয়া। শাহান মিয়ার বাড়ি কুলাউড়ার আকিলপুর গ্রামে। তিনি কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। সূত্রের তথ্য, ওই যুবকের ফোন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয় পুলিশ। ওই যুবক সময়মতো ফোন না দিলে আরও অনেক প্রাণহানি হতে পারত।

ট্রেন দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শাহান মিয়া বলেন, আমি বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। বরমচাল সেতুর অনেকটা দূরে আমি তখন। হঠাৎ বিকট শব্দ কানে আসে। সেই সঙ্গে ভেসে আসে মানুষের কান্না, চিৎকার। দূর থেকে তাকিয়ে দেখি, বরমচাল সেতু ভেঙে ট্রেনের বগি নিচে। কাছে যেতেই মানুষের কান্নার আওয়াজ আরও জোরে শোনা যায়। ঘটনার ২-৩ মিনিটের মধ্যেই আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেই। সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ হয় ফোন। তখন পুলিশকে পুরো ঘটনা খুলে বলি। যদি সময়মতো পুলিশ না আসতো, তবে আরও অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটতো।

তিনি আরও বলেন, বরমচাল স্টেশন সংলগ্ন সেতুতে হঠাৎ ট্রেনের ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে খালে পড়ে যায় এবং একটি বগি উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই কয়েকজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া লাইনচ্যুত বগির যাত্রী ছাড়াও মারাত্মক ঝাকুনিতে অন্তত দুই শতাধিক যাত্রী আহত হয়। ঘটনাস্থলে এসে আহতদের উদ্ধার করেছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।

স্থানীয় মোহাম্মদ জাহির আলী বলেন, ‘রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে বিকট শব্দ হয়। আমরা তখন বাড়ি থেকে দৌড়ে আসি। দুর্ঘটনা দেখে আমি কুলাউড়া ফায়ার সার্ভিসে ফোন দিই। পাঁচবার ফোন হওয়ার পরে ধরে। তারপর তারা বলে, সিলেটে ফোন দেওয়ার জন্য। আমরা তখন নাম্বার জোগাড় করে সিলেটে ও রেলে ফোন দিই। প্রায় দুইশজনের মতো মানুষের হাত-মাথা ফাটছে। এক ঘণ্টা পর কুলাউড়া ফায়ার সার্ভিস আর দেড় ঘণ্টা পর সিলেট ফায়ার সার্ভিস আসছে।’

সূত্রের তথ্য, রাত তখন প্রায় পৌনে ১২ টা। যথা নিয়মেই শোনা যাচ্ছিল ট্রেন চলার শব্দ। স্থানীয় ইসলামাবাদ, নন্দনগর, মহলালসহ আশপাশের গ্রামবাসী অনেকেই তখন ঘুমে। আবার কেউ কেউ নিচ্ছিলেন ঘুমের প্রস্তুতি। বরমচাল রেলস্টশন সংলগ্ন কালামিয়া (ফুলেরতল) বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী দোকানপাট বন্ধ করে ফিরছিলেন নিজ বাড়িতে। ওই ব্যবসায়ীদের অনেকেই প্রত্যক্ষ করছিলেন তাদের চিরচেনা ওই ট্রেনটির অচেনা দ্রুতগতি আর সাইরেন। হঠাৎ এমন দ্রুতগতি আর বিদঘুটে শব্দ শোনে তখন অনেকেরই সন্দেহ জাগে। কিছু দূর যেতে না যেতেই হঠাৎ ট্রেনের বিকট শব্দ।

সাথে সাথেই পেছনের বগিতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ আর ধোয়ার কুন্ডলি। এমন বিকট শব্দ আর দৃশ্যে অজানা শঙ্কা জাগায়। বাতাশেই ভেসে আসে যাত্রীদের গগণ বিদারী চিৎকার। এমনটিই জানাছিলেন ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজে আসা স্থানীয় লোকজন। দূর্ঘটনার পর আহতদের চিৎকারে আশপাশের গ্রামবাসী দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে এসে উদ্ধার তৎপরতা চালায় এবং ফায়ারসার্ভিস ও পুলিশকে দুর্ঘটনার খবর জানায়।

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উয়ারদৌস হাসান বলেন, রাত ১২টার কিছুক্ষণ আগে এক ব্যক্তি ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর জানায়। এত রাতে বড় ধরনের ট্রেন দুর্ঘটনার খবর শুনে অবাক হই আমরা। তখনই ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেই। সেখান থেকে ৬ জনের মরদেহ এবং অন্তত দুই শতাধিক মানুষকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

ওসি আরও বলেন, ইতোমধ্যে উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হতাহতদের উদ্ধারে কাজ করেছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বিজিবি। ট্রেনের অন্য যাত্রীদেরও নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন:স্বজনদের কান্নায় ভারি রেলের ধার (ভিডিও)


সর্বশেষ সংবাদ