স্বজনদের কান্নায় ভারি রেলের ধার (ভিডিও)

রাত তখন প্রায় পৌনে ১২ টা। যথা নিয়মেই শোনা যাচ্ছিল ট্রেন চলার শব্দ। স্থানীয় ইসলামাবাদ, নন্দনগর, মহলালসহ আশপাশের গ্রামবাসী অনেকেই তখন ঘুমে। আবার কেউ কেউ নিচ্ছিলেন ঘুমের প্রস্তুতি। বরমচাল রেলস্টশন সংলগ্ন কালামিয়া (ফুলেরতল) বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী দোকানপাট বন্ধ করে ফিরছিলেন নিজ বাড়িতে। ওই ব্যবসায়ীদের অনেকেই প্রত্যক্ষ করছিলেন তাদের চিরচেনা ওই ট্রেনটির অচেনা দ্রুতগতি আর সাইরেন। হঠাৎ এমন দ্রুতগতি আর বিদঘুটে শব্দ শোনে তখন অনেকেরই সন্দেহ জাগে। কিছু দূর যেতে না যেতেই হঠাৎ ট্রেনের বিকট শব্দ।

সাথে সাথেই পেছনের বগিতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ আর ধোয়ার কুন্ডলি। এমন বিকট শব্দ আর দৃশ্যে অজানা শঙ্কা জাগায়। বাতাশেই ভেসে আসে যাত্রীদের গগণ বিদারী চিৎকার। এমনটিই জানাছিলেন ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজে আসা স্থানীয় লোকজন। রোববার রাতে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা উপবন এক্সপ্রেস কুলাউড়ার বরমচাল রেলওয়ে স্টেশন পাড়ি দিয়ে প্রায় ২শ গজ সামনে আগাতেই ইসলামাবাদ গ্রামের বড়ছড়া রেলওয়ে ব্রিজে ওঠার আগেই ব্রিজ ভেঙ্গে বিকট শব্দে ট্রেনটির পেছনের একটি বগি ছড়ায় পড়ে যায়। আর আরো তিনটি বগি দুমড়েমুচড়ে রেলসড়কের পাশেই পড়ে যায়। অন্য ২টি বগি ব্রীজের দক্ষিণ পাশেই লাইনচ্যুত অবস্থায় কাত হয়ে কোনো রকম দাঁড়িয়ে থাকে। ৬টি বগিই চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এসময় ট্রেন থেকে আগুনের ফুলকি আর ধোয়া বের হতে থাকে। এই ৬টি বগি পড়ে যাওয়ার পর সামনের ১১টি বগিই ওই দূর্ঘটনার স্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার যাওয়ার পর থেমে যায়। দূর্ঘটনার পর আহতদের চিৎকারে আশপাশের গ্রামবাসী দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে এসে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। এবং ফায়ারসার্ভিস ও পুলিশকে দুর্ঘটনার খবর জানায়।

এদিকে উপবন এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের দেখতে দুর্ঘটনাস্থলে অনেকেই ভির জমাচ্ছেন। কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ভিড় করেছে হাজার হাজার মানুষ। সেখানে এসেছেন ওই রেলে থাকা যাত্রীদের স্বজনেরা। এ সময় নিখোঁজ স্বজনের খোঁজে এসে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

কুলাউড়ার বুকশিমুল গ্রামের বাসিন্দা আনু মিয়া এসেছেন তাঁর কলেজ পড়ুয়া ছেলে শাকিলের খোঁজে। তিনি বলেন, উপবন এক্সপ্রেসে করে তাঁর ছেলে ঢাকায় যাচ্ছিল। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালে ছুটে আসেন। এখন পর্যন্ত ছেলে শাকিলের খোঁজ পাননি আনু মিয়া। মুঠোফোনেও ছেলেকে পাচ্ছেন না বলে তিনি জানান।


সর্বশেষ সংবাদ