প্রস্তুতিমূলক বিসিএসেই সব পেল রোশনি, মেধাক্রম নারীদের শীর্ষে!

হুমায়রা সুলতানা রোশনী
হুমায়রা সুলতানা রোশনী

একমাত্র বিসিএস পরীক্ষা ছাড়া আর কোনো চাকরির পরীক্ষা তিনি দেননি। বলা যায় প্রস্তুতিমূলক বিসিএস-এর মাধ্যমে চাকরির পরীক্ষা শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাতেই বাজিমাত! প্রথমবার বিসিএস পরীক্ষাতেই প্রশাসন ক্যাডারে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন। মেয়েদের মধ্যে তার অবস্থান শীর্ষে তথা প্রথম অবস্থানে। তিনি পড়েছেন ঢাকা ডেন্টাল কলেজে। গল্পটা হুমায়রা সুলতানা রোশনীর।

শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার আনাখণ্ড গ্রামের জন্মগ্রহণ করেছেন তিনি। কাজী আ. হান্নান ও রাশিদা বেগমের একমাত্র সন্তান রোশনী। ছোটবেলা থেকেই ঢাকা শহরে বেড়ে ওঠা। পড়েছেন ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজে। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছিলেন ক্লাস ক্যাপ্টেন। স্কুলে থাকতে বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। স্কুলে পড়াকালীন গার্ল গাইডসের কল্যাণে একবার মালয়েশিয়াতে গিয়েছিলেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দুটোতেই পেয়েছেন জিপিএ ৫।

আরও পড়ুন: রোজা রেখে খেলেছেন যে তিন বাংলাদেশি ক্রিকেটার

উচ্চ মাধ্যমিকের পরে ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। কিন্তু বছর পার হতে না হতেই তার বাবার অসুস্থতা দেখা দেয়। ফলে ঢাকা মেডিকেলের জন্য দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষা দেন। কিন্তু ভর্তির সুযোগ হয় ঢাকা ডেন্টাল কলেজে। ডেন্টাল কলেজ থেকে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে স্বপ্ন দেখেন দেশের বাইরে গিয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করবেন। কিন্তু তার বাবা পরামর্শ দিলেন বিসিএস পরীক্ষার দেওয়ার জন্য। বাবার পরামর্শেই বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলেন।

 

প্রস্তুতির শুরুতে প্রথম দিকে তেমন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তারপর ধীরে ধীরে বুঝতে শিখলেন। বের করলেন কোন কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিলে বিসিএসে বেশি নম্বর পাওয়া যাবে। ইংলিশ, গণিত, মানসিক দক্ষতা ও বিজ্ঞানে বিশেষ গুরুত্ব দিলেন। শুরু থেকেই প্রতিদিন মিনিমাম এক ঘণ্টা বরাদ্দ রাখতেন গণিতের জন্য। গণিতের শর্টকাট নিয়ম করতেন না। সব সময় বিস্তারিত করতেন। নিয়মিত বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা পড়তেন। পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করে রাখতেন। পত্রিকার সম্পাদকীয় অনুবাদ করতেন।

রোশনী বলেন, অনুবাদ শেখার জন্য ‘মাসিক এডিটরিয়াল নিউজ’ নিয়মিত পড়তে পারলে অনেক কাজে দেবে। রোশনীর অনুবাদ চর্চার ফলে শব্দ ভাণ্ডার বেড়েছে, তা ছাড়া লিখিত পরীক্ষায়ও বেশ কাজে দিয়েছে। বিগত সালের প্রশ্ন বেশি বেশি দেখতেন। প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা নিয়মিত পড়তেন। টপিকস ধরে ধরে নোট করে নিজের নোট পড়তেন। গ্রুপে স্টাডি করতেন। ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহে করতেন। লিখিত পরীক্ষার খাতায় প্রচুর ডাটা, চার্ট, পাই চার্ট, টেবিল দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণ করায় যা বললেন ম্যাককালাম

রোশনী মনে করেন, ‘এগুলোতে পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখেছে।’ প্রচুর পরিমাণে দেশের ইতিহাসভিত্তিক বই ও মুক্তিযুদ্ধের বই পড়েছেন। আগামীতে যারা বিসিএস পরীক্ষা দিতে চান, তাদের জন্য পরামর্শ কী? জানতে চাইলে রোশনী বলেন, ‘বিসিএস যারা দেন তাদের অনেকে চাকরি পাওয়ার জন্য দেন না। তাই আপনি চাকরি পাওয়ার জন্য বিসিএস দিলে আপনাকে খুব সিরিয়াস হতে হবে। প্রত্যেকেরই নিজস্ব কৌশল আছে, সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। যে বিষয়ে আপনি দক্ষ সে বিষয়ে যাতে অন্যদের চেয়ে ভালো নম্বর পান সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কখনও হতাশ হওয়া যাবে না।’

রোশনীর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান. নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তিনি কাজ করতে চান। অনেকে নারীই অধিকার সচেতন নন, তাদের অধিকার সচেতন করবেন। সব সময় নারীদের অনুপ্রেরণা দিতে চান। হতে চান অনুপ্রেরণাদায়ী।

আরও পড়ুন- ফেল করে নয়, স্বেচ্ছায় হার্ভার্ড ছেড়েছিলেন জাকারবার্গ


সর্বশেষ সংবাদ