বশেমুরবিপ্রবি সিএসই বিভাগের ক্লাস নিচ্ছেন না শিক্ষকরা

  © ফাইল ফটো

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে প্রায় ৩৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে সকল ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম। এ নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভাগের বেশকিছু শিক্ষার্থী।

সিএসই বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সিএসই বিভাগে সর্বশেষ ক্লাস হয়েছিলো ৩ এপ্রিল। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত আক্কাস আলীর বিচারের দাবিতে আমরা ৭ এপ্রিল থেকে আন্দোলন শুরু করি। ১৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আক্কাস আলীকে চার বছরের জন্য চাকরিচ্যুত করলে আমরা ক্লাসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের শিক্ষকরা কোনো ক্লাস নেন নি। মাঝে একদিন একটি ক্লাস হলেও পরে আবার ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে জানতে পারি ওই ক্লাসটি শিক্ষকদের ভুল বোঝাবুঝির জন্য হয়েছিলো।

এ শিক্ষার্থী আরো জানান, তদন্ত চলাকালীন সময়ে আক্কাস আলীকে নিয়ে দেয়া কিছু ফেসবুক স্ট্যাটাসের জন্য শিক্ষকরা তাদের শাস্তি দাবি করছেন এবং শাস্তি প্রদান না করা পর্যন্ত তারা ক্লাস নিবেন না বলে জানিয়েছেন।

ক্লাস না নেয়ার কারণ হিসেবে সিএসই বিভাগের প্রভাষক হুসনুল আজরা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, তদন্ত চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকরা আমাদের নিয়ে বিভিন্ন কথা লিখেছে। যেগুলোতে আমাদের মানহানি হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তথ্য দিতে রাজি হননি বিভাগের এ প্রভাষক।

ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের বিষয়ে সিএসই বিভাগের বর্তমান সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন জানান আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দেয়। যার ফলে শিক্ষকরা কিছুদিন ক্লাস বন্ধ রেখেছিলো। তবে গত বুধবার আমরা শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. নুরুদ্দীন আহমেদ সাক্ষরিত একটি আদেশপত্রে সিএসই বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান, বিষ্ণু চন্দ্র সরকার, মো. মেজবাউল হাসান, মো. রাশেদুজ্জামান সিকদার ও সুকান্ত কুমার ঘোষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন সময়ে ফেসবুকে অশালীন স্ট্যাটাস দেওয়ায় কেনো তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবেনা জানতে চেয়ে এ পাঁচ শিক্ষার্থীকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত উত্তর প্রদান করতে বলা হয়েছে।

তবে ফেসবুকে অশালীন স্ট্যাটাস দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এই শিক্ষার্থীরা। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তারা ফেসবুকে কোনোরকম অশালীন স্ট্যাটাস দেননি। তারা কেবলমাত্র আন্দোলনকে বেগবান করতে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। পাশাপাশি তাদের আন্দোলন চলাকালীন আন্দোলন সংক্রান্ত বিভিন্ন নিউজ শেয়ার করেছেন।

প্রসঙ্গত, ৪ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্কাস আলীর দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করার বিষয়টি ভাইরাল হলে ৭ এপ্রিল থেকে আক্কাস আলীর স্থায়ী চাকরিচ্যুতির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ১৮ এপ্রিল আক্কাস আলীকে সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারসহ সকল ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে চার বছরের জন্য অব্যাহতি প্রদান করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ