যৌন হয়রানির অভিযোগে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক আক্কাসকে অব্যাহতি

শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন  © টিডিসি ফটো

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠায় ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকল কার্যক্রম থেকে ওই শিক্ষককে অব্যাহতি দিয়েছে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছে।

রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের বহিষ্কার দাবিতে ক্লাস বর্জন করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান এবং কুশপুত্তলিকায় আগুন দিয়ে শিক্ষকের প্রত্যাহার দাবি করেন। ওই শিক্ষকের আজীবন বহিষ্কার চেয়ে জানান, প্রশাসন যে সময় চেয়েছে তা আগামীকাল আমরা সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিব আন্দোলন স্থগিত করা হবে কিনা।

এছাড়াও রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের (ঢাকা) সামনে বশেমুরবিপ্রবি’র উদ্ভূত পরিস্থিতি ও আন্দোলনের সাথে সম্মতি জানিয়ে এক মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও উষ্মা প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান রক্ষার্থে সিএসই বিভাগের সভাপতি আক্কাস আলীকে দ্রুত চাকুরিচ্যুতি করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবার জন্য প্রশাসন, মহামান্য আচার্য (চ্যান্সেলর), মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে অনুরোধ করেন।

এছাড়াও শিক্ষার্থীরা বলেন, বশেমুরবিপ্রবি’র দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তদন্তের আশ্বাস এর আগেও দেয়া হয়েছে কিন্তু ২ মাসেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তাই প্রশাসনের উপর শিক্ষার্থীরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে দেওয়া অফিস আদেশ

এদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. নূরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে অভিযুক্ত শিক্ষক আক্কাস আলীকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ‘অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব আক্কাস আলীকে নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং শিক্ষার্থীদের আন্দেলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাসমূহ হচ্ছে-

১. জনাব আক্কাস আলীকে বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব থেকে তাঁর দেওয়া অব্যাহতি পত্র গ্রহণ করে তাঁকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হলো।

২. ভুক্তভোগী ছাত্রীদের কে কোনভাবে যেন হয়রানি করা না হয় তার নিশ্চয়তা প্রদান করা হলো।

৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক কোন ছাত্রীকে কার্যদিবস এবং অফিস সময় ব্যতীত অন্য সময়ে অফিস ছাড়া অন্য কোথাও ডাকতে পারবে না।

৪. কোন শিক্ষার্থীকে কোন শিক্ষক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি দিতে পারবে না, এরূপ প্রমাণিত হলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

৫. সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এতে প্রফেসর ড. মো. আব্দুর রহিম খান (বিজ্ঞান অনুষদ) কে সভাপতি, সহকারি অধ্যাপক ঈশিতা রায় (ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ) ও ড. কো. কামরুজ্জামান (সভাপতি, এসসিসি বিভাগ) কে সদস্য এবং প্রভাষক ড. মো. বশির উদ্দিন (ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ) কে সদস্য সচিব করে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ইঞ্জিনিয়ার মো. আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে দুই ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন গত ডিসেম্বর মাসে। তারা এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু, তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করা হয় বলে দুই ছাত্রী অভিযোগ করেন। সম্প্রতি যৌন নির্যাতনের শিকার ওই দুই শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরলে তা আলোচনায় আসে।


সর্বশেষ সংবাদ