করোনা সংকট

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ফের বাড়ছে

  © সংগৃহীত

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনই খোলার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছেন না শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারকরা। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে আগামী সেপ্টেম্বরের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুসরণ করছেন তারা।

এদিকে, এই বন্ধে শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য তাদের বাসায় রেখে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের টিভিতে এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান চলছে।

জানা যায়, গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর সাধারণ ছুটি শুরু হয়েছে ২৬ মার্চ থেকে। এরপর সাধারণ ছুটি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটিও বাড়ানো হচ্ছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্তে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়। করোনায় কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এসএসসির ফলও পিছিয়েছে। একইসঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা নির্ধারিত সূচিতে শুরু করাও যায়নি।

এ ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে গত দুই মাস যাবত দেশে অঘোষিত লকডাইন চলছে। তবে এ ভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে সম্প্রতি কিছুটা শিথিল করা হয়েছে এই লকডাউন। সম্ভাবনা রয়েছে আগামী ১ জুন থেকে সীমিত পরিসরে সকল ধরনের অফিস-আদালত এবং ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপাতত খুলে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এদিকে, ২৮ মে’র মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ৪ জুনের আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরবর্তী পরিকল্পনা জানাবে।

পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ১৫ জুন পর্যন্ত

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত যেটাই নেবে তা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সুবিধা সামনে রেখে সবচেয়ে ভালোটা নেবে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা চলছে। এ সপ্তাহের মধ্যে পরবর্তী ঘোষণা আসবে।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ব্যাপারে  ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেটাই বাস্তবসম্মত দিকনির্দেশনা বলে আমরা মনে করছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবো। তিনি আরও বলেন, বাচ্চাদের নিরাপত্তা আগে, এরপর লেখাপড়া। তাই এই মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না।

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মাসের শেষের দিকে গণভবনে কয়েকটি জেলার জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিং তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটাও আমরা এখন খুলবো না। সেটা আমরা কখন খুলবো, অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সবই বন্ধ থাকবে, যদিও না করোনাভাইরাস তখনো অব্যাহত থাকে। যখন এটা (করোনাভাইরাস) থামবে, আমরা তখনি খুলবো।

জানা যায়, দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হবার পর ১৬ মার্চ সরকার ঘোষণা দেয়, ১৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্কুল, কলেজসহ সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। তবে এর আগেই ঢাকার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে।

তাছাড়া পয়লা এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও তখন স্থগিত করা হয়। এদিকে, সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে কার্যত লকডাউন পরিস্থিতির কারণে এ বছরের এসএসসি অর্থাৎ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার ফলও পিছিয়ে যায়। আগামী ৩১ তারিখ এ ফল প্রকাশ করা হবে। ঐ পরীক্ষায় ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিল।

পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও অফিস খোলার প্রজ্ঞাপন জারি

পরে সরকার যখন প্রথম দফা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে, তখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির মেয়াদ ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ওই সময় পর্যন্ত সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় ও কোচিং সেন্টারের শ্রেণীকক্ষে পাঠদান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রনালয়। এরপর দফায় দফায় সাধারণ ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

সর্বশেষ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আগামী ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বৃদ্ধি করেছে সরকার। সরকারের এই ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করেই ৩০ মে পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে দুই মন্ত্রণালয়।


সর্বশেষ সংবাদ