গুলির শব্দে ঘুম ভাঙে, জেগে দেখি ঘরের দরজায় লাশ

রাত ৪টা। হঠাৎ গুলির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আবদুল বারেক ও কবির হোসেনদের। পূর্ব বুড়িরচর গ্রামের বাসিন্দা তারা। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে জানান, ভোর সোয়া ৪টার দিকে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শুনতে পান তারা। এতে আচমকা ঘুম ভেঙে যায়। পরে জেগে দেখি খলিল মাস্টারের ঘরে দরজার সামনে এক যুবকের লাশ। পুলিশ তাঁর লাশ ঘিরে রেখেছিল। মূলত এরপরই তারা জানতে পারেন আলোচিত হত্যার আসামী নয়ন বন্ড নিহত হয়েছেন।

গ্রামের আজাদ নামে এক যুবক জানান, এত বড় সন্ত্রাসী আমাদের গ্রামে লুকিয়ে ছিল, ভাবাই যায় না। তবে নিহত হওয়া নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। আজাদ আরো জানান, তখনও ঘুম ভাঙেনি, হঠাৎ মানুষের চিৎকার-চেচামেচি শুনতে থাকি। লোকজন এদিক-সেদিক দৌঁড়াদৌড়ি করছিল। পরে বিষয়টি জানতে পারি। তবে বাড়ি দূরে হওয়ায় গুলির শব্দ তিনি পাননি বলে জানান। 

এদিকে নয়ন নিহত হওয়ার  পর বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। যদিও ইস্যুটি নিয়ে দু’দিন ধরেই গণমাধ্যমকে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। তবে আজ বলেন, ‘আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে চির কৃতজ্ঞ। তাদের কারণেই নয়ন আজ শাস্তি পেল। আয়েশা বলেন, শুধু নয়ন মরলে হবে না, প্রত্যেককে শাস্তি দিতে হবে। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত এবং পরিকল্পনাকারী- সবার শাস্তি চান তিনি।

এর আগে তিনি বলেছিলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামী হত্যার বিচার চেয়েছিলাম। আমি নয়ন, রিফাত ফরাজী, রেশান ফরাজী আরও ওই জায়গায় যারা ছিল প্রত্যেকের ফাঁসি চাই।

পড়ুন:কাঁদামাটিতে পড়ে থাকা নয়নকে দেখতে শত শত মানুষ (ভিডিও)

জানা যায়, দিনে-দুপুরে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি নয়ন বন্ড হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক ছিলেন। আজ ভোরে বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হন। এসপি জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে তিনটি চাপাতি, একটি পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। নয়ন বন্ডের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আরো পড়ুন: যেভাবে ধরা পড়েন অজপাড়া গাঁয়ে লুকিয়ে থাকা নয়ন

ছেলের আত্মা শান্তি পাবে- রিফাতের বাবা: স্বস্তি প্রকাশ করেছেন রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ। তিনি বলেছেন, বন্দুকযুদ্ধে নয়ন বন্ডের নিহত হওয়ার খবর শুনে আমার খুব ভালো লাগছে। দুলাল শরীফ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এত দিনের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই, যার নির্দেশে জিরো টলারেন্স ঘোষণার পরই প্রশাসন তৎপর হয়েছে। তারা রাত-দিন কাজ করে আসামিদের ধরেছে। গত রাতে নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে, এতে আমার ছেলের আত্মা যদি একটু শান্তি পায় বলেই কেঁদে ফেলেন তিনি।

দুলাল শরীফ আরও বলেন, মিডিয়া কর্মীদের আমি ধন্যবাদ জানাই। তাদের প্রচার আসামিদের ধরতে সহায়তা করেছে। এই আসামিরা কারা, তারা কাদের ছত্রছায়ায় চলে এটা গোয়েন্দা সংস্থাকে তদন্ত করে বের করে তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ভোর রাত ৪টার দিকে বরগুনা সদর থানার পুলিশ নয়ন বন্ডকে গ্রেপ্তারের জন্য ওই গ্রামে যায়। ওই গ্রামের খলিল মাস্টারের বাড়ির সামনে গেলে নয়ন বন্ড ও তাঁর সহযোগীরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলে নয়ন নিহত হন। হামলায় বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান মিয়াসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হন। এঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, বরগুনায় স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোররাতে বরগুনার পুরাকাটা এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত নয়ন বন্ড বরগুনা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কলেজ রোড এলাকার মৃত মো. আবুবক্কর সিদ্দিকের ছেলে এবং রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি।

দেখুন:কাঁদামাটিতে পড়ে থাকা নয়নকে দেখতে শত শত মানুষ (ভিডিও)

আরো পড়ুন: গোলাম রাব্বানীর প্রচেষ্টায় চাকরি পেল টিএসসির সেই কণা


সর্বশেষ সংবাদ