যেভাবে ধরা পড়েন অজপাড়া গাঁয়ে লুকিয়ে থাকা নয়ন

  © সংগৃহীত

বরগুনায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড। অন্য আসামিরা গ্রেফতার হলেও নয়নের হদিস না মেলায় উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছিল। এ নিয়ে নানা মহল থেকে বিভিন্ন ধরণের আলোচনা সমালোচনাও হচ্ছিল।

তবে আজ মঙ্গলবার সকালে সবার ঘুম ভাঙার আগেই হদিস মিলল নয়ন বন্ডের। তবে জীবিত নয়, মৃত। পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ভোর সোয়া ৪টার দিকে নিহত হয়েছেন তিনি। জেলার পুরাকাটার পায়ারা নদীর পাড়ে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তারা। এ নিয়ে সারাদেশে এখন আলোচনা চলছে।

কিন্তু কিভাবে তার খোঁজ মিলল। পুলিশই জানিয়েছে সে প্রশ্নের উত্তর। তার খোঁজে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছিল। সারাদেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। এরই একপর্যায়ে সদর উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে তার লুকিয়ে থাকার তথ্য মেলে। সে অনুযায়ী অভিযান চালায় পুলিশ।

বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন জানান, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডকে গ্রেফতার করতে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা নামক এলাকায় ভোর সোয়া ৪টার দিকে অভিযান চালায় পুলিশ’

পুলিশ জানিয়েছে, সেখানকার পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় নদীর ধারে অবস্থান করছিলেন নয়ন বন্ড ও তার সঙ্গীরা। এসময় সেখানে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায় নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলির একপর্যায়ে নয়ন বন্ড বাহিনী পিছু হটে। পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি করে নয়ন বন্ডের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করার কথা পুলিশ জানায়।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে যে, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা এলাকায় অবস্থান করছে। তারা পুরাকাটা সংলগ্ন পায়রা নদী দিয়ে ট্রলার যোগে বরগুনা সদর উপজেলা ত্যাগ করে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তিনি জানান, পরে এমন তথ্যের ভিত্তিতে বরগুনার পাথরঘাটা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিএম আশ্রাফ উল্যাহ তাহেরের নেতৃত্বে ভোর ৪টা ১৫ মিনিটের দিকে পুরাকাটার ঘটনাস্থলে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় নয়ন বন্ড তার ৫-৭ জন সহযোগীকে নিয়ে পুলিশের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। পরে আত্মরক্ষার জন্য পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়।

মারুফ হোসেন আরও বলেন, দুই পক্ষের গুলি বিনিময়ের একপর্যায়ে পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণকারীরা পিছু হটলে পুরাকাটা এলাকার মজিদ মিলিটারীর বাড়ির পূর্বপাশে পায়রা নদীর বেড়ি বাঁধের পাশে তল্লালি চলাকালে গুলিবিদ্ধ একটি মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ। এদিকে গোলাগুলির শব্দ পেয়ে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে উদ্ধার হওয়া মরদেহটি রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ডের বলে শনাক্ত করেন তারা।

নয়ন বন্ডের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় নয়ন বন্ডকে অভিযুক্ত করে বিভিন্ন সময় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এসব মামলার মধ্যে দুটি মাদক মামলা, একটি অস্ত্র মামলা, হত্যাচেষ্টাসহ পাঁচটি মারামারির মামলা রয়েছে।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় মামলার এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা অভিযুক্ত তানভীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ ছাড়া নাজমুল হাসান, সাগর ও সাইমুন নামে অপর তিনজন বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন। এদিকে মামলার ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় গ্রেফতার হলেও তিনি বরগুনা জেলা পুলিশের কাছে পৌঁছায়নি।

উল্লেখ্য, বরগুনায় স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোররাতে বরগুনার পুরাকাটা এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত নয়ন বন্ড বরগুনা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কলেজ রোড এলাকার মৃত মো. আবুবক্কর সিদ্দিকের ছেলে এবং রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি।

আরো পড়ুন: গোলাম রাব্বানীর প্রচেষ্টায় চাকরি পেল টিএসসির সেই কণা


সর্বশেষ সংবাদ