পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা নাকি অ্যাডমিন ক্যাডার— দ্বিধায় ভুগছেন মলি

মলি আক্তার
মলি আক্তার  © সংগৃহীত

এদেশের লাখো তরুণের স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার হওয়া। কিন্তু চাইলেই কি বিসিএস ক্যাডার হওয়া যায়! বিসিএস ক্যাডার হওয়ায় জন্য পাড়ি দিতে হয় সাত সমুদ্র তের নদী। সফলভাবে অতিক্রম করতে হয় প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক পরীক্ষা, পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ প্রতিটি ধাপ। এত কিছুর পরেও সবার দৃষ্টি থাকে বিসিএসের ওপর। কারণ অনেকে মনে করেন, বিসিএস এ যেমন সম্মান আছে তেমনি আছে ক্ষমতা, আছে শুদ্ধতা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা করলেও বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় ৩৮তম বিসিএস-এ এডমিন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোছা. মলি আক্তার। শিক্ষা জীবনে কৃষিতে অনার্স এবং উদ্যানতত্ত্ব বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। পরে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে যোগদানের মাধ্যমে নিজের কর্ম জীবন শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে গত বছর নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।

সম্প্রতি ৩৮ তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে সেখানেও নিজ মেধার উজ্জ্বলতার স্বাক্ষর রাখেন মলি আক্তার। এমনই একজন সম্মুখভাগের বিসিএস যোদ্ধার সফলতার গল্পটি পাঠকদের উদ্দ্যেশে তুলে ধরা হলো- সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাবিপ্রবি প্রতিনিধি আব্দুল মান্নান।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কবে থেকে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য প্রস্ততি নিতে শুরু করেছেন?

মলি আক্তার: অনার্স লেভেলে টুকটাক পড়া শুরু করলেও আমি মূলত মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার পর বিসিএস প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। শুরুতে বিসিএস কোচিংয়ে ভর্তি হলেও পরবর্তীতে আর কোচিং করা হয়নি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার বিসিএস অনুপ্রেরণা কে ছিলো?

মলি আক্তার: আমার বিসিএস অনুপ্রেরণা বলতে গেলে শুরুতে আমি আমার বন্ধু, ব্যাচমেটদের কথাই বলবো। কারণ, ৩৬তম বিসিএস এ যখন আমার বন্ধুরা বিসিএস পায় তখনই আমার মধ্যে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জিদ কাজ করে। আমার ব্যাচে আমি ২য় হয়েও বিসিএস ক্যাডার হতে না পারায় আমার আক্ষেপ বেড়ে যায়। সে কারণেই মূলত বিসিএস দেয়া। আর আমাকে যারা সব সময় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তার মধ্যে আমার স্বামী এবং বাবা-মার ভূমিকা ছিলো অতুলনীয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস এর জন্য দৈনিক কত ঘণ্টা পড়াশোনা করেছেন?

মলি আক্তার: আমি আসলে ঘড়ির ঘণ্টা নিয়ে ঐভাবে পড়াশোনা করি নাই। আমি একটু ঘুম প্রিয় মানুষ। ঠিক মতো ঘুম পাড়ার পর যেটুকু সময় পেয়েছি, পুরো সময়টাই বিসিএস এর জন্য পড়াশোনা করেছি। সেটা কমপক্ষে হলেও ৮-১০ ঘণ্টা তো হবেই। আর বিসিএস হলো অনেকটা ধৈর্য্যের পরীক্ষা। যে যত বেশি ধৈর্য্য নিয়ে পড়তে পারবে সে তত বেশি এগিয়ে থাকবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাজারে বিভিন্ন লেখকের বই পাওয়া যায়। আপনি কোন লেখকের বই বেশি ফলো করেছেন?

মলি আক্তার: এক্ষেত্রে আমি বলবো, যেকোনো একটা সিরিজের বই নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। আমিও সেটিই করেছিলাম। প্রথমে এমপি-থ্রি সিরিজের বইগুলো শেষ করছি। এরপর প্রফেসর’স এর বিগত প্রশ্ন ও নৈব্যত্তিক অংশ দেখেছি। তবে জব সল্যুশনস বিশেষ করে প্রফেসর’স জব সল্যুশন কয়েকবার ভালো করে পড়েছি। ফলে বইয়ের যেকোনো অংশ থেকে প্রশ্ন করলে অপশন ছাড়াই উত্তর বলে দিতে পারতাম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এটি আপনার কততম বিসিএস ছিল এবং অনার্স পাশের পর অন্য কোন জব করেছেন কিনা?

মলি আক্তার: এটিই আমার প্রথম বিসিএস বলা যায়। কেবলমাত্র এটিতেই আমি প্রিলি, রিটেন এবং ভাইবাতে সফলতার সাথে শেষ করেছি এবং বিসিএস পাওয়ার ব্যাপারে এবার অনেক বেশি কনফিডেন্ট ছিলাম। এর আগে ৩৬ এবং ৩৭তম বিসিএস দিলেও সফল হতে পারিনি। আর অনার্স-মাস্টার্সের পর একটি ব্যাংকে ১০ মাস জব করেছি। বর্তমানে হাবিপ্রবিতে উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের লেকচারার হিসেবে আছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস ও একাডেমিক পড়াশোনা দুটো কিভাবে ম্যানেজ করেছেন?

মলি আক্তার: একাডমিক ও বিসিএস দুটো একসাথে চালানো কিছুটা কষ্টকর। আর যারা সেমিস্টার সিস্টেমে পড়াশোনা করে তাদের তো আরও বেশি সুযোগ নেই। তাছাড়া আমি এগ্রিকালচারে ছিলাম সে কারণে আরও সুযোগ ছিলো না। সারাদিন ক্লাস-পরীক্ষা শেষে প্রাক্টিক্যাল খাতা লিখার একটা চাপ ছিলো। এরপরেও আমি চেষ্টা করেছি প্রস্তুতি নেয়ার। অনার্সের তুলনায় মাস্টার্সে কিছুটা চাপ কম থাকায় আমি মূলত মাস্টার্সেই বিসিএস পড়াশোনা শুরু করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস প্রস্ততি নিতে গিয়ে আপনি কি কি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন?

মলি আক্তার: আমার তেমন কোন প্রতিবন্ধকতা ছিলো না। তবে বন্ধুদের বিসিএস হওয়া দেখে একটা মানসিক চাপ কাজ করেছিলো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

মলি আক্তার: তেমন কোন পরিকল্পনা এখনো করা হয়নি। আমি এখন যে জায়গায় আছি এবং যে ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি দুটো জায়গা থেকেই দেশের জন্য, সমাজের জন্য অনেক কিছু করার সুযোগ আছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আগামীতে যারা বিসিএস দিবে তাদের জন্য আপনার কি পরামর্শ থাকবে?

মলি আক্তার: আমি আগেই বলেছি বিসিএস হলো ধৈর্য্যের পরীক্ষা। ধৈর্য না থাকলে বিসিএস অনেক কঠিন মনে হবে। একদিন খুব পড়াশোনা করলাম আর একদিন করলাম না এইভাবে ভালো কিছু করা সম্ভব হবে না। বিসিএস পেতে চাইলে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে এবং এলোমেলোভাবে না পড়ে যেকোনো একটা সিরিজের বই ভালোভাবে শেষ করতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কখন থেকে বিসিএস প্রস্তুতি নেয়া উচিত?

মলি আক্তার: যাদের একাডেমিক রেজাল্ট খারাপ তাদের জবের পড়াশোনায় বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে চেষ্টা করা রেজাল্ট যেন ৩.৫০ বা এর আশপাশেই থাকে। যেহেতু একই ব্যাচের সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারবে না তাই আগে থেকেই বিসিএস/জবের পড়াশোনা করা দরকার । আর যারা ১ম/২য়/৩য় অবস্থানে থাকে এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা করার স্বপ্ন দেখে তাদের একাডেমিক পড়াশোনায় গুরুত্ব দিয়ে তারপর বিসিএস বা জবের প্রস্তুতি নেয়া উচিৎ।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস নাকি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা কোনটিকে বেছে নেবেন?

মলি আক্তার: এখনো এ বিষয়ে কোন সিন্ধান্ত নেয়া হয়নি। দুটো জায়গা থেকেই যেহেতু ভালো করার সুযোগ আছে; তাই সময় আসুক সবার সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার মূল্যবান সময়ের জন্য ধন্যবাদ।

মলি আক্তার: আপনাকেও ধন্যবাদ


সর্বশেষ সংবাদ