ইসলামিক স্টাডিজ পড়ে এএসপি’র স্বপ্ন— সবাই এই প্রশ্নই করেছিল

  © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত ইয়াছমিন তিসা। ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিল পুলিশ হওয়ার। আর সেই ইচ্ছাটাই বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমে।

প্রথমবারের মতো বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেই পেয়েছেন পছন্দের ক্যাডারশিপ। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন তাঁর বাঁধ-ভাঙ্গা আনন্দের কথা। স্বপ্ন পূরণের গল্প।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয়বর্ষে থাকা অবস্থায়ই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন চট্টগ্রামের হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়া তিসা। স্নাতকের পাঠ চুকিয়ে যখন বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন, অনেকে নাক সিঁটকেছেন। বলেছেন, ‘ইসলামিক স্টাডিজ থেকে বিসিএস? তাও আবার বিবাহিত!’ মেয়ে হয়ে ‘পুলিশ’ হওয়ার ইচ্ছাটাও অনেকে ভালো ভাবে দেখেননি।

কথাগুলো অনেকটা ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’র মতোই বিঁধতে চেয়েছে। কিন্তু তিনি ঠিকই ‘পাছে লোকে কী বলবে’ না ভেবে উপেক্ষা করেছেন তাদের সমালোচনার বাণ। দৃঢ় প্রত্যয়ী থেকেছেন নিজের লক্ষ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায়ই সুযোগ পান প্রাথমিকে শিক্ষকতা করার। তবে ছয় মাস পরেই অবসর নেন শিক্ষকতা থেকে। কারণ, নিজের লক্ষ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতা রাখতে তিনি নারাজ।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ফরহাদাবাদ থেকে উঠে আসা তিসার পরিবারে চার ভাই-বোনের মধ্যে শুধু তাঁরই সুযোগ হয়েছে উচ্চশিক্ষা অর্জনের। শ্বাশুড়ি, ননদ না থাকাই শ্বশুর বাড়ি শুরু হয়েছে ঘরের একমাত্র গৃহিণী হিসেবে। নিজেও মাঝে মাঝে হতভম্ব হয়ে ভেবেছেন, ‘স্বপ্নের সোপান কি তাহলে এখানেই শেষ!’ কিন্তু না, নিজের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে হার মানিয়েছেন পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতাকে। স্মৃতির পাতায় চোখ বুলিয়ে এখনও হয়তো শিউরে ওঠেন তিনি।

পড়ুন: বিভাগে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্টের পর বিসিএসেও প্রথম মুন্নী

সাফল্যের গল্প বলতে গিয়ে নুসরাত ইয়াছমিন তিসা বলেন, আমার শিকড়টা গড়ে দিয়েছেন আমার মা-বাবা। তাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। বিয়ের পর আমার স্বামীও আমাকে অসম্ভব রকম সমর্থন দিয়েছেন। আমি মনে করি, শ্বশুর বাড়ির লোকের সমর্থন থাকলে একটা মেয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন। পুলিশে যাওয়ার উৎসাহ বেশি পেয়েছি আমার স্বামী ও শ্বশুরের কাছ থেকেই।

তিনি বলেন, আমাদের সমাজের মেয়েরা অনেক পিছিয়ে আছে। মেয়েদের নিজেদের দৃঢ় প্রত্যয়ী হতে হবে। ‘আমি কাজটা পারবো’ এই বিশ্বাস যখন আমার মধ্যে থাকবে তখনই কাজটা আমার জন্য সহস্রগুণ সহজ হয়ে যাবে। নিজের সামর্থ্যে কোনো প্রকার সংকোচ না রেখে এগিয়ে গেলেই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভবপর হবে।

পড়ুন: ছয়বার বিসিএস দিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডার

মঙ্গলবার (৩১ জুন) ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এতে ২ হাজার ২০৪ জন প্রার্থীকে ক্যাডার পদের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া নন-ক্যাডারে আরও ৬ হাজার ১৭৩ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ