৪০ জনের জীবন বাঁচানো সেই কনস্টেবল এখন পঙ্গু

দুই বছর আগে কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুরে বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বাস ডোবায় পড়ে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন দাঁড়িয়ে যখন ভিডিও করায় ব্যস্ত ছিলেন, ঠিক এই সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ময়লা-নোংরা পানিতে লাফিয়ে পড়েন তিনি। একাই ৪০ জনকে উদ্ধার করে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন হাইওয়ে পুলিশের কনস্টেবল পারভেজ মিয়া।

‘আমি তখন একাই ডোবায় নামি। একটি ইট দিয়ে বাসের জানালার কাচ ভেঙে ভেতরে যাই। প্রথম উদ্ধার করি তিন মাসের এক শিশুকে। এরপর একাই ২৬ জনকে বাইরে নিয়ে আসি। ততক্ষণে অন্যরাও এগিয়ে এসেছে। সবার চেষ্টায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যায় ৪০টি প্রাণ।’ —বলছিলেন পারভেজ।

বীরত্বের সে গল্প ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পেয়েছিলেন পুলিশের সর্বোচ্চ সম্মাননা বিপিএম পদক। সেই পারভেজই এবার সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে দিনাতিপাত করছেন।

গত ২৭ মে মুন্সিগঞ্জের জামালদি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পিকআপ ভ্যানের চাপায় থেঁতলে যায় পারভেজের ডান পা। এরপর বুধবার অস্ত্রোপচার করে পারভেজের সেই পা কেটে ফেলেছেন চিকিৎসকেরা। মানবিক ও সাহসিকতার প্রতীকে পরিণত হওয়া পারভেজের ডান পা কেড়ে নিল সেই সড়ক দুর্ঘটনা। এখন তার সময় কাটছে পঙ্গু হয়ে।

পারভেজ বলছিলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমার পঙ্গুত্ব পরিবারের জন্য অন্ধকার ডেকে এনেছে। পরিবারে আমিই একটু পড়াশোনা করেছিলাম। আল্লাহর রহমতে পুলিশে চাকরি পাই। ১২-১৪ হাজার টাকা বেতন। এরপরও সবাই আমার ওপর নির্ভরশীল। জানি না এক পা নিয়ে কীভাবে পুরো পরিবারের ভার বহন করব।’

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার হলেও পারভেজের অবস্থা এখনো আশঙ্কামুক্ত নয়। পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক আবদুল গণি মোল্লা বলেন, পচন ধরায় অস্ত্রোপচার করে পারভেজের হাঁটুর নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। ওপরের অংশেও পচন আছে। অবস্থা খারাপ হলে আরও কাটা লাগতে পারে।

পারভেজকে নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনে কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করবে তারা। সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘পারভেজের পুনর্বাসন পুলিশ বাহিনীতেই করা হবে। তাঁর কম্পিউটারে দক্ষতা ভালো। প্রয়োজনে সে দায়িত্ব দেওয়া হবে তাঁকে।’

একটি বেপরোয়া কাভার্ড ভেনের কাছে হেরে গিয়ে জনগণের বীর এখন পঙ্গু। পঙ্গুত্ব তার চিরদিনের সাথী।


সর্বশেষ সংবাদ