ফিউচার লিডার হিসেবে লাখ টাকা জয় সানজাদের

সম্প্রতি থাইরোকেয়ার ইন্টারন্যাশনাল থেকে ফিউচার লিডার স্কলারশিপ হিসেবে লাখ টাকা পেয়েছে ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সানজাদ হোসেন। রোবটিকস, বিতর্ক, বিজনেস আইডিয়া উপস্থাপনায় দক্ষ সে। তার সঙ্গে গল্প করেছেন জুবায়ের আহম্মেদ

ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে টাইমলাইনে সানজাদের ছবি। সামনে রাখা বিশাল এক স্মারক চেক। ওটা দেখেই ফোন দিলাম। বললাম, কাল তোমার বাসায় আসছি। অপর প্রান্ত থেকে সায় মিলল। মতিঝিলে বাসা সানজাদের। রুমে ঢুকতেই মনে হলো, ভুল করে নাসায় চলে এলাম নাকি! ছোট ছোট রোবট গাড়ি আর একগাদা যন্ত্রপাতিতে ঠাসা।

লাখ টাকা জিতলে কী করে?

কিছুদিন আগেই ফিউচার লিডার স্কলারশিপ অর্জন করে এক লাখ টাকা পাই থাইরোকেয়ার ইন্টারন্যাশনাল থেকে। মূলত সারা দেশ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থীকে তাদের বিশ্লেষণধর্মী দক্ষতা, প্রেজেন্টেশন স্কিল, প্রবলেম সলভিং স্কিল, ডিবেটিং স্কিল, লিডারশিপ স্কিল ইত্যাদি থেকে বিচার করে দেওয়া হয়।

এবার বলো অন্যরা কিভাবে এটা পেতে পারে?

আমার বিতর্কের শুরুটা ক্লাস ছয় থেকে। তিনজনের টিম গঠন করে আন্তঃশ্রেণি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। তখন থেকেই নিয়মিত বিতর্ক করতে শুরু করি। ধীরে ধীরে বাইরের স্কুল-কলেজের প্রতিযোগিতায় যাওয়া শুরু হয়। এভাবেই আমার বিতর্কজগতে পথচলা। বিতর্ক করার মাধ্যমে আমার চিন্তাধারা এবং দৃষ্টিভঙ্গির অনেক পরিবর্তন হতে থাকে। কোনো একটি সাধারণ বিষয়কেও কিভাবে অন্যভাবে চিন্তা করা যায়, কিভাবে ভালো বক্তা হওয়া যায় এগুলো আমি আমার বিতর্ক ক্লাব থেকেই শিখেছি। এ ছাড়া বিতর্ক করার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপস্থাপনা দক্ষতার সাহায্যে অনেক ধরনের সুবিধা পেয়েছি। মাঝেমধ্যেই আমাকে অনেকে প্রশ্ন করে—বিতর্ক কিভাবে শুরু করবে বা বিতর্ক করে কী সুবিধা পাওয়া যায়। প্রথমত, বিতর্ক শুরু করতে চাইলে নিজের বিদ্যালয়ের বিতর্ক ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। ভালো বক্তা হতে হলে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান থাকা জরুরি। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বিষয়, সাম্প্রতিক, রাজনৈতিক বিষয় ইত্যাদি। এর মাধ্যমে পাঠ্য বইয়ের বাইরেও অনেক কিছু সম্পর্কে জানা যায়। আর তাই বিতর্কটা সবার জীবনের কোনো না কোনো দিকে কাজে লাগবে। এ ছাড়া নিজের প্রেজেন্টেশন স্কিল বৃদ্ধির মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় এগিয়ে থাকা যায়। তাই আমি বলব, কেউ যদি বিতর্কের প্রতি আগ্রহী হয়, তবে এখন থেকেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। এতে জড়তা দূর হয়ে যাবে।

বাসায় এত ট্রফি!

এগুলো বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পাওয়া পুরস্কার। আমি স্কুল থেকেই বিভিন্ন বিজনেস কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করি। এ ক্ষেত্রে আমার বিতর্কের দক্ষতা খুবই সাহায্য করেছে। তবে কারো এ ধরনের পূর্বদক্ষতা থাকতেই হবে এমন নয়। কিন্তু একটি ভালো বিজনেস আইডিয়া থাকা জরুরি। এর সঙ্গে ভালো প্রেজেন্টেশন স্কিল থাকাও প্রয়োজন। কারণ আইডিয়া যতই ভালো হোক, নিজের আইডিয়া মানুষের সামনে ভালোভাবে তুল ধরতে না পারলে কখনোই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রেজেন্টেশন স্কিল বৃদ্ধির জন্য বিতর্কচর্চার পাশাপাশি বিভিন্ন উপস্থিত বক্তৃতায় অংশগ্রহণ করতে হবে। থাকতে হবে আত্মবিশ্বাস। আমি স্কুল থেকেই কম্পিটিশন করা শুরু করি এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কেও হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমি মনে করি, কারো মধ্যে যদি ইনোভেশন স্কিল ও আত্মবিশ্বাস থাকে, অবশ্যই সে ভালো কিছু করতে পারবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলে?

ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে কয়েকটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। দশম শ্রেণিতেই আমি ও আমার দল মিলে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে হারিয়ে ভারতের আইআইটি কানপুরে টেক্রিতিতে অংশ নিই। এ ছাড়া আমরা শ্রীলঙ্কায় আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল ইনোভেশন চ্যালেঞ্জে গ্লোবাল ফাইনালিস্ট হই। সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা থেকে দুবার সরকার থেকে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পাই। এমনকি গ্লোবাল ইন্টারন্যাশনাল টিন কনফারেন্স ও গ্লোবাল অন্ট্রাপ্রিনিয়রশিপ বুটক্যাম্পে সিলেক্টেড হই।

পাঠকদের জন্য এ প্রতিযোগিতা নিয়ে কোনো পরামর্শ?

যাদের অনেক ইচ্ছা ও আগ্রহ রয়েছে এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার, তারা ইয়ুথ অপরচুনিটিস ওয়েবসাইটটি ফলো করতে পারো। এগুলোর প্রস্তুতির জন্য আবেদন করতে হলে নিজের একটি সিভি রেডি করে রাখতে হবে। এ ছাড়া নিজের কাজকর্ম নিয়ে চমত্কার একটা বর্ণনা লিখে ফেলতে পারলে তা বেশ কাজে আসবে।

রোবটের গল্প শুনি

২০১৭ সাল থেকে বানানো শুরু করি। প্রগ্রামিং জানা থাকায় কাজটা সহজ হয়ে যায়। এমনকি এখন হিউম্যানয়েড রোবট নিয়েও কাজ করছি। আমাদের বানানো রোবট নিয়ে আমরা বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডে গোল্ড মেডেল অর্জন করি। রোবটটি ছিল মূলত ‘সেভ দ্য সি’ থিমের ওপর, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাগরের ময়লা পরিষ্কার করতে পারবে এবং সবাইকে ডাস্টবিনে ময়লা ফেলতে উদ্বুদ্ধ করবে। এটি নিয়ে এখন আমরা ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের ওপর কাজ করছি।

বন্ধুরা রোবট বানানো শিখতে চায়?

মাঝেমধ্যেই অনেকে প্রশ্ন করে, রোবটিকস নিয়ে কিভাবে কাজ করবে। আমার কাছে মনে হয়, রোবটিকস শুরু করার আগে ছোটখাটো ইলেকট্রনিকস প্রজেক্ট বানানোর অভিজ্ঞতা থাকলে সুবিধা হয়। আর রোবটিকসে কাজ করতে হলে অবশ্যই ধৈর্য থাকতে হবে। শুরুতেই আশা ছাড়লে হবে না। প্রগ্রামিংয়ে ভালো হওয়া জরুরি। সি, সি++, পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ জানা থাকলে ভালো। এর জন্য বিভিন্ন বই পড়ে প্র্যাকটিস করতে হবে। মূলত আরডিউনো ডেভেলপমেন্ট বোর্ড দিয়ে কাজ শুরু করলে ভালো হয়। এটি তুলনামূলক সহজ। ছোটখাটো রোবট কার বানানো দিয়ে শুরু করলে এগিয়ে যেতে সুবিধা হবে। আর যদি আগের দক্ষতা থাকে, তবে রাসবেরি পাই দিয়ে শুরু করতে পারো। শুধু রোবট বানালেই হবে না, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণও করা চাই। এখন দেশে অনেক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, সেগুলোতে অংশ নিতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ