বিসিএস ভাইভা: সাত বিষয়ে সতর্ক হউন

ভাইভাতে যে যত সাবলীল তার পরীক্ষা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেকোনো ভাইভা পরীক্ষা মানেই একটা ভয়ংকর গুরুগম্ভীর কিছু এমনটা অনেকেরই ধারনা। কিভাবে যাব, কি কি পড়তে হবে , কিভাবে কি হবে, এটা না পারলে কি হবে, ওটা না পারলে কি হবে, নার্ভাস হলে কি হবে, পারবো তো সবকিছু ইত্যাদি প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়। আবার নানান জনকে প্রশ্ন করে নানান মত পাওয়া যায়, নানান অভিজ্ঞতা অর্জন হয়, কেউ কেউ আবার দুই একটা এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির এমন শ্বাসরুদ্ধকর বর্ণনা দিয়ে থাকেন যার ফলে অনেকেরই গায়ে কাটা দেয়।

বেশিরভাগ স্টুডেন্ট ভাইভার মূল উদ্দেশ্য থেকে deviated হয়ে শুধু প্রশ্ন পারা বা না পারার দিকে নজর বেশি দেয়। বেশির ভাগ মানুষকে বোঝানোটা খুব কঠিন যে ভাইভাতে দুই একটা প্রশ্ন পারা না পারা তে কিচ্ছু আসে যায় না। ভাইভা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামিয়ে অনেক বেশি স্টাডি করে মাথা গরম করে ভাইভা বোর্ডে না যাওয়াটা much better প্ল্যান করে খুব selective স্টাডি করে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।

আর একেকজনের ভাইভা একেকরকম হবে এটাই স্বাভাবিক, সাধারণত যেসব প্রশ্ন করা হয় সেগুলোর দিকে খেয়াল রাখা উচিত। তবে বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় যারা ভালো নাম্বার পায় তাদের সফল হবার সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায়, কারণ চূড়ান্ত রেজাল্ট লিখিত আর ভাইভা পরীক্ষার সম্মিলিত নাম্বার এর ভিত্তিতে দেয়া হয়। আপনারা ভাইভা পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে টুকটাক যেসব করতে পারেন।

১.সবার আগে পারলে নানান জনের সাথে কথা বলা বাদ দিন প্লিজ। দুই-একজনের সাথে কথা বলতে পারেন শুধু পরীক্ষার ধরণ জানার জন্য, পরীক্ষা কেন্দ্রের পরিবেশটা যাচাই করার জন্য। প্রতিদিন পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে খোঁজ খবর নেয়া এসব করতে যাবেন না। এটা খুব মানসিক চাপে ফেলে দিতে পারে আপনাদের, কারণ একেক জনের ভাইভার ধরন থাকে একেক রকম আর যেহেতু সবার educational background, subject এক না, আবার অনেকে বিভিন্ন চাকরি করে ভাইভা দিচ্ছেন, so প্রতিটা মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা ভিন্ন। অনেকে নিজে প্রচুর স্টাডি করে ভাইভাতে গিয়ে নার্ভাস হয়ে এমন কথা বলে বসেন বা এমন কাজ করে বসেন যা স্যারদের বিরক্তির কারণ হয়। আবার এ কথা সে বাইরে এসে কাউকে বলেও না, প্রতিটা ভাইভা পরীক্ষার কিছু uncut version থাকে যা সহজে কেউ বলে না। নিজের মত করে গুছিয়ে সহজভাবে ভাইভা দিলে ভাইভা ভালো হবার সম্ভাবনা বাড়ে।

২.ভাইভাতে মূলত attitude, body language, expression, courtesy etc খেয়াল করেন স্যাররা, তাই এসবের প্রতি নজর বেশি দিন।

৩. আপনি যেহেতু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হতে যাচ্ছেন তাই সরকারের পজিটিভ দিকগুলোকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করবেন।

৪. খুব সাধারণ প্রশ্ন যা সবাই পারে সেগুলো যেন ভুল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

৫. সাধারণ যে বিষয়গুলো আপনি জেনে যেতে পারেন, নিজের নামের অর্থ, নিজ জেলার পরিচিতি ও বিখ্যাত ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক, আপনার প্রিয় বই, গল্প, উপন্যাস, কবিতার ও গল্পের লাইন , প্রিয় মুক্তিযুদ্ধের বই, প্রথম চয়েস কি কেন? দ্বিতীয় চয়েস কি কেন?

আপনার পছন্দের ক্যাডারের বিখ্যাত কোন ব্যক্তির নাম, আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের background , বিখ্যাত ব্যক্তি, মুক্তিযুদ্ধের ও ভাষা আন্দোলনের এবং উপমহাদেশের একদম basic ইতিহাস যা না জানলেই নয়, বঙ্গবন্ধু, আপনার ক্যাডার এর সাথে সম্পৃক্ত কিছু সংজ্ঞা , আপনার ভাইভার দিনের বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকার হেডলাইন, আপনার বাবা কিংবা মা যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তার background, চলমান বিশ্ব রাজনীতিতে অস্থিরতা নিয়ে হালকা ধারনা রাখুন, সাম্প্রতিক খুব আলোড়নকারী ঘটনা এবং সামাজিক অস্থিরতাগুলো সম্পর্কে ধারনা রাখুন, কিছু কমন ইংরেজি প্রবাদ জেনে নিন, সাম্প্রতিক বিখ্যাত বইগুলোর নাম এবং কি নিয়ে লিখা অন্তত তা জেনে রাখুন ইত্যাদি ।

৬. নিজের সাথে কিছুটা হলেও ইংরেজিতে কথা বলার অভ্যাস করুন, আপনার ইংরেজি বলার দক্ষতা বাড়বে। কখনো ভুল করেও viva তে over smartness দেখাতে যাবেন না। বাংলাতে প্রশ্ন করলে বাংলায় আর ইংরেজিতে আপনাকে প্রশ্ন করা হলে ইংরেজিতে উত্তর দিন। বেশি কথা বললে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। স্যাররা যা জিজ্ঞেস করবেন সেটা বলে চুপ থাকাটা better।

৭. আপনার ভাইভা রুমে যাওয়ার আগে রুমের বাইরে নেমপ্লেটটা দেখে যান, রুমে ঢুকে দরজাটা লক করে স্যারদের সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন, বসতে বলা হলে বসুন। চেয়ারের হাতলে বা টেবিলে হাত রাখবেন না, নিজের যেকোনো মুদ্রাদোষ পরিহার করুন ( যেমন কথা বলার সময় হাঁট নাড়ানো বা বসে থেকে পা নাড়ানো )। মূলকথা অল্প selective স্টাডি করে যাবেন আর ঘাবড়াবেন না। আপনার ভাইভা শেষে চলে আসার আগে আপনার ফাইলটা আপনার বামদিকে বসা স্যার দিতে পারেন, ভুলেও বেখেয়ালিভাবে বাম হাতে নিতে যাবেন না, এই ভুল হতেও পারে কারন বাম হাতে নেয়াটা সহজ থাকে এবং অনেকেই একাজ করে।

আপনার ৩য় পছন্দ নিয়েও হালকা স্টাডি করে যাবেন। নার্ভাস হবেন না কখনো, হারানোর কিছু নেই ,ভাইভা বোর্ডে সাবলীল confident মানুষদের স্যাররা পছন্দ করেন, কারন যে অল্পতেই নার্ভাস হয়ে যায় তার কর্মক্ষেত্রেও একটু জটিল পরিবেশে নার্ভাস হবার সম্ভাবনা থাকে। স্যাররা দেখতে চান আপনি এই পদটির জন্য যোগ্য কিনা? আপনাকে মানাবে কিনা? আপনি যখন ভাইভা দিচ্ছেন তখন স্যাররা আপনাকে একজন কর্মকর্তা ভেবে কথা বলেন। এজন্য ভাইভাতে সাবলীল থাকার চেষ্টা করুন, যা বলবেন স্পষ্টভাবে বলার চেষ্টা করুন। কোন প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকলে ভদ্রভাবে বলুন স্যার এটা মনে পড়ছে না এই মুহূর্তে। খুব বেশি স্টাডি না করে এবং নানান জনের ভাইভার ইন্টারভিউ না নিয়ে নিজের মত করে স্টাডি করে যান ,তাহলে আপনার মনে কোন কনফিউশন সৃষ্টি হবে না। স্টাডি চালিয়ে যান, কনফিডেন্স রাখুন নিজের ওপর যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার। সফল আপনি হবেনই। ভালো থাকবেন সবাই।

লেখক: সহকারী কর কমিশনার


সর্বশেষ সংবাদ