বিসিএস লিখিত: বাংলাদেশ বিষয়াবলীতে খেই হারাবেন না

মো. সাইদুজ্জামান হিমু
মো. সাইদুজ্জামান হিমু  © টিডিসি ফটো

৩৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার মো. সাইদুজ্জামান হিমু। বর্তমানে তিনি সহকারী কমিশনার এন্ড নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত আছেন। এম এম মুজাহিদ উদ্দীন তার সাথে বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বাংলাদেশ বিষয়াবলীর পরামর্শ নিয়ে কথা বলেছেন।

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির প্রায় অর্ধেক সময় নিয়ে নেয় বাংলাদেশ বিষয়াবলী। এই একটি বিষয়ের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে অনেক প্রার্থীই খেই হারিয়ে ফেলেন আবার কেউবা হতাশ হয়ে যান- এতো ব্যাপক বিস্তৃত সিলেবাস দেখে। মনে রাখবেন যারা ক্যাডার হয়েছেন এই সিলেবাসেই পরীক্ষা দিয়ে হয়েছেন।তার মানে কৌশলে সিলেবাস টিকে আয়ত্তে আনতে হবে। পড়তে হবে প্রচুর।সেই সাথে কমন সেন্স কাজে লাগিয়ে যৌক্তিকভাবে বানিয়ে উত্তর লিখা জানতে হবে। হুবহু কমন পড়বে না অনেক কিছুই।

কি বই পড়বেন: ২/৩ সেট গাইড, অনেক অনেক রেফারেন্স বই পড়ার পরামর্শ আমি দেই না কখনো।কারণ সময় থাকেনা পড়ার। তবে বাংলাদেশ বিষয়াবলীর সিলেবাস ব্যাপক হওয়ায় কিছু সাপোর্টিভ বই লাগবে।কোন কোন টপিকস আপনাকে ভালো ভাবে জানা থাকতে হবে আর কোন কোন বিষয়ের তথ্য- উপাত্ত দরকার তা শুরুতেই বিগত সালের (বিশেষত ৩৫ থেকে ৩৮)প্রশ্ন দেখে এনালাইসিস করুন।২ দিন টানা পড়ার আগে হাফ ডে এনালাইসিস করা ভালো - ফ্রুটফুল পড়া হবে!

এসুরেন্স/ প্রফেসর গাইড বই নিতে পারেন।আমি শুধু এসুরেন্স ডাইজেস্ট পড়েছিলাম। সাথে আরিফ খানের সংবিধান আর ৯/১০ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচিতির প্রথম অধ্যায়টা যেখানে ১৯৪৭-১৯৭১ নাগাদ ঘটনাবলী বর্ণনা করা আছে।পেপার পড়তে পারলে ভাল। নয়ত প্রতি মাসের সম্পাদয়ীক সমাচার কিনে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলা গুলা দাগিয়ে রাখুন। আর ডাটা,উপাত্ত,অর্থনৈতিক সমীক্ষা, আরো কি কি যেন? - বলবো নিচে!

আপনার শক্তি: ১) ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা দিন,তারিখ সহ মুখস্থ রাখবেন - ভাইবা নাগাদ কাজে লাগবে।

২)ডাটা,চার্ট,উপাত্ত সবাই দিতে চান। তবে সবচাইতে বড় রেফারেন্স আমাদের সংবিধান(১-৪৭, তারপর যে ধারাগুলো লাগে মুখস্থ করে ফেলুন) যে কোনো প্রশ্নের উত্তরের সাথে সংবিধান এর ধারা যৌক্তিক ভাবে রিলেট করুন। যেমন -সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কিংবা মৌলিক অধিকার রিলেটেড উত্তরে ১৫ নং ধারা,নারী অধিকার কিংবা ক্ষমতায়ন প্রশ্নে ২৮(২) তেমনি উপজাতি, নৃ-গোষ্টী নিয়ে বললে ২৩(ক) ধারা উত্তরের শুরুতে জুড়ে দিন। হুবহু লিখতে যে হবে তা নয়, প্রশ্নের নাম্বার বুঝে লিখুন। উত্তরের শুরুতে এভাবে নীল কালি দিয়ে রেফারেন্স আপনার উত্তর কে স্ট্যান্ডার্ড করবে,পরীক্ষক বুঝবে আপনি সুন্দর সাজাতে পারেন!

৩) ডাটা, চার্ট,উপাত্ত,কোটেশন নিয়ে কিছু কথা বলি।গাদা গাদা ডাটা, চার্ট শিখতে হবেনা। বরং গত ৫ বছরের জিডিপির গ্রোথ, পার ক্যাপিটা ইনকাম, রেমিট্যান্স, ফরেন ইনভেস্টম্যান্ট ইত্যাদি সহ জিডিপিতে কোন সেক্টরে কার কত অবদান এগুলো খাতায় তুলে নিন। বার বার পড়ে এগুলো মুখস্থ করে ফেলুন। এইগুলা আপনার সম্পদ, রিলেটেড যে কোনো উত্তরে এগুলা ইউজ করবেন।

৪) সরকারের মেগা প্রজেক্ট,সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে নানা পদক্ষেপ, ২০২১,২০৪১ ইত্যাদি তথ্য উপাত্ত মনে রাখার মত নোট নিন। এছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর,বাংলাদেশের উন্নয়ন, ইমারজিং অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বের বিখ্যাত ব্যাক্তিদের কিছু কোটেশন (২০/২৫ টি সব মিলিয়ে) নিন- আর যায়গা বুঝে প্রশ্নের উত্তরে এগুলো ব্যাবহার করুন। তথ্য, উপাত্ত, কোটেশন সব মিলিয়ে ৭/৮ পেজ লাগবে হাতে লিখলে। কাজ কিন্তু খুব বেশি না। সাথে সংবিধান ত আছেই। এগুলো ঠিক ঠাক ভাবে প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে ইউজ করবেন - আপনার উত্তর কে বদলে দিবে এসবের ব্যাবহার।

কতটুকু লিখবেন / কিভাবে লিখবেন: (ক) ৩৫,৩৬ এ সব ৫ মার্কের প্রশ্ন আসলেও ৩৭,৩৮ ছোট বড় মিলিয়ে এসেছে।তাই আপনাকে যে কোনো উত্তরকে ৫ নাম্বার থেকে শুরু করে ১৫ /২০ নাম্বারের জন্য লিখার মতো প্রিপারেশন নিতে হবে। ৫ নাম্বারের

উত্তর এক পেজ/ সোয়া পেজ লিখুন তবে ক্ষেত্র বিশেষে দেড় পেজ ও লিখতে পারেন। আর ১০/১৫ মার্কের গুলা ৪/৫ পেজ লিখুন।১৫/২০ নাম্বারের জন্য শুরুতে আট/নয় পেজ করে লিখে শেষে ১০/১২/১৫ নাম্বারের কিছু প্রশ্ন দুই / আড়াই পেজ লিখলে অভারল নাম্বার কমে যাবে। তাই শুরু থেকেই কিছু প্রশ্ন উত্তর খুব বেশি বড় না করে বরং অভারল সব গুলা সুষম লিখলে নাম্বার বেশি পাবার পসিবিলিটি বেশি।

(খ) সব উত্তর করবেন, ছেড়ে আসবেন না কিছু,ধারনার উপর লিখুন আনকমন হলে। শুরু থেকেই হাতের লিখা দ্রুত করুন।

(গ) যতটুকু ডাটা/ ইনফো/ কোটেশন জানেন তাই নীল কালিতে স্যার এর চোখে ফুটিয়ে তুলুন। আপনি ভিতরে প্যারা/ পয়েন্ট ছাড়া অনেক কিছু লিখলেন কিন্তু পরীক্ষক সেটা দেখলেন না,তবে কিন্তু লাভ হলোনা কিছুই!মোদ্দাকথা,যাই আপনি জানেন পারেন তাই স্যারের চোখে ফুটিয়ে তুলুন।


সর্বশেষ সংবাদ