সম্বল বলতে ছিল এক সেট জামা-প্যান্ট আর ২৭০ টাকা

আজ থেকে ঠিক এক যুগ বা ১২ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৭ সালের ৩ জুলাই। উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ শেষে বিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিক অংশ সম্পন্ন হওয়ার পর চরম দারিদ্র্যের কাছে পরাজয় স্বীকার করে একবেলা ভাত আর অন্য দুই বেলা শুধু মুড়ি খেয়ে বাঁচার পরিবর্তে দাসত্ব জীবনের অবসান ঘটিয়ে রাজধানী ঢাকায় এসে কোন তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়া তথা তিন বেলা অন্তত লবণ-মরিচ-ভাত খাওয়ার আশায় ১৮ বছরেরও এক মাস কম বয়সে মফস্বল এলাকা থেকে ইট-পাথরের এই শহরে পদার্পনের দুঃসাহস দেখিয়েছিলাম—সম্বল বলতে ছিল কেবল পরনের একসেট মলিন জামা-প্যান্ট আর প্যান্টের পকেটে থাকা মাত্র ২৭০ টাকা।

সৃষ্টিকর্তার বিশেষ দয়ায় পোশাক শ্রমিক হতে হয়নি; তবে মাঝের এই ১২ বছরে মহান সৃষ্টিকর্তা সমানে দু’হাত দিয়ে আমি যা পাওয়ার যোগ্যতা রাখি না এবং এমনকি যা কখনো ঘ্রুণাক্ষরেও প্রত্যাশা করিনি তার থেকেও অনেক গুণ খ্যাতি, অর্থ, ভাল চাকরি ইত্যাদি দিয়েছন। বোধকরি শৈশবেই পিতৃ-মাতৃহারা হওয়ায় এবং সমগ্র শৈশব ও কৈশোর জীবন চরম দারিদ্র্য, অর্ধাহার-অনাহার, কায়িক পরিশ্রম, শোষণ-বঞ্চনা আর আত্মগ্লানির মধ্যে কাটানোর দরুণ আমার অক্লান্ত পরিশ্রম, সহনশীলতা ও ধৈর্যের স্বীকৃতিস্বরুপ সৃষ্টিকর্তা আমার প্রতি পক্ষপাতিত্বমূলকভাবে এই করুণা, সহানুভূতি ও দাক্ষিণ্য দেখিয়েছেন।

যশোর জেলার অন্তর্গত ‘জঙ্গলবাঁধাল’ নামক এক অখ্যাত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলাম আর সময়ের বিবর্তনে নিজের তাগিদে এখন ‘ইট-পাথরে জঙ্গলাবৃত’ এই ঢাকা শহরে দিব্যি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। পেটে চরম ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও সেই আঠারো বছর বয়সের সাহস, আত্মবিশ্বাস, জেদ সর্বোপরি ঘুরে দাড়াবার তাড়না ও প্রত্যয় ছিল পাহাড়সম। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সাহস, আত্মবিশ্বাস কিংবা জেদ সবই ক্রমান্বয়ে অনেকাংশে কমে গেছে। (ফেসবুক থেকে)

লেখক: শ্যামল কান্তি বিশ্বাস, ডেপুটি ডিরেক্টর, বাংলাদেশ ব্যাংক

পড়ুন:লাশ দাফনে কেউ আসছে না, মানবিক বিপর্যয়ে স্বামীহারা নয়নের মা


সর্বশেষ সংবাদ