যৌনতা নিঃসন্দেহে সুন্দর, তবে কদর্য উপস্থাপন উচিত নয়

বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন। উপন্যাস, গল্প, কবিতা, নির্মাণ যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলেছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, কলকাতায়ও তার বই কিনতে পড়ে যায় পাঠকের লম্বা লাইন।আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াতেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছেন। তার দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস মানব জনম, নিঃসঙ্গ নক্ষত্র, নির্বাসন রীতিমত বিস্মিত করেছে পাঠককে। এই পর্যন্ত তার লেখা বই প্রকাশিত হয়েছে ১২টি। তারুণ্যের আইডল সাদাত হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন। সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে জীবন, মৃত্যু, সাহিত্যে যৌনতা, প্রেম-ভালোবাসাসহ জীবনবোধের কথা। সাক্ষাতকার নিয়েছেন— এম এম মুজাহিদ উদ্দীন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার কাছে জীবনের মানে কী?
সাদাত হোসাইন: এটা একটা জার্নির মতো। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি যাত্রা। এই যাত্রার সময়টাতে অন্যদের জন্য সুন্দর, মানবিক বোধ সম্পন্ন পৃথিবী গড়ে তোলার চেষ্টাটাই জীবন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভালোবাসা বলতে আপনি কী বোঝেন?
সাদাত হোসাইন: জগতের সবচেয়ে শুদ্ধ ও সুন্দরতম অনুভূতি। এই একটি মাত্র অনুভূতি হত্যা, হিংসা, বিদ্বেষ কিংবা জিঘাংসার পৃথিবীটাকে মমতা ও আনন্দের করে গড়ে তুলতে পারে। তবে আমরা ভালোবাসা বলতে যেন শুধু নারী পুরুষের প্রেমকেই না বুঝি। আমরা যেন ভালোবাসা বলতে পৃথিবীর সকল প্রাণীর প্রতি, প্রকৃতির প্রতি আমাদের অহিংস, ইতিবাচক, সংবেদনশীল অনুভূতিটাকে বুঝি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: মৃত্যুকে কিভাবে দেখেন?
সাদাত হোসাইন: জীবনের সবচেয়ে অর্থবহ নিয়ামকের নাম মৃত্যু। মৃত্যু নিঃসন্দেহে ভয়ংকর। কিন্তু একইসাথে জীবন এতো আরাধ্য, এতো সুন্দর, আনন্দময় হয়ে ওঠার কারণও মৃত্যু। মৃত্যু না থাকলে জীবন এতো আনন্দময়, আরাধ্য হতো না। এ কারণে মৃত্যুর কথা ভাবলে একটা অদ্ভুত ভয়, আক্ষেপ যেমন কাজ করে, আবার এটাও মনে হয় এই যে এতো অসাধারণ অর্থবহ একজীবন, তা মৃত্যু না থাকলে পুরোপুরি অর্থহীন, আনন্দহীন হয়ে যেতো। সত্যিকারের জীবনের জন্যই তাই মৃত্যু খুব দরকার, খুব অনিবার্য।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ধরুন, আপনি বুঝে গেছেন আগামীকালই আপনার জীবনের শেষ দিন। তাহলে আপনার শেষ ইচ্ছা হিসেবে কী চাইবেন?
সাদাত হোসাইন: কঠিন প্রশ্ন। ওই মুহূর্ত যিনি এক্সপেরিয়েন্সড করেননি, তিনি ছাড়া আর কেউই এর সত্যিকারের উত্তর দিতে পারবেন বলে মনে হয় না। কারণ, মৃত্যু এমন রহস্যময়, এমন ভয়ানক বিষয় যে মানুষ তার মুখোমুখি হওয়ার আগ অবধি কিছুতেই বলতে পারবেনা যে সে ঠিক ওই মুহূর্তে তার প্রতিক্রিয়া কী হবে! হয়তো জগতের সবচেয়ে দুঃসাহসী মানুষটিও ওইমুহূর্তে গিয়ে ভেঙে পড়তে পারেন। আবার সবচেয়ে ভীতু মানুষটিও নির্লিপ্ত হয়ে যেতে পারেন। ফলে এটি আগেভাগে বলা মুশকিল!

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সাহিত্যে যৌনতা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
সাদাত হোসাইন: যৌনতা সকল প্রাণীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, অপরিহার্য ও অনিবার্য বিষয়ের একটি। এর সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক। যার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক, তারচেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে! আর সাহিত্যও যেহেতু সুন্দরের কথা বলে, জীবনের কথা বলে, তাই যৌনতাও তার খুব স্বাভাবিক একটি অংশ। এটিকে আলাদাভাবে দেখার কোন দরকার নেই। এটি সহজাত। তবে হ্যাঁ, যৌনতার মতো এতো সুন্দর, এতো নান্দনিক একটা বিষয় কেবল উপস্থাপনের ধরণের কারণে কদর্য হয়ে উঠতে পারে। সাহিত্যিকদের এই বিষয়টিতে খেয়াল রাখা উচিত। বিষয়টির উপস্থাপনা যেন কদর্য না হয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আবার যদি আপনার জন্ম হতো তাহলে আপনি কী হতে চাইতেন? আর কেন হতে চাইতেন?
সাদাত হোসাইন: একাধিক বিশ্বকাপজয়ী লিওনেল মেসি। কিংবা বিশ্বব্যাপী অসংখ্য মানুষের প্রিয় কোন সঙ্গীতশিল্পী। আমার খুব বড় একটা আক্ষেপের জায়গা, আমার গলায় সুর নেই। অথচ সঙ্গীতের মতো এমন অসাধারণ একটা বিষয় পৃথিবীতে রয়েছে! এই আক্ষেপটা খুব তাড়িত করে আমাকে। মনে হয়, কখনো যদি অসাধারণ, মোহময় সুর তুলে গাইতে পারতাম। সেই গান শুনে অসংখ্য মানুষ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকতো বছরের পর বছর, শতাব্দীর পর শতাব্দী! যারা ভালো গান গাইতে পারেন, তাদের দেখে আমার তাই খুব হিংসে হয়। অবশ্যই ইতিবাচকভাবে!

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি তো প্রেম ভালোবাসা নিয়ে লেখেন। আপনার জীবনের প্রেমের গল্প যদি বলতেন?
সাদাত হোসাইন: আমার ধারণা পৃথিবীর সকল মানুষই ক্রমাগত প্রেমে পড়েন। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। এটি এমনই এক স্বতঃসিদ্ধ সত্য যে অস্বীকার করে লাভ নেই। যারা অস্বীকার করেন কিংবা করবেন, আমার ধারণা, হয় তারা মিথ্যে বলছেন, কিংবা নিজের অনুভবটাকেই বুঝতে পারেন নি, পারছেন না। একজন সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে প্রেমের অনুভূতি আমাকে সৃষ্টির প্রণোদনা দেয়। ফলে আমিও হয়তো ক্রমাগত প্রেমে পড়েছি, পড়ছি, পড়বো। পৃথিবীর সকল সৃষ্টিশীলতার উৎস ভালোবাসা।


সর্বশেষ সংবাদ