সফলদের কথা: প্রথমবার শিক্ষা ক্যাডার, দ্বিতীয়বারে ম্যাজিস্ট্রেট!

ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবেন। কিন্তু কৈশরে এসে যখন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেন তখন দেখলেন অনেক পরিশ্রম করার পর ও মেলেনি কাঙ্খিত ফলাফল। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪.৫০ জিপিএ পেয়েছেন। তখন অনেক কান্না করেছিলেন। তারপর প্রত্যাশায় বুক বাঁধেন উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করে ছোটবেলার লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস উচ্চমাধ্যমিকেও মেলেনি কাঙ্খিত ফলাফল। জিপিএ ৪.৪০ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে গণ্ডি পার হন।

উচ্চ মাধ্যমিকের এই ফল বিপর্যয়ের পরে প্রচুর কেঁদেছিলেন, স্বপ্ন দেখেছিলেন একদিন এমন কিছু করবেন যা এ কষ্টকে লাঘব করবে। তখন বাবা বলতো,’ মন খারাপ করো না এখনো অনেকটা পথ বাকি দেখবে তুমি অনেক বড় হবে।’ বলছিলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ফেরদৌস আরা হ্যাপি’র কথা। হ্যাপি ৩৬তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনারও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

হ্যাপি তার স্বপ্ন পূরণের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন রণেভঙ্গ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সেমিস্টারের ফলাফল খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু আমি দমবার পাত্রী ছিলাম না। মনে মনে প্রচণ্ড জেদ করলাম আমাকে ভালো ফলাফল করতে হবে। তখন থেকে নিয়মিত পড়াশোনা শুরু করে দিলাম। ফলাফল হিসেবে অনার্সে ৪র্থ স্থান অধিকার করি। আর মাস্টার্সেও ভালো ফলাফলের ধারা অব্যাহত থাকে। অনার্সে পড়াকালীন অবস্থা থেকেই আমি একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএস’র জন্য পড়াশোনা করতাম। সাথে ৩ থেকে ৪টা টিউশনিও ছিল। গ্রাজুুয়েশন সম্পন্ন করার পর বিভিন্ন জায়গায় চাকরির পরীক্ষা দিতে থাকি। কিন্তু কোথাও আলোর দেখা পাই না।

সব ধরণের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতাম। এত পরীক্ষা দিতে দেখে আশেপাশের অনেক মানুষ বলতো ‘সারা জীবন শুধু পরীক্ষাই দিয়ে যেতে হবে চাকরি করা লাগবে না।’ এরকম কটূমন্তব্য শুনে প্রচণ্ড খারাপ লাগতো আর ভিতরে ভিতরে জেদ তৈরি হতো। তারপর হঠাৎ একদিন খবর পেলাম আমি অডিটে চাকরির জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। তারপর ৩৫তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। শিক্ষা ক্যাডার হয়ে কুমিল্লার একটি সরকারি কলেজে যোগদান করি। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। যেখানেই পরীক্ষা দিয়েছি সেখানেই সফলতার মুখ দেখেছি।

বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আমি সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছি। কিন্তু ইচ্ছা ছিল প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করা। অবশেষে সৃষ্টিকর্তা আমার ইচ্ছা পূরণ করেছেন ৩৬তম বিসিএসে পরীক্ষা দিয়ে প্রশাসন ক্যাডার পাই।

যারা বিসিএস ক্যাডার হতে চায় তাদের জন্য পরামর্শ দিয়ে বলেন, যাদের লক্ষ্য বিসিএস তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন দেশ-বিদেশ সম্পর্কে জানতে হবে। এজন্য নিয়মিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকা পড়া যেতে পারে। এছাড়া বিবিসি, সিএনএন মতো সংবাদ সংস্থাগুলোকে ফলো করা যায়।

হ্যাপি বলেন, অনুবাদে লিখিত পরীক্ষায় বেশ বড় একটা নম্বর বরাদ্দ থাকে তাই অনুবাদ চর্চার জন্য ‘মাসিক এডিটোরিয়াল নিউজ’ এর মত মাসিক পত্রিকা পড়া যেতে পারে। তাছাড়া গণিত ও ইংরেজিতে দক্ষ হওয়ার জন্য শুরু থেকেই প্রচেষ্টা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে টিউশনি অনেক কাজে দেয়। বিসিএস পরীক্ষায় গণিত ও ইংরেজির নম্বর বড় পার্থক্য তৈরি করে দেয়। হ্যাপি এখন প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সততার সাথে কাজ করছেন। হ্যাপি দেশ ও মানুষের সেবা করতে চান। তিনি গন্তব্য কতদূর জানেন না। শুধু জানেন, তাকে যেতে হবে বহুদূর।

সংশ্লিষ্ট খবর: জজ এখন এএসপি: বললেন— পড়লে হবে না, বিসিএস এমন কঠিন নয়


সর্বশেষ সংবাদ