মেধা নয়, স্মার্টনেস যাচাইয়ের পরীক্ষা হলো ভাইভা

সর্বপ্রথমে মনে রাখবেন মৌখিক পরীক্ষা শুধু আপনার মেধা যাচাই নয় বরং আপনার ব্যক্তিত্ব, স্মার্টনেস, উপস্থাপনা, দৃষ্টিভঙ্গী, মানসিকতা যাচাইয়ের পরীক্ষা। আপনার পছন্দ যা-ই হোক না কেন, আপনার কাজ হলো পুরোটা সময় অফিসারসুলভ ব্যক্তিত্ব ধরে রেখে প্রমাণ করা আপনি ওই ক্যাডারে চাকরি পাওয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি— এভাবে বিসিএস পরীক্ষার ভাইভা বোর্ডকে তুলে ধরেছেন মো. আতিকুর রহমান নাহিয়ান। সম্প্রতি ৩৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেছেন তিনি। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে এম এম মুজাহিদ উদ্দীন তার সাথে ভাইভা অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ নিয়ে আলাপ করেছেন।

সর্বপ্রথমে মনে রাখবেন মৌখিক পরীক্ষা শুধু আপনার মেধা যাচাই নয় বরং আপনার ব্যক্তিত্ব, স্মার্টনেস, উপস্থাপনা, দৃষ্টিভঙ্গী, মানসিকতা যাচাইয়ের পরীক্ষা। আপনি কয়টি প্রশ্নের মধ্যে কয়টি প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছেন এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, তার চেয়ে হাজারগুণ জরুরি আপনার আ্যটিটিউড, প্রশ্নটা আপনি সঠিকভাবে রিসিভ করতে পারছেন কিনা এবং উত্তর না পারলে বা অল্প জানা থাকলে সেই বিষয়টা আপনি কিভাবে ম্যানেজ করছেন। অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েও আপনি ভালো নম্বর নাও পেতে পারেন যদি আপনি পজিটিভ ও প্রগ্রেসিভ মেন্টালিটি ধারণ না করেন।

ভাইভার প্রস্তুতি নির্দিষ্ট বইয়ের নির্দিষ্ট কিছু টপিক পড়ে অর্জন করা সম্ভব নয়৷ভাইভার প্রস্তুতি নেয়ার অর্থ হলো আপনার সার্বিক ব্যক্তিত্বের বিকাশ।সেজন্য পথমেই চাই ভাষাগত দক্ষতা অর্জন। বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষায় কথা বলার দক্ষতা অর্জন করতে হবে৷ প্রশ্নকর্তা যে ভাষায় প্রশ্ন করবেন আপনাকে সেই ভাষায় উত্তর দিতে হবে।

অনেকের ধারণা যাদের প্রথম পছন্দ ফরেন ক্যাডার তাদের ইংরেজিতে প্রশ্ন করা হয়৷ব্যাপারটি এমন নয়, ইংরেজিতে অন্তত স্বাভাবিকভাবে কথোপকথন চালানোর দক্ষতা আপনার থাকা চাই৷ বাংলার ক্ষেত্রে সুন্দর বাচনভঙ্গী ও প্রমিত বাংলার ব্যবহার জানা জরুরি। বিশেষ করে আঞ্চলিক টান এবং ইংরেজি বাংলার সংমিশ্রণে বাংরেজি ব্যবহার হতে বিরত থাকা অনুশীলন করুন। যথাযথ শব্দ ব্যবহার করাও বিশেষ দক্ষতা। যেমন প্রশ্নের উত্তর না পারলে -পড়ি নাই, জানি না, সঠিকভাবে জানা নেই কিংবা মনে করতে পারছি না যেকোনোটাই আপনি বলতে পারেন। কিন্তু কোনটি বেছে নেয়া যথাযথ সেটি আপনাকে শিখতে হবে ৷

জাতির পিতাকে সম্মোধন করার সময় অনেকে শুধু বঙ্গবন্ধু বা শেখ মুজিব বলেন এই ধরনের ভুলও ভাষাগত অদক্ষতা৷ আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে নিজে নিজে অনুশীলন করেছি। মোবাইলে কমন প্রশ্নগুলোর উত্তর রেডি করে রেকর্ড করে শুনুন। কোথায় উচ্চারণগত দুর্বলতা আছে ধরতে পারবেন, সংশোধন করতে পারবেন আর বারবার শুনলে উত্তরটি দারুণভাবে আত্ত্বস্থও হবে

চারটিভাগে আমি আমার ভাইভা নোট খাতা প্রস্তুত করেছিলাম— ফার্স্ট চয়েজ, নিজ সাবজেক্ট, কমন বিষয়াবলী (নিজ জেলা, কেন সিভিল সার্ভিসে আসতে চাও ইত্যাদি) মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ। এছাড়া সাম্প্রতিক বিষয়গুলো ভাইভা নোটে তুলে রাখতাম।

ইংরেজিতে একটা কথা আছে ‘you never get a second chance to make a first impression’ আপনি ভাইভা বোর্ডে প্রবেশের কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা আপনার সম্পর্কে সাব-কনশাসলি একটা সিদ্ধান্তে আসবেন। সুতরাং প্রথমেই ভালো ইম্প্রেশন তৈরী করতে পারলে আপনার ৬০ ভাগ কাজ হয়ে গেল। আপনার পোশাক এবং আদব কায়দা নিয়ে সচেতন থাকুন। শীতের সময় ভাইভা হওয়াতে আমি স্যুট, টাই পড়ে গিয়েছিলাম। ভাইভা বোর্ডে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবেন, সালাম দিবেন এবং অনুমতি নিয়ে বসবেন৷ ইনফরমাল আলোচনায় আমি সাধারণত হাত নেড়ে কথা বলি কিন্তু ভাইভাতে যেন তা না হয় তাই আমি এক হাত দিয়ে অন্য হাত ‘ইন্টারলকড’ করে বসেছিলাম। আমি শুধুমাত্র প্রশ্নকর্তার দিকে তাকিয়ে উত্তর করিনি বরং কথার মাঝে অন্যদের সাথেও আই কন্টাক্ট রাখতে চেষ্টা করেছিলাম। সবচেয়ে জরুরি বিষয়— মুখে সর্বদা একটা স্মিত হাসি ধরে রাখা। এই পজেটিভ আ্যটিটিউড আপনার সম্পর্কে বোর্ডকে পজেটিভ রাখবে। আমি ৩৭তম ভাইভা বোর্ডে প্রায় ৩৫ মিনিট ছিলাম, এক মূহুর্তের জন্যেই স্মাইলিং ফেস ধরে রাখতে ভুলিনি।

আমাকে প্রথমেই বলা হয়েছিল ‘introduce yourself’ এইখানে আ্যকাডেমিক, পারিবারিক বিষয়ের সাথে নিজের শক্তির জায়গাগুলো ফোকাস করুন। আমার বোন নেই শুনে পরবর্তী প্রশ্ন করা হয়— আমার বোন থাকলে সম্পত্তির অর্ধেক যদি বাবা বোনকে দিয়ে দিতেন আমার আপত্তি ছিল কিনা? কেন আপত্তি নেই ব্যাখ্যা করতে বলা হলো। সিডো, নারী স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন হলো। আমি প্রগ্রেসিভ মেন্টালিটি ধারণ করি কিনা বোঝার জন্য এই প্রশ্নগুলো করা হয়েছিল।

তারপর কেন পুলিশ ক্যাডার প্রথম পছন্দ জানতে চাওয়া হয়? আমার পূর্বের সার্ভিসে আমি কি ধরনের কাজ করেছি বোর্ড জানতে চান। মনে রাখবেন আগে যদি কোনো চাকরিতে থাকেন এবং সেইটা উল্লেখ থাকে অবশ্যই আপনার কাজের ধরন এবং ঐ বিষয়ের মৌলিক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হবে।

নিজের পছন্দ ক্রমের ১ম তিনটা ক্যাডার নিয়ে অল্প হলেও জেনে যাবেন। যেমন আমাকে তৃতীয় পছন্দের পদক্রম জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। বোথ ক্যাডার চয়েজ থাকুক বা না থাকুক নিজের অনার্স/ মাস্টার্সের সাবজেক্টের ব্যাসিক সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখুন। আপনি অন্য বিষয় নাই জানতে পারেন কিন্ত নিজ সাবজেক্টের প্রশ্ন না পারাটা ভাইভা বোর্ড খুব নেগেটিভভাবে নেয়৷

জাতির পিতার জীবন এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন আসবেই। অন্তত মুক্তিযুদ্ধের কিছু বই এবং অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে যাবেন৷ আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের, যুক্তরাষ্ট্রের, যুক্তরাজ্যের এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের নাম জানতে চাওয়া হয়েছিল। ভারতের প্রেসিডেন্টের পুরোনাম উল্লেখ করাতে ভাইভা বোর্ড খুশি হয়েছিল৷ আমাকে বলেছিলো ভিভি গিরির পুরো নাম তো আমরাই জানতাম না।

স্মার্টনেস দেখাতে গিয়ে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় বা বিশদ আলোচনা করবেন না। ভাইভা বোর্ডে বিনয়ী থাকা ফরজ। পরিস্থিতি যেমনই হোক আপনি সর্বোচ্চ বিনয় প্রদর্শন করবেন। আপনার চোখ মুখ দেখে মনে হবে আপনি একজন উৎসাহী শ্রোতা। বোর্ড মেম্বাররা আপনার উত্তরের সাথে অনেক কিছু যোগ করবেন সেগুলো উৎসাহ নিয়ে শুনুন। ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিরোধপূর্ণ ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করলে কখনোই সরাসরি আপনার দর্শন ব্যক্ত করবেন না। সেক্ষেত্রে কৌশলে তথ্য উপস্থাপন করুন, মতামত নয়। ভাইভা বোর্ড আপনাকে দ্বিধান্বিত করার চেষ্টা করবে। মৎস্য সেক্টরে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে বোর্ড আমাকে কনফিউজিড করার চেষ্টা করেছিল। নিজের উত্তরের ব্যাপারে কনফিডেন্ট থাকুন। স্টেটমেন্ট পরিবর্তন করবেন না। তবে তারা যদি কোনো সিদ্ধান্ত দেয় অর্থ্যাৎ আপনার সাথে দ্বিমত পোষণ করে কখনোই তর্কে জড়াবেন না। চুপচাপ মেনে নিন।

আপনি চাইলেই বোর্ডকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কীভাবে করবেন? আপনি যা বলবেন ভাইভা বোর্ড তা থেকে পরবর্তী প্রশ্ন করবে। সুতরাং খুব সূক্ষ্মভাবে আপনার দখলে থাকা তথ্য, টার্ম ইত্যাদি ব্যবহার করুন, যেনো তা থেকে পরবর্তী প্রশ্ন করা হয় ।

নিজের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন থেকে বিরত থাকুন৷ যেমন ভাইভার এক পর্যায়ে আমি বলেছিলাম আমার বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরির ইচ্ছা ছিল না৷ বরং সেই ইচ্ছা গড়ে উঠেছে অনার্সের শেষ পর্যায়ে এসে। ভাইভা বোর্ড খুব পজিটিভলি নিয়েছিল৷ আগে কি ইচ্ছে ছিল এবং কেনো তা পরিবর্তন করলাম জানতে চেয়েছিল। এই পর্যায়ে পরিবেশটা এমন ছিল যেন আমি তাদের সাথে গল্প করছি। যদি আপনার শখ হয় সিনেমা দেখা/গিটার বাজানো হয় সেইটাই বলুন, বানিয়ে বই পড়া কিংবা নিউজ দেখা ইত্যাদি বলবেন না।

প্রথম পছন্দ ছিলো পুলিশ ক্যাডার হওয়াতে পেনাল কোড, সিআরপিসি আর পুলিশ আ্যক্ট থেকে কিছু প্রশ্ন করা হয়। আরো জানতে চাওয়া হয় বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে মতামত কী? পুলিশ বর্তমানে কোন দুইটি বিষয়ের উপর বেশি জোর দিচ্ছে? সেভেন সিস্টার্স কারা? কেন ঐ অঞ্চল শান্ত আছে? সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা কী? সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম কী? উদাহরণ? ডেভেলপমেন্ট কী? মিডল ইনকাম কান্ট্রি হতে কোন কোন শর্ত পূরণ করা দরকার? বোর্ড জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে জানতে চাইলেন আর আমার সাবজেক্ট থেকে অনেকগুলা প্রশ্ন করলেন।

আপনার পছন্দ যা-ই হোক না কেন, আপনার কাজ হলো পুরোটা সময় অফিসারসুলভ ব্যক্তিত্ব ধরে রেখে প্রমাণ করা আপনি ওই ক্যাডারে চাকরি পাওয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি। সবাইকে শুভকামনা।

ভাইভা নিয়ে তিন সতর্কতা ১০ পরামর্শ
লিখিত পরীক্ষায় অনেক কম নম্বর নিয়েও মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করলে আপনি ক্যাডার হয়ে যেতে পারেন। তাই মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করার জন্য ভালো প্রস্তুতি একান্ত প্রয়োজন। মৌখিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিসিএস ক্যাডার প্রত্যাশীদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন ৩৬তম বিসিএস ট্যাক্স (সহকারী ট্যাক্স কমিশনার) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত এস. এম. নজরুল ইসলাম।

শুধু কোনো পরীক্ষার ভাইভার জন্য নয়, যেকোনো ক্ষেত্রে সফল হতে হলে কথা বলার সময় যে তিনটি বিষয়ের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তা হলো স্বচ্ছতা, স্পষ্টতা এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। অন্যদিকে ভাইভা দেওয়ার সময় তিনটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে হলো-

১) আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে, কোনোভাবেই নার্ভাস হওয়া যাবে না;

২) ক্যাডারসুলভ আচরণ করতে হবে;

৩) দৃষ্টিভঙ্গি বুদ্ধিভিত্তিক এবং প্রাণবন্ত থাকতে হবে।

এছাড়া নিম্নোক্ত ১০ টি বিষয়ে গুরুত্ব দিলে ভাইভাতে ভালো করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। নিম্নে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো-

১) নিজ সম্পর্কে জানা
নিজের নামের অর্থ, নামের সঙ্গে মিল আছে এমন বিখ্যাত ব্যক্তি এবং পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। আপনার পছন্দের কবি, সাহিত্যিক, সাহিত্য, গান, খেলাধুলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনার পছন্দের বিষয়গুলো সম্পর্কে আগে থেকেই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে ভালো করা সম্ভব।

২) নিজ জেলা ও উপজেলা
আপনার নিজ জেলা ও উপজেলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। আপনার নিজ জেলায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিখ্যাত মুক্তিযুদ্ধার নাম, মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার জেলা কত নম্বর সেক্টরে ছিল ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে। এছাড়াও আপনার জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি সম্পর্কেও জেনে নিতে হবে। আপনার জেলা ও উপজেলার বিখ্যাত নদী, বন্দর, বিখ্যাত স্থান। অপনার জেলার যদি কোনো কবি ও সাহিত্যিক থাকে তাদের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।

৩) বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ
আপনার বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত শিক্ষক এবং কি জন্য তা বিখ্যাত এ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের যদি কোনো অবদান থাকে সে সম্পর্কেও ধারণা নিতে হবে। আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি এবং তিনি কোন বিভাগের সে সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।

৪) নিজ ক্যাডার পছন্দক্রম
বিসিএস পরীক্ষায় যে সব বিষয় পছন্দক্রম দিয়েছেন সেগুলোর মধ্য থেকে প্রথম তিনটি বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। প্রতিটি ক্যাডারের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং এ ক্যাডারের মাধ্যমে আপনি কিভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে চান এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা তুলে ধারতে হবে। কোনো প্রকার অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা যাবে না। এ ক্ষেত্রে আপনি পূর্ব থেকে প্রস্তুতি নিতে পারলে ভালো করবেন।

৫) মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ
১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ তথা ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আলোচিত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে যারা অসামান্য আবদান রেখেছেন তাদের সম্পর্কে বিস্তরিত জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বই, উপন্যাস, কবিতা এবং যে সব বুদ্ধিজীবী, কবি ও সাহিত্যিক মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নাটক, উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ এবং বিখ্যাত গান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। আপনাকে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের প্রাণের স্পন্দন, তাই এ বিষয়টিকে কোনো ভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।

৬) বাংলাদেশের অর্থনীতি
দেশ পরিচালনার দায়িত্ব যেহেতু আপনাকে দেওয়া হবে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে জানা আপনার জন্য একান্ত জরুরি। দেশের বাজেট, জিডিপি সম্পর্কে জানতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধ সম্পর্কেও বিস্তরিত জানতে হবে। অন্যদিকে বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে কী কী অবদান রাখছেন সে সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে জানতে হবে। এছাড়াও ২০২১ সাল এবং ২০৪১ সালের রুপরেখা সম্পর্কে ধারণা রাখা খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ তা জানতে হবে।

৭) সংবিধান ও মানচিত্র
শুধু ভাইভা জন্য নয় একজন সু-নাগরিক হিসেবেও সংবিধান সম্পর্কে জানা একান্ত জরুরি। এক্ষেত্রে আপনাকে সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো জেনে নিতে হবে। এছাড়াও আপনার পছন্দক্রমের সাথে মিল রেখেও সংবিধানের বিশেষ বিশেষ ধারাগুলো সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। কোনো দেশের পরিচিতি এবং ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে মানচিত্র জানা খুবই জরুরি।

৮) ভাষা হিসেবে ইংরেজি
অনেক ক্ষেত্রে ভাইভায় ইংরেজিতে প্রশ্ন করা হয়। আর ইংরেজিতে প্রশ্ন করা হলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে উত্তর দিতে হবে। তাই আগে থেকে যদি ইংরেজিতে কথা বলা শিখে নেন তাহলে ভাইভাতে ভালো করতে পারবেন।

৯) দেশের বিখ্যাত ব্যক্তি, কবি এবং সাহিত্যিক
প্রথমেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর সহমান সম্পর্কে বিস্তরিত জেনে নিতে হবে। এছাড়াও বিখ্যাত কবি, সহিত্যিকদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মুধুসূদন দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মীর মোশাররফ হোসেন, প্রমথ চৌধুরী, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, রাজা রামমোহন রায়, সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুফিয়া কামাল, হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ূন আজাদ, শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুণ, সেলিম আল দীন, সৈয়দ শামসুল হক, শওকত ওসমান, জহির রায়হান, জসীমউদ্দিন এবং সেলিনা হোসেন সম্পর্কেও জানতে হবে। এছাড়াও এসব সাহিত্যিকদের জীবনী, সাহিত্য কর্ম এবং তাদের বিখ্যাত উক্তি ভালোভবে পড়ে নিতে হবে।

১০) মনোযোগ দিয়ে শুনুন
পরীক্ষকের প্রশ্ন মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। শুনার পর একটু সময় নিয়ে গুছিয়ে উত্তর দিতে হবে। উত্তর দেওয়ার সময় আপনার জানা বিষয় দিয়ে উত্তর দিবেন। [নীচের পরামর্শটি সংগৃহীত)


সর্বশেষ সংবাদ