নতুন বই কিনতে পারছেন না প্রতিবন্ধী জিৎ

অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুজিৎ শর্মা
অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুজিৎ শর্মা

আমাদের সমাজে একদল মানুষ আছে যারা কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করে নামী-দামী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে, আরেকদল মধ্যবিত্ত যারা সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা জীবন শেষ করে। এর বাইরেও যে আরেকটা শ্রেণীর মানুষ আছে তাদের খবর আমরা কজনই বা রাখি? সমাজে এমন একটা শ্রেণী আছে যারা দরিদ্রতার কষাঘাতে হারিয়ে যায়। সেই সাথে হারিয়ে যায় একটা সম্ভাবনাময় জীবন।

কিন্তু ব্যতিক্রম কিছু মানুষও আছে, তারা শতপ্রতিকূলতা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চায়। তাদের আমরা অদম্য বলে ডাকি। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জিৎ। আসল নাম সুজিৎ শর্মা। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের আদুখালি গ্রামের প্রান্তিক কৃষকের সন্তান তিনি। ছোটবেলা থেকে তার ইচ্ছা ব্যাংকে চাকরি করবেন।

৪ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। পরিবারের ছোটরা খুব আদরের হয়, আর সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জিৎকে সবাই বোঝাই মনে করেছিল। শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ায় তিনি ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না। দুই পা ছোট এবং বাকা হওয়ায় স্বাভাবিক মানুষের মতো হাঁটতে পারেন না তিনি। বাড়িতে সবচেয়ে বেশি আদর পান বাবার। বাবাই তাকে কোলে করে স্কুল কলেজে নিয়ে এসেছেন সবসময়। কিন্তু বাবারও বয়স হয়েছে। তাই ছেলেকে অটোরিকশায় করে ২০ কিলোমিটার দূর শহরে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে পড়াশুনা করতে পাঠান তিনি।

সুজিৎ শর্মার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাবা মনোরঞ্জন শর্মা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধান আবাদ করেছেন। যেহেতু তাদের নিজস্ব জমি না তাই মালিককে ধানের ৫০ শতাংশ দিতে হবে। তা দেয়া হয়ে গেলেও বর্তমানে সরকার নির্ধারিত ১০৪০ টাকায় ধান বিক্রি করতে পারছেন না তিনি। ফলে বেশ অর্থকষ্টে আছে তার পরিবার।

সুজিৎ শর্মা বলেন, তিনি ছোটবেলা থেকেই ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। ব্যাংকার হয়ে তিনি তার বাবা মা ও ভাইদের খুশি রাখতে চান। তাছাড়া তিনি ব্যাংকার হয়ে তার অর্থের কিছু অংশ তার মতোই প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যয় করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন।

সুজিৎ শর্মা বলেন, আমি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখন বাবাকে অনেকেই বলেছিলাম আমাকে বিক্রি করে দিতে। একজন ২০ হাজার টাকায় কিনতেও এসেছিলেন। কিন্তু আমার বাবা দেননি। বলেছিলেন, কষ্ট করে হলেও ছেলেকে বড় করব। তিনিই আজ আমাদের এত দূর পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন।

সুজিৎ বলেন, প্রতিবন্ধী হয়েছি বলে কোনো আফসোস নেই। শুধু নিজের স্বপ্নপূরণ করতে চাই। সমাজসেবা অধিদফতর থেকে যে ভাতা দেয়া হয় তা অত্যন্ত কম। সেটা দিয়ে আমার পড়াশুনা চালানো সম্ভব না। বর্তমানে তৃতীয় বর্ষে উঠেছি কিন্তু নতুন বই কিনতে পারছি না।


সর্বশেষ সংবাদ