নুন আনতে পান্তা ফুরানো সিফাত পেল জিপিএ-৫

‘অভাবের সংসার, বাবা কৃষি কাজ করেন। আমিও কৃষি কাজে সাহায্য করি। প্রাইভেট পড়তে না পারলেও সহপাঠীদের সাহায্য নিয়ে বাড়িতেই পড়েছি। খেয়ে না খেয়ে স্কুলে গিয়েছি। ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। কথাগুলো হলো এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত সিফাতের। তার আরেকটি পরিচয় রয়েছে। গ্রামে যাকে সবাই দিনমজুর হিসেবে চিনে। সেই সিফাতই সবাইকে অবাক করে দিয়েছে এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার পালং ইউনিয়নের আটিপাড়া গ্রামের দিনমজুর মো. লিটন ঢালীর ছেলে।মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে সিফাত। সে কষ্টের জীবনে তাদের সফলতার এমন গল্প স্বপ্ন দেখাচ্ছে তার পরিবারকে।

পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবার সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করতো সিফাত ঢালী। এ কারণে ঠিকমতো স্কুলে যেতেও পারতো না সে। এরই মধ্যে প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল।

সেই সিফাত এসএসসিতেও তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে। কিন্তু সিফাতের এ ভালো ফল জেনেও কেন যেন হাসি নেই বাবা-মার মুখে। কারণ একটাই, অভাব। সামনে আরও অনেক পথ হাঁটতে হবে সিফাতকে। এ ভেবে আনন্দ যেন তাদের স্পর্শ করতে পারছে না।  তারা বাবা বলেন, সিফাত এসএসসিতে প্রতিটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।

সিফাতের বাবা আটিপাড়া গ্রামের লিটন ঢালী অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন। অভাবের সংসারে দিনমজুরের কাজ করে তিনি সংসার চালিয়ে ৩ মেয়ে ও ১ ছেলেকে লেখাপড়া করান। একা কাজ করে সংসার চালিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া যখন বন্ধের পথে তখন বাবার সঙ্গে অভাবের সংসারে হাল ধরে ছেলে সিফাত। 

সিফাতের মা মনি বেগম বলেন, অভাবের সংসার। তাই সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকি। সিফাত ঠিকমতো ক্লাসে যেতে পারেনি। কষ্ট করেই ভালো ফল করেছে সে। তবে এতো ভালো করবে বুঝতেই পারিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদ আল হোসাইন অত্যন্ত খুশির সাথে বলেন, সিফাত এবার এসএসসি পরীক্ষায় আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। সিফাত অনেক মেধাবী। তার পরিবার খুব গরিব। তাই ফ্রি বেতনে পড়ানো হয়েছে সিফাতকে। এসময় তিনি তার সামনে চলার পথে এ সফলতা ধরে রাখার কামনা করেন।


সর্বশেষ সংবাদ