মঞ্চ নাট্য অভিনেতা যখন সফল বিসিএস ক্যাডার

মো. আল আমিন
মো. আল আমিন

মো. আল আমিন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী। ৩৭ তম বিসিএস সমবায় ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন তিনি। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্য তার গল্প লিখেছেন- এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

শৈশব থেকেই সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা ছিল আল আমিনের। স্কুল থেকে দিনশেষে যখন বাড়িতে ফিরতেন; সাহিত্য বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতেন তখনও। একজন সাধারণ ব্যবসায়ী পিতা ইদ্রিস ব্যাপারী ও গৃহিণী মা আমিনা বেগমের ঘরে জন্ম তার। পিরোজপুর জেলার তেতুলিয়া উপজেলার মঠবাড়িয়া গ্রামে। সাত ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট আল আমিন। সাফা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সরকাবি বৃত্তি পেয়েছিলেন অষ্টম শ্রেণীতে। একই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে জিপিএ ৪.৮১ পেয়ে স্কুলের ইতিহাসে সবোর্চ্চ ফল করেন। তারপর আহসানিয়া মিশন কলেজ থেকে জিপিএ ৪.৫০ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করেন। জিপিএ-৫ কিংবা গোল্ডেন এ-প্লাস নামক সোনার হরিণ তার পাওয়া হয়নি।

স্বপ্ন ছিল অভিনেতা হওয়ার
উচ্চ মাধ্যমিকের পর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় একসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পান আল আমিন। ঢাকায় থাকার ইচ্ছে; সে কারণে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে। আল আমিনের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব বেশি ভালো ছিল না। বাধ্য হয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন প্রচুর টিউশনি করতে হত। নিজের খরচ চালাতে হত নিজেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনগুলিতে পড়াশোনা, খেলাধুলা, টিউশনি আর মঞ্চ নাটক করেই বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন। অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছা ছিল; তাই মঞ্চ নাটক করতেন। পড়ে থাকতেন শিল্পকলা একাডেমিতে। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছাকে মুছে ফেলেন আল আমিন। স্বপ্ন দেখেন গোছানা জীবনের, দেশমাতৃকার সেবা করার সর্বাপরি দেশ সেরা চাকরিটা হাতিয়ে নেওয়ার।

চাকরিতে যোগদানরত মো. আল আমিন

 

বেকার জীবনে মানুষের কটূক্তি
আল আমিনের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করার পর এক বন্ধুর পরামর্শে হঠাৎই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। সফল জীবনের শুরুটা মূলত সেখান থেকেই। এরপর বাউন্ডুলেপনা ছেড়ে পড়ার টেবিলে বসা; বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি নিতে শুরু করা। শুরুতে বিগত সালের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করেছিলেন আল আমিন। ফলে কোনগুলো বাদ দিতে হবে; আর কী পড়া দরকার- তা ভালোভাবেই বুঝে গিয়েছিলেন। পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ পাতাগুলো নিয়মিত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তেন। পড়ালেখা করতেন আন্তরিকতা দিয়ে, খুব মনযোগ সহকারে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো খাতায় লিখে রাখতেন।

প্রস্তুতির এক পর্যায়ে একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরিও পেয়ে গিয়েছিলেন আল আমিন। কিন্তু স্বপ্ন যে তার বিসিএস! তাই আর সেই চাকরিতে যোগদান করেননি। ব্যাংকের চাকরিতে যোগদান না করায় দীর্ঘ সময় বেকার থাকতে হয়েছিল আল আমিনকে। শুনতে হয়েছিল অনেক মানুষের কটু কথা। যদিও সেসব কথার জবাব তিনি মুখে দেননি। আজ আল আমিন আজ সফল। পূরণ হয়েছে তার স্বপ্নও।

অনুজদের জন্য পরামর্শ
সামনেই ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি। যারা বিসিএস ক্যাডার হতে চান; তাদের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন আল আমিন। বলেছেন, ‘গণিত ও ইংরেজির ওপর বিশেষ জোর দিন। নিজের দুর্বল পয়েন্টগুলো খুঁজে বের করুন। সেসব বিষয়ে সময় দিন, নিজেকে জানুন। নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা পড়ে নিজেকে আপডেট রাখুন।’

‘আগামী ৩ মে ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনরারী পরীক্ষা। এই বিসিএসে এক হাজার ৯০৩ জন ক্যাডার নিয়োগ দেয়া হবে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’

আল আমিনের বক্তব্য, ‘যা পড়বেন গুছিয়ে ও মনযোগ দিয়ে পড়বেন। বিসিএস কঠিন কোনো জিনিস নয়। এটাও একটা চাকরি মাত্র। নিজের উপর আত্মবিশ্বাস এনে প্রচুর পরিশ্রম করুন। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন। আপনার স্বপ্নও একদিন পূরণ হবে ইনশা আল্লাহ।’


সর্বশেষ সংবাদ