অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে ইউজিসির ডাকা শুনানিতে যাচ্ছেন না রাবি ভিসি

  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালেয়র (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) একটি তদন্ত দল। অভিযোগের জবাব দিতে নিজে থেকেই তদন্ত দলকে একটি উন্মুক্ত শুনানির আয়োজন করতে বলেন এ উপাচার্য। তার প্রস্তাবিত তারিখ অনুযায়ী আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন র্নিধারণ করা হলেও শুনানিতে অংশগ্রহণ করবেন না অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান।

আজ বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাবি উপাচার্য গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমি ইতোমধ্যে চিঠি দিয়ে কর্তৃত্ববিহীন কমিটির তদন্ত বন্ধ করতে অনুরোধ করেছি। কারণ ইউজিসির তদন্ত কমিটি গঠনের এখতিয়ার নেই। কমিটি গঠনে কমিশনের যে অ্যাক্ট, সেই অ্যাক্টে এই ক্ষমতা নেই। 

তিনি আরও বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করতে হলে উপাচার্যের মর্যাদার এক ধাপ ওপরের পদমর্যাদার সদস্যদের দিয়ে করতে হবে। যেহেতু ইউজিসির গঠিত তদন্ত কমিটিতে এর ব্যত্যয় ঘটেছে। সেখানে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।

জানা যায়, রাবি উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কমিশনে প্রাপ্ত বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে সম্প্রতি একটি কমিটি করে ইউজিসি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার কাছ থেকে লিখিত ব্যাখ্যা চাইলে লিখিতভাবে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দেয়া অসম্ভব দাবি করে এ বিষয়ে ইউজিসিকে উন্মুক্ত শুনানি আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি। তার এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইউজিসি শুনানি আয়োজন করলেও এখন অন্য কথা বলছেন রাবি উপাচার্য। বর্তমানে তদন্ত কমিটির এখতিয়ার নিয়েই প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন তিনি।

এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর অনেকটা স্ববিরোধী অবস্থান নিয়েই ইউজিসির তদন্ত কমিটিকে কর্তৃত্ববিহীন আখ্যা দিয়ে এর কার্যক্রম বন্ধের জন্য ইউজিসি চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। চিঠিতে রাবি উপাচার্য দাবি করেন, ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের কোনো ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে দেয়া হয়নি। আইন অনুযায়ী তদন্ত কমিটির সদস্যদের মর্যাদা উপাচার্যের মর্যাদার এক ধাপ ওপরে হওয়া বাঞ্ছনীয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ইউজিসির একজন সিনিয়র সহকারী পরিচালক ও উপাচার্যের পদমর্যাদার সমমর্যাদাসম্পন্ন ইউজিসির দুজন সদস্য নিয়ে কমিটি গঠিত হয়েছে। যা শুধু বেআইনিই নয়, বরং এর মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাও খর্ব করা হয়েছে।

এদিকে ইউজিসি বলছে, ১৯৭৩ অধ্যাদেশের ক্ষমতাবলেই তারা রাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত করছে। কমিশন বলছে, অধ্যাদেশের ৫-এর আই ধারা অনুযায়ী, আইন ও সরকার প্রদত্ত কাজে কমিশন ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে। অধ্যাদেশের সে ক্ষমতাবলেই ইউজিসির রাবি উপাচার্যের অনিয়ম তদন্ত করছে। এছাড়াও ইউজিসি বলছে, সিনিয়র সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা তদন্ত কমিটিতে নেই। ওই কর্মকর্তা শুধু সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসির একজন সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কমিশনে প্রাপ্ত বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে সম্প্রতি একটি কমিটি করে ইউজিসি। সরকারের নির্দেশনার আলোকেই এ তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে। তদন্ত কমিটি অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের সাক্ষাৎকার এবং তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করবে। সব পক্ষকেই তাদের বক্তব্য প্রদানের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর শুনানি আয়োজনের প্রস্তাবও করেছেন রাবি উপাচার্য নিজেই। এর আগে তিনি তদন্ত কমিটির আহ্ববায়কের কাছে ৫ পৃষ্ঠার জবাবও দিয়েছেন। এখন তিনি যদি শুনানিতে নাও আসেন। তার দেয়া চিঠিকেই তার বক্তব্য হিসেবে নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পাঠানো হবে।


সর্বশেষ সংবাদ