অভিযানে কুকুরশূন্য টিএসসি, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

লকডাউনে ক্যাম্পাসের কুকুরগুলোকে খাবার দিয়েছিলেন একদল শিক্ষার্থী
লকডাউনে ক্যাম্পাসের কুকুরগুলোকে খাবার দিয়েছিলেন একদল শিক্ষার্থী  © সংগৃহীত

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কুকুর অপসারণ অভিযানের পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকার কুকুরগুলো দেখা যাচ্ছে না, যা নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

ক্যাম্পাসের কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণিদের খাবার ও চিকিৎসা সেবাসহ সার্বিক দেখাশুনা করে ‘অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ক্লাব অব ঢাকা ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। চলমান লকডাউনের মধ্যে নিজেদের পয়সায় খাবার কিনে ওই প্রাণিদের খাওয়ানো শিক্ষার্থীরা বলছেন, সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের লোকজন গাড়ি নিয়ে এসে টিএসসি এলাকা থেকে ১০-১২টি কুকুর ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে তুলে নিয়ে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার সংস্থাটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা সাবরিনা সাব্বির বলেন, আমরা গত পাঁচ বছর ধরে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে প্রাণিদের নিয়ে কাজ করছি। এই লকডাউনে গত ছয় মাস পুরো ইউনিভার্সিটিতে আমরা প্রাণিদের খাবার দিয়েছি। আমরা রীতিমতো পাঁচ দিন কুকুরগুলোকে খাবার দিই। গতকাল আমাদের ফিডিং ছিল না। আজকে আমরা এসে দেখি, টিএসসিতে কোনো কুকুর নাই। লোকজনের কাছে জানতে পারি, গতকাল (সোমবার) সিটি করপোরেশনের লোকজন গাড়ি নিয়ে এসে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বলে আমাদের কুকুরগুলো তুলে নিয়ে গেছে।

কুকুরগুলোর সন্ধানে নগর ভবনে গিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে গিয়ে জানতে পারি, তাদের রমনা পার্ক থেকে কুকুর ধরার কথা ছিল, কিন্তু ভুলে আমাদের কুকুরগুলোকে তারা ধরে নিয়ে মাতুয়াইলে ফেলে দিয়ে আসছে।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, এভাবে কুকুর অপসারণ বা নিধন করা সম্পূর্ণ বেইআইনি। আমরা শিক্ষার্থী, আমাদের টাকা-পয়সা ও রকম নাই। তারপরও আমরা ভাগে ভাগে কুকুর ধরে ধরে বন্ধ্যাত্মকরণ করেছি, টিকা দিয়েছি। কুকুরগুলো অনেক মিশুক। ডাকলেই কাছে আসে, যে কেউ আদর করতে পারে। সেই কুকুরগুলোকে তারা তুলে নিয়ে গিয়ে মাতুয়াইলে ফেলে আসল? এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা শিগগিরই প্রতিবাদ কর্মসূচি ডাকব।

করোনা মহামারির শুরু থেকে ক্যাম্পাসের প্রাণিগুলোকে খাবার ও চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের (সিএসই) স্নাতকোত্তরের ছাত্র তাওহিদ তানজিম। তিনি বলেন, টিএসসির প্রতিটি কুকুর আমাদের পরিচিত। তাদের আমরা বিভিন্ন নামে ডাকি। কিন্তু টিএসসিতে এখন ১০ থেকে ১২টি কুকুর মিসিং। আমরা নগর ভবনে গেলে তারা বলেন গতকাল মোট ১৬টি কুকুর ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাম্পাস থেকে নেওয়া হয়েছে ৪-৫টি। তাহলে বাকি কুকুরগুলো গেল কোথায়?

তিনি বলেন, এ কুকুরগুলোকে তুলে নেওয়ার কোনো মানে হয় না। এগুলো বেওয়ারিশ কুকুর নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এগুলো লালন পালন করে। এদের অনেকগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, কিছু কুকুর বন্ধ্যাত্মকরণ করাও ছিল।

এ ব্যাপারে ডিএসসিসির প্রধান ভেটেরিনারি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার জানা মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে কোনো কুকুর ধরা হয়নি। রমনা পার্ক থেকে কিছু কুকুর ধরা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, এটা সিটি করপোরেশনের বিষয়। কোনো কিছু হয়ে থাকলে শিক্ষার্থীরা সিটি করপোরেশনের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ