সেপ্টেম্বরেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আভাস

  © ফাইল ফটো

দেশে চলমান কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে দুই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। অনলাইন ক্লাস থেকে শুরু করে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে টেলিভিশন ক্লাসেরও। এরই মধ্যে চিন্তা এসেছে সেপ্টেম্বরে উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলারও। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষ দিকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার চিন্তা আছে, তবে তা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। সূত্রের ভাষ্য, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা সচেতন এবং ক্যাম্পাস খুললেও তারা স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মেনে চলতে পারবে। সেজন্যই এই পরামর্শ এসেছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে সরকারের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে হয়তো করোনার প্রকোপ কমে যাবে। তিনি বলেন, যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সুবিধা নেই, সেখানে হয়তো সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাস কার্যক্রম চালানো যেতে পারে। তবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী হলে থেকে লেখাপড়া করে। সেক্ষেত্রে হলে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা নিয়ে আমরা সন্দিহান।

সূত্র জানায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলায় পিইসি-জেএসসি-জেডিসি বাতিলের পরামর্শ আসলেও এখনও তাতে চূড়ান্ত সায় দেয়নি মন্ত্রণালয়। বরং সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে প্রতিষ্ঠান খুললে কীভাবে পরীক্ষা নেয়া যাবে, এই ব্যাপারে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হলে চলতি বছরের মধ্যেই সিলেবাস কমিয়ে শিক্ষাবর্ষ শেষ করা হবে। তা সম্ভব না হলে চলতি শিক্ষাবর্ষ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হবে।

সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। একাধিক শিক্ষক এ প্রতিবেদকে জানিয়েছেন, সবকিছু যেহেতু খুলে দেওয়া হচ্ছে। সেহেতু স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া দরকার। দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীরা বাড়িতে থাকলে তাদের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত পাঁচ মাস ধরে আমরা সবাই গৃহবন্দী অবস্থায় আছি। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। এভাবে আর কতদিন শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বদ্ধ অবস্থায় থাকতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট কিন্তু থেমে নেই। তাই দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে আমাদের অনেক কিছু ভাবতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমাদের শিক্ষকরা ইতোমধ্যেই এই বিষয় নিয়ে ভাবছেন। তবে আমরা হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিবো না।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ কমার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর আবারো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সে দিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তবে সব বিষয়ে ইউরোপ-আমেরিকার মতো হবে না। আমাদের নিজস্ব কিছু বিষয় আছে। এই বিষয়গুলো ভেবে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলতে চাই।

সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ড. মোঃ শাহজাহান বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন যে দিকনির্দেশনা দেবে আমরা সেটিই অনুসরণ করব’’।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পূর্বে বিশেষজ্ঞদের সাথে বর্তমান অবস্থা গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট সচেতন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধ্যয়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করেন। আর হলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা কঠিন। আমাদের এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও ভালো করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

করোনাকালীন সময়ে অনলাইন পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পোষানো যাচ্ছে জানিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে তবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা উচিৎ।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে হয়তো করোনার সংক্রমণ আরও কমে যাবে। তারপরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমরা পরিস্থিতি আরও পর্যবেক্ষণ করতে চাই। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাই না। ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাই না।


সর্বশেষ সংবাদ