বিজয় উল্লাসে ফের মেতে উঠবে ‘প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ’

আবারও একদিন রঙিন সাজে সাজবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহারের সবুজ চত্বর। ফিরে আসবে প্রাণের স্পন্দন। ইবলিশ চত্বরে বেজে ওঠবে বিজয়ের গান। প্রভাত ফেরির মিছিলে আন্দোলিত হবে প্যারিসের বুক। ফুলে ফুলে ভরে যাবে শহীদ মিনার চত্বর। মুক্ত মঞ্চটি কেঁপে উঠবে কবিতা আর গানে। হলের ছাদে উড়বে ফানুস।

আবারও মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে আবার প্যারিসের রাস্তায়। শাড়ি আর পাঞ্জাবিওয়ালা রাবিয়ানের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে চারুকলার প্রাঙ্গণ। রঙিন সাজে সাজবে সমস্ত ক্যাম্পাস। বিকেল গড়াতেই প্যারিস রোডে বেড়ে যাবে নব্য যুগলের পদচারণা। সন্ধ্যায় রকমারি বাতির ঝলকানি জ্বলে উঠবে ইবলিশের মাঠে। গিটারের তালে মেতে উঠবে প্রাঙ্গন। জনশূন্য টুকিটাকি চত্বরটি ভরে যাবে আবার। কড়া লিকারে আদাযুক্ত লাল চায়ে চুমুক দিতে মরিয়া হবে সবাই। চায়ের কাপের টুংটাং ঝংকারে মুখরিত হয়ে উঠবে চারপাশ। গল্প-গুজব আর খুনসুটিতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। সন্ধ্যা গড়িয়ে হবে রাত। তবুও মন চাইবে বসিই না আরেকটুখানি!

প্যারিস রোডের পাশে রঙ্গিন আলোয় গিটারের তালে মেতে উঠবে গায়কেরা। গানের দলে সঙ্গী হবে আকাশ থেকে নেমে আসা জোনাকির ঝাঁক। নবীনদের পদচারণায় আবার মুখরিত হবে ক্যাম্পাস। স্বপ্নের প্রাঙ্গণে ছুটে বেড়াবে রাবিয়ানরা। সজ্জিত হবে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন। যেথায় নবীন বুনবে স্বপ্ন, গাইবে গান। জানতে পারবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা। যেখানে সাবাস বাংলা ভাস্কর্য তারুণ্যের হৃদয়ে আলোড়ন জাগিয়ে দেবে। আর বধ্যভূমির নিশ্চুপ ইতিহাসের ভয়াবহতার শিহরণ জাগাবে। শহীদ মিনার, বুদ্ধিজীবী চত্বর, জোহা স্যারের কবর সম্মানে দৃষ্টি অবনত করতে বাধ্য করবে।

লাইব্রেরি চত্বরটি ভরে যাবে আবার জ্ঞান পিপাসুদের আড্ডায়। জ্ঞানচর্চার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে তারা স্বপ্নের পথে বহুদূর। এদিকে বর্ষার বৃষ্টিস্নাত প্যারিসে প্রিয় মানুষের হাত ধরে হাঁটতে দেখা যাবে আবার নব্য যুগলদের। আর গুনগুনিয়ে গাইবে গান- “এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন...”। কিংবা, “আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব, হারিয়ে যাব আমি তোমার সাথে...”।

রাকসু ভবনে চলবে সংস্কৃতিক জোটের গান, আবৃত্তি, নৃত্য আর নাটকের মহড়া। রাকসু প্রাঙ্গণে বসে লতিফ ভাইয়ের চায়ের কাপে চুমুক দিতে হঠাৎ ভেসে আসবে নাট্যকর্মীদের হিহি, হাহা, হুহু হাসির শব্দ ধ্বনি। যেটা রিপোর্ট ইউনিটি মনমরা আর বিচলিত সাংবাদিকদের মনে জাগাবে হাসির ঢেউ! সঙ্গীত শিল্পীদের গানে মনে দেবে দোলা! মহুর্তেই রোমান্টিক জগতে ফিরে যাবে মন, গেয়ে উঠবে গান- “আবার এলো যে সন্ধ্যা, শুধু দু’জনে...”। কিংবা “কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই...”। জমে উঠবে আড্ডা।

শুধু একটি সুস্থ ভোরের প্রতীক্ষায়। যেদিন রাবিয়ানদের পদচারণায় আবার প্রাণ ফিরে পাবে প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত এই মতিহারের লীলাভূমি।

লেখক, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ