করোনাকাল

সবজি চাষে পরিবারের চাহিদা মিটাচ্ছেন ঢাবি ছাত্র তন্ময়

  © টিডিসি ফটো

নভেল করোনাভাইরাসের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মার্চের মাঝামাঝি থেকেই ঘরবন্দী দেশের সব শিক্ষার্থী। এই সময়ে শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই সময় পার করছেন অনলাইনে। আবার কেউ উল্লেখযোগ্য কোনকিছুই না করে অলসতায় কাটাচ্ছেন এই বিশাল ছুটি।

বন্ধের সময়টাকে কাজে লাগিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র তন্ময় মণ্ডল করছেন এক ব্যাতিক্রমধর্মী কাজ। ঘেরের ভেঁড়িতে তিনমাস যাবৎ পরিশ্রম করে ফলিয়েছেন লাউ, চাল কুমড়াঁ, ধুন্দল, মিষ্টি কুঁমড়া এবং ঢেঁড়সসহ অন্যান্য সবজি।

কৃষক পরিবারের সন্তান তন্ময় মণ্ডল। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার তালা থানায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের কারুশিল্প বিভাগের ৪র্থ বর্ষে অধ্যয়নরত এই ছাত্র করোনা সংক্রমনের  শুরু থেকে গ্রামে অবস্থান করছেন।

তন্ময় মণ্ডল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান কৃষকের ছেলে হিসেবে আমি গর্বিত। করোনার ছুটিতে বাড়ি এসে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। একদিন ভাবলাম বাড়িতে বসে না থেকে মাছের পাশাপাশি মাছের ঘেরের ভেঁড়ি বাঁধের উপর সবজি চাষ করবো। যেই ভাবা, সেই কাজ।

করোনার শুরুর দিকে ঘেরের ভেঁড়ির উপর লাউ, চাল কুমড়াঁ, ধুন্দল, মিষ্টি কুঁমড়া এবং ঢেঁড়সের বীজ বপন করে তন্ময়। কয়েকদিনের মধ্যে বীজ থেকে চারাগাছ জন্ম নেয়। চারাগাছগুলো যাতে ভালভাবে ফলন দিতে পারে, সেজন্য জন্মানোর ১/২ দিনের মধ্যে ঘেরের ভিতরে জালের বান বা জাল বিছিয়ে দেয় তিনি।

তন্ময় বলেন, গাছ জন্মানো পর থেকে গাছের গোঁড়ায় ১ সপ্তাহ পর পর গোবর সার প্রয়োগ করতে থাকি। ১ থেকে ১.১/২ মাসের মধ্যে গাছগুলোতে ফুল আসে এবং তার ৫/৬ দিনের মধ্যে ফলন আসে। বর্তমানে যার থেকে আমাদের পরিবারের সবজি চাহিদা মেটাতে পারছি এবং নিকটস্ত বাজারে টুকটাক বিক্রয়ও করতে পারছি।

করোনার বন্ধে এই ছাত্র পুরোটা সময় থেকেছেন প্রকৃতির মাঝে। সবাই যখন অনলাইনে মত্ত তখন তিনি তার ঘেরের ভেঁড়িতে কোন গাছের কি প্রয়োজন তা মিটাতে ব্যস্ত। কোন গাছে কি কীটনাশক লাগবে কোন গাছে সার দিতে হবে, এসব করে তিনি দিন কাটাচ্ছেন।

এই ছাত্র জানান, অবসর সময় কাটানোর জন্য আমাদের মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীর কথা মাথায় রেখে, বাবার দেখানো পথে ঘেরের ভেঁড়িতে গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালীন বিভিন্ন সবজির চাষ করি। নিজ হাতে চাষ করা সবজি ক্ষেতের সবজি উঠানোর আনন্দই অন্য রকম। কৃষকের ছেলে হয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেও বাবাকে সহযোগিতা করতে পেরে অনেক ভাল লাগছে।

যারা বাড়িতে বসে অবসর সময় কাটাচ্ছেন, তারা চাইলেই নিজ নিজ উদ্যোগে অনেক কিছু করতে পারেন এবং পরিবারের কাজে লাগতে পারেন। এমনও হতে পারে, এটা আপনার জীবনের একটা স্মরণীয় গল্পের অধ্যায় হিসেবে রয়ে যেতে পারে, যোগ করেন ঢাবির এই ছাত্র।


সর্বশেষ সংবাদ