আগের নিয়মেই ঢাবিতে ভর্তি, এইচএসসি রেজাল্টের পরপরই পরীক্ষা

  © টিডিসি ফটো

গত বছর থেকে (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় নৈর্ব্যক্তিক অংশের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষাও নেয়া হচ্ছে। এবছরও (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) আগের নিয়মে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষায় কোন ধরনের পরিবর্তন আসছে না বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সম্প্রতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান তিনি।

অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা পরিবর্তনের কোনও সিদ্ধান্ত এখনও আমাদের হয়নি। এছাড়া পরিবর্তনেরও কোন চিন্তা-ভাবনা এখনো পর্যন্ত নেই।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সমাপ্তির কত দিনের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে— জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, পরীক্ষার (উচ্চ মাধ্যমিক) ফল বের হওয়ার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাবি উপাচার্য বলেন, প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস যেহেতু শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পড়াশোনাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তাই এ বিষয়ে আমাদের একটি প্রয়াস থাকতে হবে যাতে সময়টা সাশ্রয় ঘটানো যায়। আমাদের এই পরিকল্পনা রাখতে হবে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু এবং সমাপ্ত যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের পহেলা এপ্রিল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা আসে। এ ছুটি বেশ কয়েক ধাপে বাড়িয়ে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলমান রয়েছে। এ কারণে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও আর নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হরেল তার ১৫ দিন পর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

স্নাতক ভর্তির ইউনিট:

ঢাবিতে মোট পাঁচটি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। ইউনিটগুলো হলো— ক, খ, গ, ঘ, এবং চ ইউনিট। ‘ক’ ইউনিটে শুধু বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে। ‘খ’ ইউনিটে শুধু মানবিকের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবে। ‘গ’ ইউনিটে শুধু ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে। ‘ঘ’ ইউনিটে সব ইউনিটের (ক, খ এবং গ) শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে। কিছু শর্ত সাপেক্ষে ‘চ’ ইউনিটে সব ইউনিটের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে।

প্রতিটি ইউনিটে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের আলাদা যোগ্যতার প্রয়োজন আছে। যেমন— ‘ক’ ইউনিটে অংশগ্রহণের জন্য এসএসসি ও এইচএসসিতে ন্যূনতম জিপিএ ৮.০০ থাকা আবশ্যক এবং পৃথকভাবে দুটিতে জিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে। ‘খ’ ইউনিটে এসএসসি ও এইচএসসিতে ন্যূনতম জিপিএ ৭.০০ এবং পৃথকভাবে দুটি পরীক্ষায় ৩.০০ থাকা বাধ্যতামূলক। ‘গ’ ইউনিটে এসএসসি ও এইচএসসিতে ন্যূনতম জিপিএ ৭.৫০ এবং পৃথকভাবে দুটি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৫০ থাক বাধ্যতামূলক।

‘ঘ’ ইউনিটে মানবিকের পরীক্ষার্থীদের জন্য এসএসসি ও এইচএসসিতে ন্যূনতম জিপিএ ৭.০০ বিজ্ঞানের পরীক্ষার্থীদের জন্য জিপিএ ৮.০০ এবং ব্যবসায় শিক্ষা পরীক্ষার্থীদের জন্য জিপিএ ৭.৫০থাকতে হবে। নাহলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

‘চ’ ইউনিটে এসএসসি ও এইচএসসিতে ন্যূনতম জিপিএ ৬.৫০ এবং পৃথকভাবে দুটি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.০০ থাকা আবশ্যক। এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলে চতুর্থ বিষয়সহ জিপিএ গণ্য করা হবে। এটা সব ইউনিটের জন্য প্রযোজ্য।

ইউনিটগুলোর মানবণ্টন:

প্রতিটি ইউনিটে (ক, খ, গ, ঘ এবং চ) ১২০ মার্কসের পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষা এমসিকিউ ও লিখিত দুভাবে নেওয়া হয়। (ক খ গ ঘ) ইউনিটে এমসিকিউতে ৭৫ নাম্বার আছে। প্রশ্ন থাকে ৬০টি। সময় ৫০ মিনিট। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১.২৫। প্রতিটি ভুলের জন্য দশমিক ২৫ নাম্বার কাটা যাবে। তবে ‘ঘ’ ইউনিটে প্রতিটি ভুলের জন্য দশমিক ৩০ নাম্বার কাটা যাবে।

লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে ইউনিট ভেদে প্রশ্নের সংখ্যার তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। ৪৫ নাম্বার আছে লিখিত পরীক্ষায়। সময় ৪০ মিনিট। এমসিকিউ এবং লিখিত পরীক্ষার মোট সময় (৫০+৪০) মিনিট = ৯০ মিনিট বা ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।

তবে ‘চ’ ইউনিট একটু ব্যতিক্রমী। এই ইউনিটে দুই ধাপে পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রথমত এমসিকিউ, দ্বিতীয়ত অঙ্কন (ফিগার ড্রয়িং)। ৫০টি এমসিকিউ থাকে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১। সময় ১ ঘণ্টা। ফিগার ড্রয়িংয়ে ৭০ নাম্বার আছে। সময় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।

পরীক্ষার পাস নাম্বার:
ক খ গ ঘ ইউনিটে এমসিকিউতে ৩০, লিখিত পরীক্ষায় ১২ এবং সর্বমোট ৪৮ মার্কস না পেলে অকৃতকার্য হিসেবে বিবেচিত হবে। ‘চ’ ইউনিটে ৫০ নাম্বারের এমসিকিউ পরীক্ষায় মেধাতালিকায় প্রথম ১৫০০ জন ফিগার ড্রয়িং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। পাস নাম্বার ৪৮।

মেধাতালিকা নির্ণয়:
‘চ’ ইউনিট বাদে বাকি ইউনিটগুলোতে মেধাতালিকা নির্ণয় করা হয় মোট ২০০ মার্কসের ভিত্তিতে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রাপ্ত ফলাফলে ৮০ মার্কস থাকে। এসএসসি পরীক্ষার প্রাপ্ত জিপিএ ৬ দ্বারা এবং এইচএসসি পরীক্ষার প্রাপ্ত জিপিএ ১০ দ্বারা গুণ করে ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নাম্বার যোগ করে মেধাতালিকা তৈরি করা হয়। ‘চ’ ইউনিটে শুধু ১২০ মার্কসের পরীক্ষা হয়। এখানে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জিপিএ যুক্ত হয় না।


সর্বশেষ সংবাদ