সাজেক ভ্যালি যেন শিল্পীর হাতে আঁকা ছবি

  © টিডিসি ফটো

জীবনের অভিধানে ব্যাস্তময় শব্দটিকে বাদ দিয়ে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে কার না ভাল লাগে। তাই আমরা সৌন্দর্যপীপাসু বেরিয়ে পড়েছিলাম প্রকৃতির টানে মেঘ পাহাড়ের রাজ্য সাজেক ভ্যালিতে।

আমাদের ভ্রমণের গাড়ি যখন খাগড়াছড়ি দিয়ে যাচ্ছিল তখন সবুজের বাঁকে-বাঁকে উঁচু-নিচু সর্পিল রাস্তায় চলছিল গাড়িটি। সর্পিল গতিতে ও চান্দের গাড়িতে এর আগে কখনো চলা হয়নি তাই হৃদয়ে এক অন্যরকম আনন্দ অনুভূত হচ্ছিল।

3 (5)

সাজেক যেতে যেতে দেখেছিলাম কিছুদূর পরপর পাহাড়িদের ঘরবাড়ি, প্রত্যাহিক জীবনের সহজ সরল জীবনযাত্রা। প্রায় ২২ ঘন্টা পর পৌছালাম প্রকৃতির অপূর্ব নৈসর্গিক সাজেক ভ্যালিতে। তারপর গিয়েছিলাম এক রাত থাকার জন্য পূর্বে ঠিক করা রিসোর্ট মেঘমালাতে। খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুরতে বের হয়েছিলাম।

তারপর গেলাম হেলিপ্যাডে যেখান থেকে পুরো সাজেক দেখা য়ায়। হ্যালিপ্যাড থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য সত্যি মনকে আকৃষ্ট করেছিল। সেখানে দল বেঁধে সেলফি তুলছিল ঘুরতে আসা পর্যটকরা। আমরাও ছবি তোলা ও সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করেছিলাম বিকালের সময়টা। পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছিল এই হেলিপ্যাডে।

2 (11)

এর আগে পরিদর্শন করেছিলাম ঐতিহ্যবাহী লুসাই গ্রাম। ওখানে এক ব্যক্তির আলাপচারিতায় জানা যায়, আগে এখানে প্রায় শতাধিক লুসাই পরিবারের বসবাস ছিল। বিভিন্ন কারণে তারা ভারতের মিজোরামে চলে গেছে। বর্তমানে কয়েকটি লুসাই পরিবার এখানে বসবাস করে।

এরপর রিসোর্টে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তখন ঘড়ির কাটায় সন্ধ্যা সাতটা বাজে। পাপ্পু ভাইয়ের স্লোগান ‘ঘুমানোর অনেক রাত পাবা, কিন্ত রাতের সাজেক পাবা না’। ভাইয়ের নেতৃত্বে বের হয়ে গানের আসর বসায় প্রথম হেলিপ্যাডে। রাতে তারাভরা আকাশ মৃদুমন্দ হাওয়ায় গানের আড্ডাবাজি ও বাঁশের কাপে চায়ে চুমুক স্যাজেক ভ্যালি ভ্রমনের আনান্দে পূর্ণতা এনেছিল।

4 (3)

পরের দিন ঘুম থেকে উঠেই সূর্য উদয় দেখা ও মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যেতে প্রস্তুত সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া হাজারের অধিক ফুট উঁচু কংলাক পাহাড়ে যাওয়ার জন্য। ঘড়ির কাটায় তখন সকাল সাড়ে পাঁচটা বাজে। চান্দের গাড়িতে করে গেলাম কংলাক পাহাড়ে। কংলাক পাহাড়ে যাওয়ার পথে মিজোরাম রাজ্যের সীমান্তবর্তী বড় বড় পাহাড়, চারিদিকে মেঘের আানাগোনা আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। হাজার ফুট উঁচুতে উঠে যখন মেঘ আমদেরকে ছুঁয়ে যাচ্ছিল মনে হচ্ছিল এ অন্য এক পৃথিবী। সাজেকের সূর্য উদয় ও সূর্যাস্তের তুলনা হয় না। হৃদয়ে এনেছিল অন্যরকম প্রশান্তি । প্রকৃতি এতটা সুন্দর হতে পারে সাজেক ভ্যালিতে না গেলে জানার অপূর্ণতা রয়ে যেত। যেকোন প্রকৃতি প্রেমিক সাজেক ভ্যালির প্রেমে পড়তে বাধ্য।

5 (1)

কংলাক থেকে রুইলুই পাহাড়ে এসে ফিরতি পথচলা শুরু। ফিরতি পথে খাগড়াছড়ি শহরে রহস্যময় গুহা আলুটিলা ঘুরে দেখলাম। এই গুহায় বিচিত্র এক অভিজ্ঞতা হল মাত্র পনের মিনিটের একটি ভ্রমনে। এখান থেকে ফিরেছিলাম নিজেদের গন্তব্যে।

সাজেক বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত। সাজেক থেকে ভারতের মিজোরাম রাজ্য আট কিলোমিটার দূরে এবং হাঁটার সময় মাত্র দুই ঘন্টা।


সর্বশেষ সংবাদ