বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির আগে যে ভুল করেন ভর্তিচ্ছুরা

  © সংগৃহীত

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুকদের ভুল হয় কোথায়? কী কী কারণে একজন শিক্ষার্থী তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারেন না? ভুল শোধরানো ও উত্তরনের পথই-বা কী? দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে উচ্চমাধ্যমিকের পর তাদের করা ভুলগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। সেই ভুলগুলোর চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হলো—

১. নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করা: এই ক্ষেত্রে শুধু শিক্ষার্থীরা নয় অনেক অভিভাবকও নিজের সন্তানকে আরেক জনের সাথে তুলনা করেন। একজন শিক্ষার্থীর প্রতিযোগিতা নিজের সাথে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বলেন, অন্যের সঙ্গে কখনোই নিজেকে তুলনা করা যাবে না। অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করাটা বোকামি। নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী নিজেকেই ভাবতে হবে। অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আর সফলতার দেখা মেলেনা। 

২. লক্ষ্য নির্ধারণে ব্যর্থতা: একজন শিক্ষার্থীর মূল দায়িত্ব হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষার পর সে কী করতে চায় তা নির্ধারণ করে নেয়া। সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণে ব্যর্থ হয়ে অনেক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ পরে যায় ধোয়াশার মাঝে। নিজেদের ভালো লাগার জায়গাটি খুঁজে বের করতে হবে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী সিদ্ধান্ত নেন তাদের পরিবারের চাপে পড়ে। অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে একাধিক জায়গার প্রস্তুতি একসঙ্গে নেন। এটিই সফলতা না পাওয়ার অন্যতম কারণ। এ প্রসঙ্গে রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসান তাসদিক বলেন, অনেককে দেখি একসঙ্গে একাধিক নৌকায় পা দেয়। এর ফলে তারা কোনো প্রস্তুতিই ভালোভাবে নিতে পারে না। এটাই পরে ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৩. অতিরিক্ত কোচিং নির্ভর হয়ে পড়া: কোচিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে অনেক শিক্ষার্থী বাসায় পড়ার সময়টা কমিয়ে দেয়। অনেকে আবার মনে করে কোচিং করলেই চান্স পেয়ে যাবে। এমন ধারণা থেকে অনেক শিক্ষার্থী মাত্রাতিরিক্তভাবে কোচিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলাফল? কাঙ্খিত সফলতা না আসা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার রেজা বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইলে কোচিং করতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই। কোচিং মূলত আপনাকে একটি নির্দেশনা দেবে। তবে পড়ার কাজটা নিজেকেই করতে হবে।

৪. অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাস কিংবা আত্মবিশ্বাসের অভাব: আত্মবিশ্বাস ভাল কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ভাল না। ভর্তি পরীক্ষার সময় একজন শিক্ষার্থীর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস তার কোথাও চান্স না পাওয়ার জন্য যথেষ্ট। আবার একেবারে আত্মবিশ্বাস না থাকলেও সেই শিক্ষার্থীরও সফলতা আসেনা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সজীব আহসান বলেন, পরীক্ষার সময় অনেক শিক্ষার্থী দেখে অনেকেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। যার ফলে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েন। আবার আত্মবিশ্বাস অতিরিক্ত হওয়ার কারণেও অনেকেই কোথায় চান্স পান না। ভালো ফলাফলের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করার সংকল্প থাকা দরকার।

৫. না বুঝে মুখস্থ করার প্রবণতা: অনেককেই দেখা যায়, ভর্তি পরীক্ষার সময় খেয়ে না খেয়ে পড়া মুখস্থ করতে। বিষয়বস্তু না বুঝে মুখস্থ করার ফলে একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলে গিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কারণ ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন একটু ঘুরিয়ে করা হয়। তাই অন্ধের মতো মুখস্থ না করে বিষয়বস্তু বুঝে পড়ার কথা বলেছেন ঢাকা মেডিকেলের শিক্ষার্থী রাজ্জাকুল হায়দার। রাজ্জাক বলেন, বিষয়বস্তু না বুঝে কেউ যদি শুধু মুখস্থ করে পরীক্ষার হলে যায় তবে তাকে অথই জলে পড়তে হবে। 

৬. পড়া জমিয়ে রাখা: অধিকাংশ শিক্ষার্থী এই কাজটি করে থাকেন। আজ পড়বো না কাল পড়বো এই ভেবে পড়া জমিয়ে রাখে অনেক শিক্ষার্থী। এভাবে তার পড়াগুলো জমে যায়। পরে আর সেই পড়াগুলো শেষ করা হয়ে উঠে না। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহাদুল ইসলাম বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার পর হাতে সময় থাকে মাত্র তিন মাস। এই সময় পড়া জমিয়ে রাখলে হবে না। দিনের পড়া দিনেই শেষ করতে হবে। অবহেলা করলে তার ফলাফল পরীক্ষার হলে ভোগ করতে হয়।

৭. ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার: তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাদের অনেক সময় ব্যয় করেন ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন ডিভাইসে। এটি একজন শিক্ষার্থীর জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রযুক্তি আমাদের অনেক উপকার করে। কিন্তু  প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের মনোযোগ নষ্ট করে দেয়। ডিভাইসের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে না, তবে তা সীমিত রাখাই ভাল।

৮. অনুশীলনের অভাব: ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি আসনের পেছনে অনেক প্রতিযোগী থাকেন। চান্স পাওয়ার জন্য শুধু ভাল পরীক্ষা দিলেই হবে না। অন্যদের থেকে ভাল পরীক্ষা দিতে হবে। আর তার জন্য নিতে হবে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি। একজন শিক্ষার্থী যদি পর্যাপ্ত অনুশীলন গ্রহণ করে তবে তার মধ্যে যে আত্নবিশ্বাসহীনতা থাকে তা কেটে যায়। এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিউল হক বলেন, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরপরই পড়া শুরু করতে হবে। অনুশীলন শুরু করতে হবে প্রথম দিন থেকেই। প্রতিটি বিষয়ে পর্যাপ্ত মনোযোগ দিতে হবে। 

৯. অন্যের পছন্দে বিষয় মনোনীত করা: ভর্তি পরীক্ষার পর অনেক শিক্ষার্থীই তার বন্ধু কিংবা পরিচিত কোন ভাইয়ের পরামর্শ কিংবা ইচ্ছানুযায়ী বিষয় নিয়ে ভর্তি হন। যার ফলে দুই-তিন সেমিস্টার শেষ হবার পর কাঙ্খিত ফলাফল না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন তারা। নিজের যে বিষয়ে ভাল লাগে সেই বিষয়ে পড়ার পরামর্শ দিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম বলেন, এখন অনেকে ভিন্নধর্মী বিষয় নিয়ে বেশি পড়তে চান। কিন্তু পরিবাররের চাপে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বিষয়গুলো নিয়ে পড়তে পারেন না। এমন অবস্থায় অন্যের মত দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিষয় নিয়ে পড়াটাই উত্তম।

১০. অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে মনোযোগ বেশি দেওয়া: ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য হাতে সময় থাকে খুব সীমিত। তাই এই সময়টাতে অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে মনোযোগ কম দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে বেশি মনোযোগ দেয়া দরকার। পড়তেও হয় বাছাই করে। আগের বছরের প্রশ্ন দেখলে এ বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই যা করে না।। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইশরাত জাহান দিশা বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় কিছু বিষয় বারবার আসে। শুধু একটু ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে। সেগুলোর দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। 


সর্বশেষ সংবাদ