মালয়েশিয়া

ফের বেড়েছে লকডাউন, দেশে ফিরতে চায় ৬ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের দাপটে কাঁপছে মালেশিয়া। শুক্রবার নতুন করে দেশজুড়ে লকডাউনের সময়সীমা ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে দেশটির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ৬ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর। তাদের অনেকেই এখন দেশে ফিরতে চাইছেন। এজন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মালয়েশিয়া জুড়ে গত ১৮ মার্চ থেকে লকডাউন চলছে। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়ার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হওয়ায় বেশি বেকায়দায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। নিত্যপণ্যের সংকটেও পড়েছেন অনেকে। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে তাদের মাঝে।

গোটা মালয়েশিয়া কার্যত ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। শহরের রাস্তা জনমানবশূন্য। প্রাণঘাতি করোনার কারণে সর্বসাধারণের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে আনতে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। এসময় যেসব শিক্ষার্থী পার্টটাইম চাকরি করে তাদের পড়তে হচ্ছে আর্থিক সংকটে।  

এ কারণে শিক্ষার্থীদের অনেকেই দেশে ফিরতে চান। কিন্তু দেশটিতে লকডাউন ও বিমান চলাচলে বিধি নিষেধের কারণে তারা দেশে ফিরতে পারছেন না। তারা বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করার জন্য হাইকমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এজন্য হটলাইনও চালু রয়েছে।

ইউনিভার্সিটি মালয়ার বাংলাদেশি এ গবেষক খালেদ শুকরান জানান, চিকিৎসাকর্মীরা তাদের বাড়িতে না গিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। হাতে গুনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এই পরিস্থিতি প্রতিরোধ ও মোকাবিলা করতে নির্দেশিকা নিয়মিতভাবে জানানো হচ্ছে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে খোঁজ নেওয়া হলেও ইউনিভার্সিটি মালয়ার বিদেশি শিক্ষার্থীদের কোনো খোজঁ নেয়া হচ্ছে না। বিদেশি শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবার নিয়ে রয়েছেন উৎকন্ঠায়। তিনি জানান, মালয়ার বিদেশি শিক্ষার্থীরা পার্টটাইম, ফ্রিল্যান্স জব করে আনুসাঙ্গিক খরচ মিটাত সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে তারা কি করবে সেটাও সংশ্লিষ্টরা দেখতে হবে।

এদিকে বৃহস্পতিবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, যখনই পরিস্থিতি তৈরি হবে তখনই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আটকা পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে এ কথা জানান। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিরা আটকা পড়ে আছেন। খুব শিগগিরই তাদের সবাইকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।

ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়ার বিএস ইউ এমের সভাপতি জহিরুল ইসলাম জানান, ‘বিএস ইউ এম সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলটি দেশটিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশিদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে তাদেরকে উদ্বিগ্ন না হয়ে নিজ নিজ বাসস্থানে নিরাপদে থাকতে বলা হচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী মালয়েশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ২২৯ এবং মৃত্যু হয়েছে ৬৭ জনের। ইতিমধ্যে দেশটিতে অবস্থানরত ১২ বাংলাদেশি কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

 

বাংলাদেশ দূতাবাস কোনো খোঁজ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করছে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি অনেক ছাত্র। এ বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, দূতাবাস থকে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন সেবা দেয়া হচ্ছে। দূতাবাস কর্মকর্তারা পালাক্রমে ডিউটি দিচ্ছেন। আমরা রাজধানিসহ অন্যান্য শহরে অবস্থানরত সবার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। যেই সমস্যা নিয়ে ফোন করছেন তাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।"


সর্বশেষ সংবাদ