দেশে করোনা রোধে প্রবাসী শিক্ষক-শিক্ষার্থী-গবেষকদের ৮ পরামর্শ

বাংলাদেশে করোনার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও অধ্যাপনায় নিয়োজিত শিক্ষক ও গবেষকরা। দেশে করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে আশু পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারের প্রতি বেশকিছু পরামর্শও দিয়েছেন তারা।

শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে তারা এই মুহূর্তে করণীয় কয়েকটি সুপারিশ করেছেন। অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, কানাডা, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত ১০৪ জন বাংলাদেশি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষক এই বিবৃতি পাঠান।

যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেশে কমিউনিউটি ট্রান্সমিশন সীমিত করার জন্য বিভিন্ন পদেক্ষেপ নিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শুধু লকডাউন করে নয়, বরং সম্ভাব্য আক্রান্ত রোগীকে খুঁজে বের করে, পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শনাক্ত করে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমেই একে মোকাবেলা করা সম্ভব।

ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুসরণ করে আরো বড় পরিসরে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে বিদ্যমান ২৯ এবং প্রক্রিয়াধীন আরো ১০০টি ভেন্টিলেশন সুবিধা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলেও উল্লেখ করেছেন।

উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থা করা, চিকিৎসা-পরিচর্যা ও সত্কারের বিষয়ে গাইডলাইন করা, চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিতদের যথেষ্ট পিপিইর ব্যবস্থা করা, স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গঠন, নিম্নবিত্তদের বিনা মূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করা, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালানো, পরিস্থিতি মোকাবেলা টিমে গবেষকদের যুক্ত করা এবং ভাইরাসের বিস্তার ও রোগী শনাক্ত সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকরা।

বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি এই শিক্ষক-শিক্ষার্থী-গবেষকদের বিবৃতিতে দেয়া সুপারিশগুলো হলো-

১। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত রোগ-নির্ণয় কিট, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র এবং ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা। করোনার উপসর্গ উপস্থিতি হওয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসা, পরিচর্যা এবং মৃত-ব্যক্তিদের সৎকারসহ সমস্ত প্রক্রিয়ার সহজবোধ্যভাবে গাইডলাইন আকারে প্রকাশ ও প্রচার নিশ্চিত করা।

২। চিকিৎসার সঙ্গে সম্পর্কিত চিকিৎসক, নার্সসহ সকলের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (চচঊ) সমেত পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিশ্চিত করা। এছাড়াও যেসব স্বেচ্ছাসেবক, মাঠকর্মী, এবং কর্মচারী মাঠপর্যায়ে কাজ করবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

৩। এ কাজে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে প্রস্তুত করা ও তাদের কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। অনেক মানুষ বিশেষত তরুণ এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনের কর্মীবৃন্দ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছা পোষণ করেছে। তাদেরকে নিরাপত্তা বিষয়ক ট্রেনিং প্রদান ও তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।

৪। শ্রমিক, কর্মজীবীসহ নিম্নবিত্ত মানুষদের জন্য আপত্কালীন সময়ে বিনা মূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ করা।একই সঙ্গে কঠোরভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম নিয়ন্ত্রণ করা।

৫। লকডাউনকৃত এলাকায় সকল মানুষের মানবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা। করোনায় আক্রান্ত রোগী যাতে কোন ধরনের সামাজিক হয়রানি/বৈষম্যের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা।

৬। সামাজিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ যেমন লেখক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী, আলেম-ওলেমাসহ বিভিন্ন ধর্মের বিদ্বানদের দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো। মানুষের মধ্যে আস্থা অর্জন ও দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তথ্য আদান-প্রদানের সমস্ত বাধা দূর করা।

৭। বিভিন্ন শাখার গবেষকদের একত্রিত করে জরুরি ভিত্তিতে সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার নিমিত্তে টিম তৈরি করা। যারা দেশীয় বাস্তবতায় দেশের অভ্যন্তরে কিভাবে পিপিই, অস্থায়ী বিশেষায়িত হাসপাতাল, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র থেকে শুরু করে কী পদ্ধতিতে সংগরোধ (কোয়ারেন্টাইন) করা যায়, সর্বোপরি সার্বিক বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেবেন। এই পুরো প্রক্রিয়াটি অভিজ্ঞ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একজন গবেষকের তত্ত্বাবধানে সমন্বিত করা।

৮। ইতিমধ্যে ড. বিজন কুমার শীল এবং তার গ্রুপ নিজস্ব উদ্যোগে করোনা নির্ণয় পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করছেন। দেশের গবেষকদের অনেকেই করোনা সম্পর্কিত গবেষণা কাজে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। দেশের বাইরের গবেষকদের অনেকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত আছেন। তাঁদের সহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষকদের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আশু এই মহামারি মোকাবিলা করা সম্ভব হতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ