দায়িত্ব নিয়ে বলছি- ফেরদৌস মুজিব সৈনিক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি

সুভাষ দে (বায়ে); ডা. ফেরদৌস (ডানে)
সুভাষ দে (বায়ে); ডা. ফেরদৌস (ডানে)  © সংগৃহীত

নিউইয়র্কের খ্যাতিমান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার দেশের মানুষকে সেবা দিতে এসে ঢাকায় বিমানবন্দরে নেমেই হেনস্তার মুখে পড়েছেন। রবিবার (৭ জুন) বিকালে কাতার এয়ারওয়েজের চার্টার্ড ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। এরপর সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যায়।

যদিও তার করোনা নেই এই মর্মে নিউইয়র্কের অন্য একজন চিকিৎসকের সনদ তার কাছে রয়েছে। এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু অতি উৎসাহী তাকে বঙ্গবন্ধুর খুনী খন্দকার মোশতাকের স্বজন বলে দাবি করেন। তবে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক একাউন্ট এবং পেজে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন ডা. ফেরদৌস। এছাড়া অনেকে তার পক্ষে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

চলমান বিতর্কের মুখে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুভাষ দে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘৯০ এর দশকে চট্টগ্রাম মেডিকেলের ছাএলীগের রাজনীতিতে যারা জীবন যৌবনের অনেকখানিই বিসর্জন দিয়েছেন, ডাক্তার ফেরদৌস তাদেরই একজন। আমি ছাএলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নিতেই বলছি, ডাক্তার খন্দকার ফেরদৌস একজন মুজিব আদর্শের সৈনিক।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আওয়ামী শাসন আমলে তার বিরুদ্ধে যে সিন্ডিকেট অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হবে না। মানবসেবার যে উদ্দেশ্য নিয়ে সে নিজের জন্মভূমিতে এসেছে কোন ষড়যন্ত্রই তার বিরুদ্ধে সফল হবে না। আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ প্রাক্তন ছাএলীগাররা তার সাথে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। জয় বাংলা।’

অপর একটি স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘মানুষের জন্য কাজ করলেও দেখি বিপদ। ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার আমার সহপাঠী। চট্টগাম মেডিকেল কলেজ ছাএ রাজনীতির অনেক সুসময় দুঃসময়ে আমাদের ৩২তম ব্যাচের মুজিব আদর্শের সৈনিক ডাক্তার ফেরদৌসকে কারা বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে আমি জানি না। শিবির বা বিএনপির সাথে ওর কোনো কালেই সম্পর্ক ছিল না, এখনও নেই।’

তিনি লেখেন, ‘মানব সেবায় ওর অবদানে আমরা গর্ব বোধ করি। বেনামি অনলাইন পএিকার এসব আজগুবি রিপোর্ট সেবামূলক কাজে বাধার সামিল। সুদূর আমেরিকায় থেকেও সে যেভাবে দেশের মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে, সেটা আসলেই অনুকরণীয়। এসব অনলাইন পএিকার বিরুদ্ধে ভুল রিপোর্ট ছাপিয়ে কারও মানহানি করার জন্য অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’

এর আগে বিতর্কের অবসান ঘটাতে নিজের ফেসবুক একাউন্টে ডা. ফেরদৌস জানান, ১৯৯১ সালের পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে শিবির-ছাত্রদলের তোপের মুখে ছাত্রলীগের শ্লোগান দিয়েছি। শিবিরের মার খেয়ে ক্যাম্পাসও ছাড়তে হয়েছিল। পরে শিবিরের সাথে যুদ্ধ করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিতও করেছি। আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম। আমার সম্পর্কে যদি এই অপবাদের একটাও প্রমাণ করতে পারে, তাহলে যে শাস্তি দিবে আমি তা মাথা পেতে নেব।

এদিকে, প্রবাসী ব্লগার অমি রহমান পিয়াল জানিয়েছেন, ডাক্তার ফেরদৌস ছাত্রলীগ করছে, ক্যাম্পাসে অমি তার সাক্ষী। সে মানুষের জন্য কাজ করতেছে সেটাই দেখছি, আর তাই তারে প্রমোট করছি। জানা গেছে, পিয়াল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে তার সিনিয়র ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।

রবিবার (৭ জুন) রাতে ডা. ফেরদৌস তাঁর ফেসবুক একাউন্টে ‘ভালো থেকো বাংলাদেশ’ শিরোনামে জানান, দেশে আসার জন্য যখন এয়ারক্রফটে চড়ে বসি তখনও ভাবিনি, আমার জন্য এতো লজ্জাজনক তিক্ত অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে। যা দেশের মানুষের কাছ থেকে আমার প্রাপ্য ছিল না। এমন কোনো অন্যায়, অপরাধ আমি করিনি। আমি দেশের মন্ত্রী এমপি কিংবা উচ্চপদে আসীন হতে চাইনি।

তিনি জানান, কোভিড-১৯ নিয়ে গত তিনমাস যুক্তরাষ্ট্রে অমানুষিক পরিশ্রম করেছি। দেশেও এসেছি দেশের মানুষের কোনো কাজে নিজেকে লাগানো যায় কিনা সেই উদ্দেশ্য নিয়ে। কেউ আমার সেবা না চাইলে আমি আবার যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবো। আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ। এই দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমি ডাক্তার হয়েছি। দায়িত্ববোধ থেকেই বারবার দেশে আসি। মানুষের জন্য কাজ করি। কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে আসি না। এই দেশ থেকে ডাক্তারি পাশ করে বিদেশ গিয়ে ৯০ শতাংশই দেশে আসেন না। আমার অপরাধ আমি দেশে বারবার আসি।

প্লেন থেকে নেমেই জানলাম আমাকে বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাকের ভাতিজা উপাধি দেয়া হয়েছে। আরেক খুনি রশিদের খালাতো ভাই বানানো হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, আমি নাকি পলাতক তারেক রহমানকে নিয়মিত টাকা পয়সা দেই। এইসব নিয়ে আসলেই আমি বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমার বাড়ি কুমিল্লা, নামের সাথে খন্দকার আছে। তাই হয়তো মোস্তাক-রশিদ গংদের আত্মীয় উপাধি দেয়া হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া হলে হয়তো গোলাম আযমের আত্মীয় বানানো হতো। গোপালগঞ্জ বাড়ি হলে হয়তো বলতো আমি মুফতি হান্নানের আত্মীয়। যারা এইসব অপবাদ দিচ্ছেন জানিনা তাদের আমি কি ক্ষতি করেছি। আমি যা না আমারে তা বানিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু আমি যা ছিলাম তা বলছেন না কেন আপনারা?

১৯৯১ সালের পর চট্টগ্রাম মেডিকেলে শিবির ছাত্রদলের তোপের মুখে ছাত্রলীগের শ্লোগান দিয়েছি। শিবিরের মা’র খেয়ে ক্যাম্পাসও ছাড়তে হয়েছিল। শিবিরের সাথে যুদ্ধ করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিতও করেছি। এই বিষয়ে তথ্য নেয়া খুব সহজ। আপনারা চাইলেই খবর নিতে পারেন। আমরা যখন শিবিরের বিরুদ্ধে ফাইট করেছি তখন আজকের সমালোচকরা কই ছিলেন আমার জানা নাই। বেশি কথা বলতে চাই না। আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম। আমার সম্পর্কে যদি এই অপবাদের একটাও প্রমাণ করতে পারে তাহলে যে শাস্তি দিবে আমি তা মাথা পেতে নেবো।

পরিশেষে তিনি বলেন, আর যারা অপবাদ দিচ্ছেন তাদের প্রতি কোনো অনুরোধ কিংবা অভিযোগ নেই। শুধু এইটুকু বলবো, নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। আমার সম্মানহানির এই অপচেষ্টার জন্য রোজ হাশরের ময়দানে আপনাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। নিয়তির বিচার অনেক কঠিন। এটা কাউকেই ছাড়বে না।


সর্বশেষ সংবাদ