১০ শতাংশ ভোট না পাওয়া প্রার্থীদের পদ নিয়ে অনিশ্চয়তা

  © ফাইল ফটো

নানা জটিলতা এবং অনিশ্চয়তা কাটিয়ে অবশেষে সম্পন্ন হয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল। অনেক নাটকীয়তার পর কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ইকবাল হোসেন শ্যামল। এখন চলছে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন নিয়ে তোড়জোড়।

জানা গেছে, ছাত্রদলের শীর্ষ দুই নেতৃত্ব নির্বাচনের পর দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সে নির্দেশনা অনুযায়ী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে কাজ চলছে বলেও দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন।

তবে কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর না মেলায় তৈরি হয়েছে জটিলতা। সূত্র জানিয়েছে, ষষ্ঠ কাউন্সিলে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে যেসব শর্ত দেওয়া ছিলো, সেগুলো নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে আলোচনা। ওই শর্তগুলো বাস্তবায়ন করলে কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়া অনেক নেতা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পাদ পাবেন না।

সর্বশেষ ষষ্ঠ কাউন্সিলে প্রার্থীর যোগ্যতার পাঁচ নম্বর শর্ত হিসেবে বলা হয়, ‘যদি কোন প্রার্থী কাস্টিং ভোটের ১০ শতাংশ ভোট না পায়, তাহলে পরবর্তী কমিটিতে কোনভাবেই অন্তর্ভূক্ত হতে পারবে না।’ এই শর্ত নিয়েই ছাত্রদলে নানা ধরণের আলোচনা শুরু হয়েছে।

ছাত্রদলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ কাউন্সিলে ১০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন মাত্র ছয় জন প্রার্থী। এরমধ্যে সভাপতি পদে দুজন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে চার জন। বাকিরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাবেন কি না তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলে ১৮৬ ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন ফজলুর রহমান খোকন। আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ইকবাল হোসেন শ্যামল। তিনি পান ১৩৯ ভোট। নতুন সভাপতি খোকনের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাজী রওনুক ইসলাম শ্রাবণ ইসলাম পান ১৭৮ ভোট।সাধারণ সম্পাদক শ্যামলের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাকিরুল ইসলাম জাকির পান ৭৮ ভোট।

জানা গেছে, নির্বাচনে ৫৩৩ কাউন্সিলরের মধ্যে ৪৮১ জন ভোট প্রদান করেছেন। কাউন্সিলে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মোট প্রার্থী ছিলেন ২৮ জন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ৯ জন এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ১৯ জন।

এরমধ্যে ১০ শতাংশ ভোট পেতে ব্যর্থ হওয়ায় ২২জনের পদ পাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে কানাঘুষা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এরমধ্যে কয়েকজন প্রার্থী শূন্য ভোট পেয়েছেন। এছাড়া  চার ভোট কিংবা ১২ ভোট পাওয়া প্রার্থীও রয়েছেন একাধিক। তারা পদ পাবেন কি না সেটা নিয়েই চলছে নানান আলোচনা।

তবে প্রার্থী হওয়া সবাইকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখার পক্ষে ছাত্রদলের অনেক নেতা। তাদের মতে, ১০ শতাংশ ভোট পেলেই যে পদ পেতে হবে এমন শর্ত রাখা যৌক্তিক নয়। তাদের সবাই ছাত্রদলের দুঃসময়ে সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন। দলে ঐক্যৈর স্বার্থে সবাইকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা উচিৎ বলে তারা মনে করেন।

ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ছাড়া ১০ শতাংশের বেশি ভোট পাওয়া একমাত্র সভাপতি প্রার্থী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না আমার জানা নেই। তবে সংগঠনের স্বার্থে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সেটাই মেনে নেব।’

এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা দ্রুত কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য কাজ করছি। তবে যেসব শর্ত নিয়ে কথা উঠছে, এগুলো নিয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। শিগগিরই দলের সঙ্গে বসে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ 

জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জাসান রিপন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শর্ত যা ছিলো সেটা কঠোরভাবে মানা হবে। এতে কোন ছাড় নেই। শর্ত অনুযায়ীই সবার বিষয়ে বিবেচনা করা হবে। কারণ সবাই দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে আছে, প্রচারণা চালানোরও সুযোগ পেয়েছে। তারপরও শূন্য, চার কিংবা ১২ ভোট পাওয়াটা গ্রহণযোগ্য নয়।’

শুধু এ শর্তই নয়, প্রার্থীর যোগ্যতার চার নম্বর শর্তে  উল্লেখ করা হেয়েছে, ‘প্রার্থীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে।’ এ শর্ত পূরণ করতে গেলে ছাত্রদলের ২৫ থেকে ৩০ জন নেতা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়বেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলেও জানিয়েছেন অনেকে। পদ পাওয়া নিয়ে এই বিবাহিত পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য তদবির চালাচ্ছেন তারা।

দীর্ঘ ২৮ বছর পর সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব। এর আগে ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল ১৪ সেপ্টেম্বর। তার মাত্র দুদিন আগে সাবেক কমিটির এক নেতার করা মামলায় কাউন্সিলের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ আসে। ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে এখনো চলছে আইনি জটিলতা।


সর্বশেষ সংবাদ