প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে ছাত্রলীগ

  © টিডিসি ফটো

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতারা। তা না করা হলে একযোগে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। সেখানে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, এ কমিটি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেখবেন। সদ্য ঘোষিত কমিটিতে যদি কোন ত্যাগী নেতা বাদ পড়ে যায় তাহলে সেটি বিবেচনা করা হবে।

জানা যায়, সম্মেলনের এক বছর পর সোমবার ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। ছাত্রলীগের সদ্যগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে আপত্তি তুলতে গিয়ে পদ পাওয়া নেতাদের মারধরের শিকার হয়েছেন পদবঞ্চিতরা। সোমবার সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে আসলে এ ঘটনা ঘটে। ফলে সংবাদ সম্মেলন পণ্ডু হয়ে যায়। এসময় পদবঞ্চিতরা দাবি করছেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে ‘বিবাহিত ও অছাত্রদের’ কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। পরে মঙ্গলবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে পদবঞ্চিতরা।

এসময় গত কমিটির প্রচার সম্পাদক সাইফুদ্দিন বাবু বলেন, যারা বিগত সময়গুলোতে সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের একটি বৃহৎ অংশকে বাদ কিংবা সঠিক পদে মূল্যায়ন করা হয়নি। যারা নিষ্ক্রিয়, সাবেক চাকরিজীবী, বিবাহিত, অছাত্র, গঠনতন্ত্রের অধিক বয়স্ক, বিভিন্ন মামলার আসামী, মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে যারা ছাত্রলীগ থেকে আজীবন বহিষ্কার হয়েছিল তাদেরকেই ছাত্রলীগে পদায়ন করা হয়েছে। এটা আমাদের ব্যথিত করেছে। তিনি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানায়। এসময় দাবি না মানলে অনশন ও গণপদত্যাগের ঘোষণা দেন নতুন কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপ সম্পাদক নিপু তন্বী। তিনি শামসুন নাহার হলের সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর সদস্য।

রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বিএম লিপি আক্তার বলেন, আমি রোকেয়া হলের সভাপতি ও ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদের দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় আমাকে ছাত্রলীগের উপ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে। আমি ছাত্রলীগের সেক্রেটারিকে জিজ্ঞেস করেছি যে, কোন ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে আপনি আমাকে ছাত্রলীগের উপ সম্পাদক পদ দিয়েছেন। তিনি উত্তর দিয়েছেন, ডাকসুর গুরুত্বপূর্ণ পদে আছি বলে আমাকে এই পদ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যাপারটা এমন আপনি এবার এমপি নির্বাচন করেছেন, এবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করেন। আমার প্রশ্ন হলো-আপনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকেও কেন ডাকসু নির্বাচন করলেন।

এসময় তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছে তারা শোভন-রাব্বানী কমিটির ৮-১০ মাস রাজনীতি করেছে, তাদের পেছনে-পেছনে ঘুরেছে। তাদের মেকানিজমে যারা তাদেরকেই কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। আগের দুই কমিটির ত্যাগী কাউকে রাখা হয়নি। তদন্ত কমিটির ব্যাপারে তিনি বলেন, যারা মধুর ক্যান্টিনে মারধর করেছে তাদেরকেই তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটি আমরা মানি না। ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সরাসরি নির্দেশেই হামলা চালানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে নবগঠিত কমিটির উপগ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ফরিদা পারভিন, উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক তিলোত্তমা শিকদার, উপ-পাঠাগার সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা, উপ-ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক শ্রাবনী শায়লা, উপ-আপ্যায়ন সম্পাদক খাজা খয়ের সুজন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তানভীর সৈকত, আইন অনুষদ ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল শুভ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সদ্য কমিটিতে পদবঞ্চিতদের বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, কমিটিতে যদি কোন ত্যাগী নেতা বাদ পড়ে যায় তবে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিষয়টি জানাব। তিনিই বিষয়টি দেখবেন। হামলার বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বনী বলেন, হামলার ঘটনাটি অনাকাক্সিক্ষত। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ