রুপালি চরে সোনালী জীবনের স্বপ্ন

আদর্শ মহিলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ
আদর্শ মহিলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ

বিস্তীর্ণ নদী। মাঝখানসহ আশেপাশে চর। ভাগ্যবিড়ম্বিত, অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষের বসবাস এ চরে। খরা, জরা এবং বৈরী প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা চরের এসব মানুষের কাছে বিদ্যু, টেলিভিশন ও পাকা সড়ক- এসবই ছিল স্বপ্ন। স্বপ্ন নারী শিক্ষাও। গত কয়েক বছর ধরে সেই চরে শিক্ষার বিপ্লব ঘটছে। গল্পটা কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চর অঞ্চলের।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই এলাকার নারী শিক্ষা প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে চরশৌলমারী আদর্শ মহিলা মহাবিদ্যালয়। উপজেলা থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে হলহলিয়া নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে চরশৌলমারী আদর্শ মহিলা মহাবিদ্যালয় অবস্থিত। এই অঞ্চলের নারীদের পড়াশোনার একমাত্র প্রতিষ্ঠান এটি। ২০১৩ সালে মহাবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে দ্বাদশ শ্রেণিতে ২৭ জন ও একাদশ শ্রেণিতে ৩৩ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা পাশাপাশি বাল্যবিবাহ রোধ, বৃক্ষরোপণসহ সমাজের নানা কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন তারা।

চরশৌলমারী গ্রামের শিক্ষক মো. মহিরউদ্দিন জানান, চরাঞ্চলে মেয়েরা এসএসসি পাশ করলে অভিভাবকরা তাদের বিবাহ দিয়ে দিতো। মহাবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে মেয়েরা এইচএসসি পাশ করে উচ্চ শিক্ষায় ডিগ্রি অর্জনের জন্য দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে ডিগ্রি অর্জন করে চারি করছেন।

এক ছাত্রীর অভিভাবক হাছেন আলী বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ মেয়েদের দূরে রেখে পড়াশোনা করানো সম্ভব না। বাড়ির কাছে কলেজ হওয়ায় আমাগো মেয়েরা আইয়ে পড়ার সুযোগ পাইতেছে।’

চরশৌলমারী আদর্শ মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. হুমায়ুন কবির বলেন, উপজেলায় মাত্র দুইটি মহিলা কলেজ রয়েছে আমার কলেজটি উপজেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে চরাঞ্চলে অবস্থিত। এখানের নারী শিক্ষার প্রসারে কলেজটি একাডেমিক স্বীকৃতি পেয়েছে। কলেজে শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকায় বেশি ছাত্রী ভর্তি নেওয়া সম্ভব হয়না। ইতোমধ্যে ৪তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের উদ্বোধন করা হয়েছে। ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হলে চরাঞ্চলের নারী শিক্ষার আরো প্রসার ঘটবে।

চরশৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কে এম ফজলুল হক মণ্ডল বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রী অভিভাবকদের বুঝিয়ে মেয়েদের বিনা বেতনে পড়াশোনা করায়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে নারী শিক্ষা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন প্রতিষ্ঠানটি।