বীর-জারাকেও হার মানাল কলেজ শিক্ষকের প্রেমকাহিনী

মুক্তি পেয়ে ওয়াঘা সীমান্তে মায়ের সঙ্গে হামিদ
মুক্তি পেয়ে ওয়াঘা সীমান্তে মায়ের সঙ্গে হামিদ  © পিটিআই

বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন ২৭ বছরে। ফিরলেন ঠিক ছ’বছর পর; ৩৩-এ। সেদিনের ফ্রেস মুখ আজ দাড়িতে ঢাকা। চেহারাটাও এঁকে-বেকে গেছে।  গল্পটা কলেজ শিক্ষক হামিদ আনসারির। ঠিক শাহরুখ খানের ‘বীর-জারা’র মত। সীমান্তের এ পারে একজন রইল, যে তোমার জন্য প্রাণও দিতে পারে— স্টেশনে দাঁড়িয়ে বীরপ্রতাপ সিংহের বলা কথাগুলো সিনেমায় জারা হায়াত খানের পৃথিবী ওলটপালট করে দিয়েছিল। পাকিস্তানে ফিরে জারা তার বান্ধবী শাব্বোকে বলেছিল, সে বাড়ির ঠিক করা বিয়ে করতে চায় না। শাব্বো বীরকে ফোন করে বলুক, সে যেন এসে জারাকে নিয়ে যায়!

হামিদও তার জারাকে উদ্ধার করতে পাকিস্তানে ছুটে গিয়েছিলেন।  পর্দার ‘বীর’কে ২২ বছর পাকিস্তানের জেলে কাটাতে হয়েছিল। আর হামিদ কাটাল ছয় বছর পর। অবশেষে বাবা-মা, ভারত ও পাক বিদেশ মন্ত্রক, ভারত ও পাক সংবাদমাধ্যম, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীদের নিরন্তর চেষ্টায় দেশে ফিরলেন আজ।  

পুরো গল্পটা জানতে একটু পেছনে ফিরতে হবে। হামিদের পরিচিত ব্যক্তিরা বলছেন, আনসারি পাকিস্তানে এক নারীর প্রেমের টানে সে দেশে ছুটে গিয়েছিলেন। ওই নারীর সঙ্গে হামিদ আনসারির অনলাইনে পরিচয় হয়েছিল। হামিদের ভালবাসার মেয়েটি থাকতেন আফগান সীমান্ত লাগোয়া খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কোহাট শহরে। ২০১২ সালের শেষার্ধে মেয়েটি জানালেন, বাড়ি থেকে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়েছে। হামিদ এসে যেন তাঁকে উদ্ধার করেন। পরে এই কথোপকথনের নথি ফেসবুক ইনবক্সে দেখতে পান হামিদের মা। এ দিকে পাখতুনখোয়া এলাকাটা পারিবারিক মর্যাদার নামে খুনখারাপির জন্য কুখ্যাত। মেয়েটির মরিয়া আর্তি শুনে হামিদ ঠিক করে ফেললেন তিনি পাকিস্তান যাবেন।

ইতোমধ্যে হামিদের সঙ্গে সম্পর্কের কথা মেয়ের বাড়িতে জানাজানি হয়েছে। মেয়েটির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ। তার সঙ্গে আর যোগাযোগই করতে পারছেন না হামিদ। কোহাটের আর একটি মেয়েকে ফেসবুকে খুঁজে বের করে কোনও তথ্য পাওয়া যায় কি-না, জানার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। এ দিকে ভিসাও জোটে না!

আনন্দবাজারের খবর- হামিদ তার কর্তব্য ঠিক করেই নিয়েছিলেন। এজন্য ফেসবুকে আলাপ করেন পাকিস্তানের কয়েক জন যুবকের সঙ্গে। তারা বুদ্ধি দিলেন, আফগান সীমান্ত দিয়ে চুপিসারে পাকিস্তানে ঢোকা যায়। হামিদ কাবুলের পর্যটন ভিসা নিলেন। বাড়িতে বললেন, কাবুল বিমানবন্দরে চাকরি পেয়েছেন। কাবুল থেকে সত্যিই বেআইনি নথি বানিয়ে হামিদ পাকিস্তানে ঢোকেন। কোহাটের একটি হোটেলে হামজা খালিদ নাম নিয়ে ঘরও বুক করেন। ১৪ নভেম্বর, ২০১২, ওই হোটেল থেকেই ধরা পড়েন তিনি।

ফেসবুকের চ্যাট রেকর্ড থেকে জানা যায়, হামিদের মাথায় শাহরুখের ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবিটার প্রভাবও ছিল তুমুল। তিনিও ভেবেছিলেন, মেয়ের বাবাকে রাজি করাতে পারবেন। সে সুযোগ পাননি। ভারতের এক সাংবাদিক মেয়েটির বাবাকে ফোন করেছিলেন পরে। সাংবাদিকটির দাবি, ভদ্রলোক তাকে জানান, মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। হামিদের পরিণতির কথা মেয়েটি জেনেছেন কি না, জানা যায়নি। ফলে বীর-জারার মতো পুনরায় কোনো দিন হবে কি-না, বলা যাচ্ছে না সেটাও। 

সূত্রের তথ্য, মুম্বাই কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ফৌজিয়া আনসারি ও ব্যাংকার নিহাল আনসারির ছোট ছেলে হামিদ আনসারি। ২০১২ সালে ৩৩ বছর বয়সী হামিদ আনসারি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। (বিবিসি ও আনন্দবাজার অবলম্বনে)


সর্বশেষ সংবাদ