শিক্ষার্থীদের কাঁদিয়ে হারিয়ে গেল চরের ‘বাতিঘর’ (ভিডিও)

বিলীন হয়ে যাচ্ছে চরের বাতিঘরখ্যাত এস ই এস ডি পি মডেল উচ্চবিদ্যালয়
বিলীন হয়ে যাচ্ছে চরের বাতিঘরখ্যাত এস ই এস ডি পি মডেল উচ্চবিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেল মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চরাঞ্চলের বাতিঘরখ্যাত বিদ্যালয়টি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিদ্যালয়টির বেশিরভাগ নদীগর্ভে চলে যায়। আধুনিক সুযোগ-সুবিধার প্রতিষ্ঠানটি এভাবে বিলীন হতে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। কাঁদতে থাকেন বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। 

এর আগে বুধবার (২২ জুলাই) মধ্যরাতে বিদ্যালয়টির মাঝ বরাবর দ্বিখন্ডিত হয়ে হেলে পড়ে। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে বিদ্যালয়টি নদীর দিকে আরো হেলে পড়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

২০০৯ সালে উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলবেষ্টিত বন্দরখোলা ইউনিয়নের নূরুদ্দিন মাদবরেরকান্দি এলাকায় স্থাপন করা হয় এস ই এস ডি পি মডেল উচ্চবিদ্যালয়। তিনতলা ভবনবিশিষ্ট এ বিদ্যালয়ে যখন পাঠদান শুরু হয়, তখন পদ্মা নদীর সীমানা ছিল প্রায় চার কিলোমিটার দূরে।

চরাঞ্চলে স্থাপিত এ বিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করত। বিদ্যালয়টি ছিল চরাঞ্চলের একমাত্র দৃষ্টিনন্দন তিনতলা ভবনসহ আধুনিক সুবিধাসমৃদ্ধ একটি উচ্চবিদ্যালয়।

বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সবাই চরের বাসিন্দা। মূল ভূখণ্ড এখান থেকে বেশ দূরে হওয়ায় চরাঞ্চলের ছেলেমেয়েরা অন্যত্র গিয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পেত না। এ বিদ্যালয় হওয়ার পর চরের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পায়। ছোট–বড় প্রায় ২৪টি গ্রামের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল বিদ্যালয়ে।

এ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়সাল বলেন, বিদ্যালয়টি নদীতে তলিয়ে গেলে এলাকায় হয়তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে। কিন্তু এটির মতো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে না কি-না, বলা যায় না। এই বিদ্যালয়টির পাশাপাশি কাজির সুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানই পাকা ভবন। এ দুটিই আমাদের এলাকার ছেলে-মেয়েদের প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু পদ্মা আমাদের আলোর প্রতিষ্ঠান কেড়ে নিচ্ছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন জানান, পদ্মার ভাঙনে বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে যাওয়ায় চরের চার শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার অনিশ্চিত জীবন শুরু হলো।

এর আগে বন্দরখোলা ইউনিয়নের তিন নং ওয়ার্ড সদস্য মো. ইসমাইল জানান, 'বুধবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে হঠাৎ করেই বিকট শব্দ হতে থাকে স্কুলের ভবনের মধ্য থেকে। খবর পেয়ে অসংখ্য মানুষ ট্রলারে করে বিদ্যালয়টি দেখতে আসে। আমাদের সামনেই বিদ্যালয়টি মাঝখান থেকে ফাটল ধরে পেছন দিকে হেলে পরে।'

তিনি আরো জানান,'বিদ্যালয়টি মনোরম পরিবেশে একটি দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয় ছিল। গতকাল রাতে বিদ্যালয়টি ভাঙন ধরলে এলাকাবাসী আবেগে আপ্লুত হয়ে পরে।'

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, চরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ভাঙনের ঝুঁকিতে ছিল। নানা প্রতিকূলতার কারণে এটি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। এ বছর বন্যার পানি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় ও স্রোতের তীব্রতা বেশি থাকায় বিদ্যালয়টি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।

 

দেখুন ভিডিও...


সর্বশেষ সংবাদ