পেটের দায়ে স্কুল শিক্ষক বিরাম এখন দিনমজুর!

  © সংগৃহীত

যশোর সদর উপজেলার বলাডাঙ্গা গ্রামের বিএমএস নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিরাম চন্দ্র বিশ্বাস। বাড়ি সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের তোলা গোলদারপাড়া গ্রামে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের দেয়া বেতন, পাশাপাশি দু’একটা টিউশনি করে কোনো রকম চলে যেত পরিবারের দুই মেয়ে, এক ছেলে, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে।

কিন্তু করোনা যেন তার পরিবারের মাঝে কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। বর্তমানে সর্বগ্রাসী করোনা তাকে বানিয়েছে শ্রমিক। এমন পরিস্থিতিতে কখনও কারো পুকুরে জাল টেনে দিচ্ছেন, কখনো কারো ক্ষেত খামারে ৩০০ টাকা মজুরিতে কাজ করছেন তিনি। এক কথায় যখন যে কাজ পাচ্ছেন তাই করছেন।

তবে এদিকে কিছু বিপত্তি রয়েছে। পেশা শিক্ষকতা থাকার কারণে অনেকে ‘চক্ষুলজ্জায়’ তাঁকে কাজে নিতে দ্বিধাবোধ করেন। এ কারণে অনেক সময় তাঁর কাজও জোটে না। এখন এভাবেই মানবেতর দিন কাটছে মানুষ গড়ার কারিগর বিরাম চন্দ্র বিশ্বাসের।

এ বিষয়ে বিরাম চন্দ্র বিশ্বাস বললেন, ‘কী করব? ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বেঁচে তো থাকতে হবে। করোনার আগে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেওয়া বেতন থেকে সামান্য কিছু টাকা পেতাম। পাশাপাশি কয়েকটি টিউশনি করে কোনো রকমে পরিবার নিয়ে টিকে ছিলাম। করোনার পর থেকে স্কুল বন্ধ। টিউশনিও বন্ধ। এ কারণে আমাদের জীবন অচল হয়ে পড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নন-এমপিও স্কুলের শিক্ষক হওয়ায় সরকারি কোনো সহযোগিতাও পাচ্ছি না। এ অবস্থায় আমাদের বেঁচে থাকা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে অন্যের ক্ষেতে মজুরি খাটি। অন্যের পুকুরে মাছ চাষের কাজসহ মানুষ যখন যে কাজে ডাকে সেই কাজ করি। কিন্তু এখানেও সমস্যা আছে। শিক্ষকতা করার কারণে আমাদেরকে অনেক লোকে কাজে নিতে চায় না। সব মিলিয়ে খুব খারাপ অবস্থায় আমাদের দিন কাটছে।’

তাঁর প্রতিবেশী দিলিপ কুমারের বলেন, ‘বিরাম চন্দ্র বর্তমানে বাধ্য হয়েই দিনমজুরির কাজ করছেন। তবে তিনি শিক্ষক হওয়ার কারণে অনেকেই তাঁকে কাজে নিতে লজ্জাবোধ করেন। আমি নিজেই গত সপ্তাহে অন্য লোক দিয়ে পুকুরে জাল টেনেছি। কিন্তু শিক্ষক হওয়ার কারণে বিরাম চন্দ্রকে শ্রমিক হিসেবে কাজে নেওয়ার কথা বলতে পারিনি।’

এ ব্যাপারে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের যশোর জেলা শাখার সভাপতি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে নন-এমপিও শিক্ষকদের পরিবার নিয়ে টিকে থাকার জন্য নগদ প্রণোদনা দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি।’


সর্বশেষ সংবাদ