আহত ছেলেকে নিয়ে সাড়ে ৪শ কি.মি ফিরে গেলেন বাবা!

মাত্র ৩০ হাজার টাকার জন্য মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে ইমতিয়াজকে (১৫) সাভারের সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) থেকে ঠাকুরগাঁও ফিরে গেলেন বাবা জয়নুল ইসলাম।

এলাকার অনেকের মুখে হাসপাতালটির প্রশংসা শুনে গত ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে ছেলেকে নিয়ে সিআরপিতে আসেন তিনি। তার ধারণা ছিল এ হাসপাতালে চিকিৎসা সম্পূর্ণ ফ্রি। সেই ধারণা নিয়ে এসে হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। দুর্ঘটনায় আহত ইমতিয়াজের সার্বিক অবস্থা দেখে হাসপাতাল থেকে জানানো হয় ১০০ দিনের চিকিৎসা বাবদ দেড় লাখ টাকা এবং এর বেশিও খরচ হতে পারে। তবে পর্যায়ক্রমে।

ছেলেকে দ্রুত ভর্তি করাতে ওইদিনই জয়নুল ৩০ হাজার টাকা জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু ওই পরিমাণ টাকা তার কাছে না থাকায় তিনি আর ভর্তি করাতে পারেননি। পরে ওই রাতেই গুরুতর আহত ছেলেকে নিয়ে ফিরে যান ঠাকুরগাঁওয়ে।

পরদিন ভর্তি করেন ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে। ইমতিয়াজ বর্তমানে সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের ৬ তলার ৩০৩ নম্বরে রুমের ৯ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। সেখানে মেডিসিন বিভাগের ডাক্তার তোজ্জাম্মেল হকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে সে।

ইমতিয়াজ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৯নং রায়পুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের জয়নুল ইসলামের ছেলে। স্থানীয় বাকসিড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল সে। পরীক্ষার একদিন আগে অর্থাৎ ২ ফেব্রুয়ারি সকালে উপজেলার ফকদনপুর পটুয়া এলাকা থেকে প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে বিদায় নিয়ে বাইসাইকেলে বাড়ি ফিরছিল ইমতিয়াজ। হাসপাতালের বিছানায় এখন সময় কাটছে তার শরীরের যন্ত্রণা ও পরীক্ষা না দিতে পারার কষ্টে।

ইমতিয়াজের বাবা জয়নুল ইসলাম এলাকায় ভ্রাম্যমাণ দর্জি বিজ্ঞানের প্রশিক্ষক। কোনো রকমের সংসার চলে তাদের।

জয়নুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার টাকা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামসহ এলাকার অনেকেই। অভাবের সংসারে ছেলের চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। দুর্ঘটনায় তার ঘাড়ের হাড় ভেঙে গেছে। এছাড়া হা-পা কিছুই নড়াতে পারছে না সে। পরীক্ষা দিতে না পারার কষ্টে সাক্ষারণ শুধু কাঁদছে সে। একটি দুর্ঘটনা জীবন থেকে একটি বছর কেড়ে নিল তার।

তিনি বলেন, শুনেছিলাম সিআরপি হাসপাতালে সব চিকিৎসা ফ্রিতে হয়। ভুল শুনেছিলাম। সবখানেই টাকা লাগে। ভর্তির জন্য ৩০ হাজার টাকা আপাতত জমা করতে বলেছিল সেটাও ছিল না আমার কাছে। তাই ভর্তি করতে পারিনি। অনেক কষ্ট করে ছেলেটাকে নিয়ে গেছিলাম। আবার কষ্ট করেই ফিরিয়ে এনেছি। সদর হাসপাতালের ডাক্তার তোজাম্মেল আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু সিআরপিতে বলেছিল অনেক সময় লাগবে। দুই রকমের কথায় কোনো কিছু মেলাতে পারছি না। জানি না ছেলেটাকে আমি সুস্থ করে তুলতে পারবো কীনা? বাড়িতে বিক্রি করার মতো কিছুই নেই। থাকলে সেটি বিক্রি করে সিআরপিতেই ভর্তি করতাম।

এসএসসি পরীক্ষার্থী ইমতিয়াজের পাশে দাঁড়াতে যোগাযোগ করতে পারেন তার বাবা জয়নুল ইসলামের সঙ্গে। মোবাইল : ০১৭২৬-৮৩৭৩৫৪।
সূত্র: জাগোনিউজ


সর্বশেষ সংবাদ