জেএসসি থেকে এসএসসি না পৌঁছাতেই ঝরে পড়ল ৪ লাখ শিক্ষার্থী

  © ফাইল ফটো

২০১৭ সালে যেসব শিক্ষার্থী জেএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল তারাই চলতি বছরের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। কিন্তু দুই বছরের ব্যবধানে ঝরে পড়ল ৩ লাখ ৯২ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী। প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার কিছুটা কমলেও মাধ্যমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার কোনোভাবেই কমছে না। বিনামূল্যের বই দেওয়া, উপবৃত্তিসহ নানা কর্মসূচির পরও ঝরে পড়ার হার না কমায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

পরীক্ষার সার্বিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছর নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৮৮ জন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন করেছিল ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮৮ জন। দু’বছরের ব্যবধানে ঝরে পড়লো প্রায় ৩ লাখ ৯২ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ২০১৭ সালে জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়েছিল ২০ লাখ ১৮ হাজার ২৭১ জন। হিসেবে জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পর্যন্ত আসতে পারেনি ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫৮৩ জন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন করা এবং জেএসসি উত্তীর্ণ হওয়ার মধ্যে হিসাবে একটু গ্যাপ আছে। নবম শ্রেণিতে আগের বছরের অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন করে থাকে। আর জেএসসি পাস করার পর সেসব শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেন তারই মূলত নিয়মিত শিক্ষার্থী।

ঝরে পড়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বলতে পারেনি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৭ সালে যারা জেএসসি পাস করেছে তারা এবার পরীক্ষা দিচ্ছে। এর সঙ্গে কিছু অনিয়মিত শিক্ষার্থী আছে। ২০১৭ সালে জেএসসিতে পাসের হার কম ছিল এজন্য এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম।

শিক্ষা নিয়ে কাজ করে এমন সংশ্লিষ্টরা ব্যক্তিরা বলছেন, স্কুলে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ হলেও মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত এসে ঝরে পডার হার বেশি। সেভ দ্য চিলড্রেনসহ শিশুদের নিয়ে কাজ করা ৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থার এক সমীক্ষা দেখা গেছে, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪১ ভাগ মেয়ে এবং ৩৩ ভাগ ছেলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। এসব প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, স্কুল থেকে ঝরেপড়া এই শিশুরাই আসলে সবচেয়ে বেশি অধিকার বঞ্চিত হয়।

বিশ্বব্যাংকের অন্য একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১৩ লাখ শ্রমিক নতুন করে কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হচ্ছে। মোট শ্রমশক্তির সাড়ে ৮৮ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। তারা মূলত জেএসসি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরেপড়া শিক্ষার্থী। বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনটিতে আরও বলেছে, স্কুলে যাওয়ার উপযুক্ত শিক্ষার্থী মূলত দরিদ্রতার কারণেই স্কুলের বাইরে থেকে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়ে আসা ও ধরে রাখার লক্ষ্যে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছেন। বিনা মূল্যে বই দেয়া থেকে শুরু করে উপবৃত্তি, স্কুলে মিড-ডে মিল চালু রয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ১ কোটি ৪০ লাখ বেশি শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক স্তরের শতভাগ শিক্ষার্থীই উপবৃত্তির আওতায় রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুপুরে খাবার দেয়ার কর্মসূচি শূরু হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরের উপবৃত্তি পরিমান বাড়ানো চিন্তা করছে সরকার। এরপরও ১০ বছরে ৫৫ ভাগের বেশি শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে কেন?

এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ঝরে পড়ার পেছনে নানা কারণে মধ্যে অন্যতম আর্থিক কারণ। কারণ অনেক বাবা-মা মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুলে চেয়ে উপার্জন করুক সেদিকে বেশি মনোযোগী থাকে। আর এ চিন্তা থেকেই বাচ্চাদের স্কুলে দেয়া না তারা।

তিনি বলেন, অনেক সময় শিশুরা বোঝে না যে মাধ্যমিক পড়াশুনা শেষে তারা কি করবে। তাদের সামনে আর কোনো লক্ষ্য থাকে না। তাই পড়াশুনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তারা। মেয়েদের ঝরে পড়ার অন্য একটি কারণ বিয়ে হওয়া বা মেয়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়া আসার পথে হয়রানির শিকার বা নিরাপত্তা।


সর্বশেষ সংবাদ