নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান ৫৩ শতাংশ শিক্ষক

  © ফাইল ছবি

দেশের মাধ্যমিক শিক্ষকদের ২২ দশমিক ৪ শতাংশই প্রাইভেট শিউশনের সঙ্গে জড়িত। এরমধ্যে ৫৩ শতাংশ শিক্ষকই তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়ান। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

দেশের ৬০০ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার শিক্ষকের ওপর গত বছর একটি জরিপ চালায় গণসাক্ষরতা অভিযান। জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ‘সেকেন্ডারি স্কুল টিচারস ইন বাংলাদেশ: ইন দ্যা লাইট অব এসডিজি ফোর’ শীর্ষক এডুকেশন ওয়াচ ২০১৮-১৯ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গণসাক্ষরতা অভিযান।

রবিবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর এলজিইডি মিলনায়তনে প্রতিবেনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।

এডুকেশন ওয়াচ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে প্রাইভেট টিউশনের হার ১৭ দশমিক ২ শতাংশ ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এ হার ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এছাড়া এলাকার দিক থেকে শহর অঞ্চলের শিক্ষকদের মধ্যে প্রাইভেট টিউশনের হার বেশি।

শহর অঞ্চলের ৩০ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষক প্রাইভেট টিউশনের সঙ্গে জড়িত যেখানে গ্রাম অঞ্চলে এ হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। বিষয়ভিত্তিক দিক থেকে গণিতের শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশনে সবচেয়ে বেশি জড়িত।

গণিতের প্রায় ৫১ শতাংশ শিক্ষকই প্রাইভেট টিউশন করান। ইংরেজী, ব্যাবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞানের শিক্ষকদের মধ্যে এ হার যথাক্রমে ৩৭ দশমিক ৫, ২৮ দশমিক ৩ ও ২২ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া প্রাইভেট টিউশনের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ শিক্ষকই নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়ান।

এডুকেশন ওয়াচ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালরে এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ। সভাপতিত্ব করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের ভাইস চেয়ার ড. মনজুর আহমেদ।

অনুষ্ঠানে গবেষণার সারসংক্ষেপ উপস্থাপনা আকারে তুলে ধরেন এডুকেশন ওয়াচ প্রতিবেদন ২০১৮৭-১৯ এর প্রিন্সিপাল রিসার্চার সমীর রঞ্জন নাথ। তিনি সেখানে বলেন, বেশির ভাগ শিক্ষকই পাঠাদনের ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করছে না। শিক্ষকদের উলে­খযোগ্য একটি অংশ শিক্ষাক্রম, শিক্ষানীতি ও এসডিজিরি মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানেন না। এছাড়া বেশির ভাগ শিক্ষকেরই শিক্ষকতার বাইরে অন্য পেশা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকটি পাঠ্যবই পরীক্ষা করে দেখেছি সেখানে যে ধরনের কনটেন্ট দেয়া হয়েছে, তার ৫ থেকে ৭ শতাংশের বেশি একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের পাঠ্যবইগুলো আরো শিক্ষার্থীবান্ধব করতে হবে। দুর্বোধ্য বইয়ের কারণেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের না শিখিয়ে অনেকেই এই সুযোগ ব্যবহার করেই আলাদাভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ানো ও গাইড বইয়ের বাণিজ্য করছে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। ম্যানেজিং কমিটিতে যদি শিক্ষিত লোক না থাকেন, তাহলে তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবেন না। আসলে শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি সব অংশীজনদের এগিয়ে আসতে হবে। অভিভাবকদেও মধ্যেও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।

উপমন্ত্রী বলেন, প্রাইভেট টিউশন কিংবা গাইডবইয়ের যে বাণিজ্য সেখানে ব্যবসায়ী ও ভোক্তা দুইটি শ্রেণিই রয়েছে। অভিভাবকদের মধ্যেও কোচিং ও গাইডবইয়ের মাধ্যমে সন্তানের জন্য বাড়তি কিছু পাওয়ার এক ধরনের প্রবণতা রয়েছে। এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে যে ভুল পরিলক্ষিত হচ্ছে, এই সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত নয়। আমরা সেটি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। এখন দেখা যায় যে শিক্ষার্থীর থেকে তার বইয়ের ওজন বেশি। সরকার প্রণীত বইগুলোর ওজন খুব বেশি নয়। এগুলো স্কুল কর্তৃপক্ষ চাপিয়ে দিচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ