রসায়নের ক্লাস নিচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ডিসি

দাপ্তরিক কাজ শেষে অবসর পেলে বিদ্যালয়ে রসায়ন ক্লাস নেন ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কেএম কামরুজ্জামান সেলিম। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পরপরই তিনি জেলার বিভিন্ন দপ্তর পরিদর্শনের পাশাপাশি নিয়মিত প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন শুরু করেন। পথে কোনো বিদ্যালয় পেলে তিনি সেখানে নেমে পড়েন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর খোঁজ-খবর নেন। কোনো কোনো সময় শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ক্লাসও নেন।

গতকাল বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ডিসি কেএম কামরুজ্জামান সেলিম ঠাকুরগাঁও শহরের কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল ও কলেজের একটি শ্রেণি কক্ষে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রসায়নের ‘রাসায়নিক বিক্রিয়া’ অধ্যায়টি পড়াচ্ছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, জেলা প্রশাসক ওই বিদ্যালয়ে রসায়নের ক্লাস নেন।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল ও কলেজে পরিদর্শনে এসে জেলা প্রশাসক রসায়নের ওপর শিক্ষার্থীদের আরও জোর দেওয়ার বিষয়টি অনুভব করেন। সেই অনুভব থেকেই কামরুজ্জামান সেলিম রসায়ন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে পাঠ্যসূচির কয়েকটি অধ্যায় ভাগাভাগি করে শুরু করেন পাঠদান। সেই থেকে তিনি সময় বের করে চলে আসেন বিদ্যালয়ে। পাঠদান সেরে ফিরে যান পেশাগত কাজে।

বুধবার কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল ও কলেজে কুশল বিনিময় শেষে ডিসি কামরুজ্জামান সেলিম গত পাঠের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি যাচাই করেন। এরপর তিনি শুরু করেন রাসায়নিক বিক্রিয়ার পাঠ। পাঠ শেষে কথা হয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অদিতি রায়ের সঙ্গে। অদিতি বলেন, ‘রসায়ন একটা জটিল বিষয়। আমি রসায়নকে খুব ভয় পাই। কিন্তু স্যার রসায়নকে সহজেই বুঝিয়েছেন। মাঝেমধ্যে তিনি আমাদের পড়ালে রসায়নে দুর্বলতা কেটে যাবে।’

রসায়ন বিষয়ের শিক্ষক হারুন আর রশিদ বলেন, ‘ডিসি স্যারের পাঠদান-কৌশল না দেখলে বঞ্চিত হতাম। তাঁর কাছ থেকে পাঠদানের অনেক কিছু শেখার রয়েছে। সুযোগ পেলেই আমি স্যারের ক্লাসে ছাত্র হয়ে বসে পড়ি।’ কলেজের অধ্যক্ষ নলিনী মোহান্ত বলেন, ‘ডিসি মহোদয় এই প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রসায়ন বিষয়ে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। তিনি ক্লাস শুরু করার পর থেকে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’

জেলা প্রশাসক কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছি। আমি মনে করি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের রসায়ন বিষয়ে দক্ষ হওয়া ছাড়া ভালো ফল করার উপায় নেই। তাই কোনো বিদ্যালয়ে গেলে রসায়ন বিষয়ে পাঠদানের এ সুযোগ হাতছাড়া করি না। আর কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল ও কলেজে আমি পুরোপুরি একজন শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। এতে নিজের ভালো লাগার পাশাপাশি রসায়ন বিষয়ে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের উপকার হবে বলে মনে করি।’


সর্বশেষ সংবাদ