পদার্থ-রসায়নের ক্লাস নিচ্ছেন বাংলার শিক্ষক

  © প্রতীকি ছবি

কখনো পদার্থ, কখনো রসায়নের ক্লাস নিচ্ছেন বাংলায় স্নাতক করা শিক্ষক । আবার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে আসা শিক্ষক ক্লাস নেন সামাজিক বিজ্ঞান বা ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায়। মাগুরা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এমন ঘটনা নিয়মিত। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষকসংকটে অনেকটা নিরুপায় হয়েই এমন পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে তাঁদের। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন, একই সঙ্গে শিক্ষকদেরও বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথমে মাগুরা ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট হিসেবে এই প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। ২০০৩ সালে এসে এটিকে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়। এখানে বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে চারটি বিষয়ে অধ্যয়নরত প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী। এর পাশাপাশি ২০১৬ সালে দুটি বিষয় নিয়ে চালু হয়েছে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। সেখানে বর্তমান শিক্ষার্থী দুই শতাধিক।

সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ ওঠে এই প্রতিষ্ঠানে এক বিষয়ের শিক্ষক অন্য বিষয়ে পাঠদান করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এতে আমাদের অনেক ধরনের সমস্যা হয়। শিক্ষকেরা অনেক বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা দিতে পারেন না। মাঝেমধ্যেই নিয়মিত ক্লাস হয় না।’

অভিযোগের বিষয়ে কথা হয়, কলেজের অধ্যক্ষ মো. আইয়ুব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অনেকাংশেই সত্য। কিন্তু আমাদের কোনো উপায় নেই। কারণ চরম শিক্ষক ও কর্মচারী–সংকটে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠান।’

অধ্যক্ষের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে পর্যায়ে ফার্ম মেশিনারি, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিকস এবং রেফ্রিজারেশন ও এয়ারকন্ডিশনিং বিষয়ে পাঠদান হয়ে থাকে। সেখানে টেকনিক্যাল শিক্ষকদের ১৬টি পদের মধ্যে আছেন কেবল আটজন। আর পদার্থ, রসায়ন, গণিত ও ইংরেজির মতো নন–টেক বিষয়গুলোতে ছয়টি পদের বিপরীত শিক্ষক আছেন দুজন। অধ্যক্ষের কার্যালয় জানিয়েছে, সংকট কমাতে ছয়জন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নামমাত্র বেতন পাওয়া এসব শিক্ষকের অর্থ সংস্থান হয় ছাত্রদের বেতন ও কলেজের নিজস্ব তহবিল থেকে।

অধ্যক্ষ মো. আইয়ুব আলী জানান, ২০১৬ সালে দুটি বিষয় নিয়ে চালু হয় ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। তবে এর জন্য এখনো কোনো জনবল নিয়োগ হয়নি। বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে যেখানে এর একটি বিষয়ের জন্য সাতজন টেকনিক্যাল শিক্ষক রয়েছে। এর পাশাপাশি এসব বিষয়ে ব্যবহারিকের জন্য আলাদা জনবল দরকার হয়। তিনি জানান, ওয়ার্কশপ স্টাফ যেখানে ১৩ জন থাকার কথা, সেখানে এই প্রতিষ্ঠানে রয়েছে মাত্র দুজন। জনবল–সংকট রয়েছে প্রশাসনিক পদেও। প্রধান সহকারীসহ ১৫টি পদের মধ্যে আছে কেবল সাতজন।

অধ্যক্ষ মো. আইয়ুব আলী আরও বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর হলো কারিগরি শাখায় শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। তাই শিক্ষকের এই সংকট দেশের প্রতিটি জেলার টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে রয়েছে। এ সংকটে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমরা শিক্ষকেরাও সমস্যার মধ্যে আছি। এ কারণেই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে আমাদের শিক্ষকদের নিজের বিষয়ের পাশাপাশি অন্য বিষয়েও ক্লাস নিতে হচ্ছে।’

দেশের টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজগুলোয় শিক্ষকসংকট নিয়ে কথা হয়, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রওনক মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজগুলোয় ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালু করা হয়েছিল বিদ্যমান লোকবলের ওপর ভিত্তি করেই। তবে যেহেতু প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, তাই লোকবলের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠিয়েছি, যেটি অনুমোদিত হলে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। আর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শাখায় শিক্ষক নিয়োগ যে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে, তা নয়। তবে সামনে অধিদপ্তরের বেশি কিছু প্রকল্প প্রস্তাব পর্যায়ে রয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়িত হলে শিক্ষকসংকট কেটে যাওয়ার পাশাপাশি দেশের প্রতিটি উপজেলা কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আওতায় আসবে।’ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।


সর্বশেষ সংবাদ