স্কুলে সবার প্রিয় ছিল রুপা, বখাটের উৎপাতে সর্বনাশ

রুকাইয়া আক্তার রুপা
রুকাইয়া আক্তার রুপা

পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় বখাটের উৎপাতে অতিরিক্ত ওষুধ খেয়ে রুকাইয়া আক্তার রুপা (১৫) নামে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। শুক্রবার রাতে টিএন্ডটি রোডে নিজ বাসার এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ভাণ্ডারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মাকসুদুর রহমান জানিয়েছেন, রুপাকে উত্যক্তকারী তামিম খানকে (১৮) বিকেল সাড়ে পাঁচটায় একটি আটক করেছে ভাণ্ডারিয়া থানা পুলিশ। ​

রুপা উপজেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী বন্দর সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং সম্প্রতি ওই স্কুলের স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত সদস্য হন। তামিম উপজেলা সদরের মঞ্জু খানের ছেলে এবং আমানউল্লা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।

রুপার সহপাঠীরা জানায়, রুপা প্রতিদিনের ন্যায় শুক্রবার বিকেলে প্রাইভেট পড়ে সদরের টিএন্ডটি রোডে নিজ বাসায় ফিরছিল। এসময় স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে রুপার সহপাঠীদের পথ অবরুদ্ধ করে তামিম খান ও তার আরো দুই সহযোগী।এ সময় তামিম রুপাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় কিন্তু রুপা তা প্রত্যাখ্যান করে। একাধিক বার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়ে তামিম ক্ষিপ্ত হয়ে তার মোবাইল ফোনে নগ্ন ছবি দেখিয়ে রুপাকে বলে এর সাথে তোমার ছবি জুড়ে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিব।এরপর তামিম চলে যায়। পরে রুপা বাসায় ফিরে চুপচাপ থাকে। ধারনা করা হচ্ছে ওই ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার খবর জানতে পেরে সন্ধ্যায় তার রুমে ঘরে থাকা ওষুধ অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করে।

রুপার বাবা রুহুল মুন্সি থানা চত্বরে সাংবাদিকদের জানান, ওই ছেলে দুই বছর পূর্বে রুপাকে উত্যক্ত করে। সে সময়ে থানায় মামলা করতে গেলে স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় সে অপরাধ স্বীকার করে ভবিষ্যতে এধরনের কাজ করবে না বলে মাফ চায়। দুই বছর পর ফের গত ৩/৪দিন ধরে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। শুক্রবার বাসায় ফিরে ঘটনাটি পরিবারকে জানায় রুপা। পরে সন্ধ্যায় তার স্ত্রী শান্তা বেগমকে ঘর থেকে রুপাকে ডাকতে বললে সে গিয়ে দেখে মেয়ের রুমের ভিতর থেকে আটকানো। এসময় তিনিসহ অন্য স্বজনরা ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া পায় না। পরে ঘরের দরজা ভেঙে মেয়েকে অচেতন অবস্থায় দেখে তাৎক্ষণিকভাবে ভাণ্ডারিয়া হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রুপা মারা যায়।

এদিকে রুপার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং তারা স্কুলের মূল ফটকের সড়ক অবরোধ করে এক মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুল আলম এসে দোষীদের দৃষ্টান্তরমূলক শাস্তির আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যায়। এবিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জিব কুমার হালদার জানান, রুপা অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী মেয়ে। সে স্কুলের স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত সদস্য ছিল।

রুপার বাবা রুহুল মুন্সির দাবি করেন ভাণ্ডারিয়া হাসপাতালে যদি তার মেয়ের সঠিক চিকিৎসা হতো তা হলে হয়তো সে মারা যেত না।এদিকে রুপার লাশ থানায় নিয়ে আসলে রাত থেকেই স্বজনসহ এলাকার লোকজন থানা চত্বরে ভিড় জমায়।

ভাণ্ডারিয়া থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) এস এম মাকসুদুর রহমান জানান, লাশ ময়না তদন্তের জন্য জেলা মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ