আমার মেয়ে দুনিয়ায় নয় আখেরাতের পরীক্ষায় পাস করবে

গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। রোল নম্বর ছিল ১৪৯৬১৪। ৬ এপ্রিলের আগে শুধুমাত্র কুরআন মাজিদ ও হাদিস পরীক্ষা দিতে পেরেছিলেন নুসরাত। আজ সারাদেশের এইচএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। সেখানে ভালো ফলই করেছেন আগুনে পুড়িয়ে মারা মেয়েটা।

এদিকে আজ বুধবার আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশের খবর পাওয়ার পর থেকে কান্না থামছে না নুসরাতের স্বজনদের। নুসরাতের মা শিরিনা আক্তারের বিলাপ যেন থামতেই চায় না। শিরিনা আক্তার বলেন, আমার মেয়ে দুনিয়ার পরীক্ষায় পাস করতে না পারলেও আখেরাতের পরীক্ষায় পাস করবে।

সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় নুসরাতসহ ১৭৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে ১৫২ জন পাস করে। নুসরাতসহ ২৭ জন ফেল করে। এ মাদরাসায় এবার পাসের হার ৮৬.৮৬ শতাংশ।

মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. হুসাইন বলেন, নুসরাত সবগুলো পরীক্ষা দিতে পারলে ভালো ফল করতো। লেখাপড়ার প্রতি মেয়েটার কতটা আগ্রহ থাকলে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরীক্ষায় অংশ নেয়। 

পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর নুসরাতের সহপাঠী ও স্বজনরা শোক ধরে রাখতে পারছেন না। বুধবার মাদরাসায় পরীক্ষার ফলাফল জানতে আসা শিক্ষার্থীরা নুসরাতের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় উপস্থিত শিক্ষকদের চোখেও নেমে আসে শোকের অশ্রু। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

প্রকাশিত ফলাফলে নাম আছে নুসরাতেরও। ফলাফলের পাশে লেখা আছে ফেল। তবে বাস্তবে পাসই করেছেন নুসরাত। যে দুটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন তাতে মিলিত ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন। ওই দুটি বিষয়ে মিলিয়ে গড় করে একটি ফল দেওয়া হয়। বাকি পরীক্ষা দেওয়ার আগেই দুর্বৃত্তদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে তাকে।

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে গত এপ্রিলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সে সময় আলিম পরীক্ষা চলছিল তার। পরীক্ষা কেন্দ্রেরই ছাদেই পুড়িয়ে হত্যা করা হয় তাকে। ওই আসামীদের সবার বিচার চলছে এখন।