জিপিএ-৫ পেয়েও দরিদ্রতার কাছে হেরে যাবে মারুফ!

  © সংগৃহীত

এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন কিন্তু তা–ও মারুফের মুখে হাসি ফোটেনি। দরিদ্রতার কষাঘাতে পৃষ্ঠ মারুফের জীবন। পরিবারের হাল ধরেছেন মা, কারণ অসুস্থ বাবা কাজ করতে পারেন না। কিন্তু মায়ের একার আয়ে কি আর চলে পাঁচজনের সংসার। তাই দিনমজুর, কখনো রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন মারুফ। কিন্তু হাল ছাড়েননি মারুফ। আধপেটা থেকেই চালিয়ে গেছেন পড়ালেখা। কষ্টের ফলও পেয়েছেন।

এই অদম্যের পুরো নাম মারুফ ইসলাম। রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের সরকারপাড়া গ্রামের দিনমজুর এমদাদুল ইসলামের ছেলে সে। সংসার ও লেখাপড়ার খরচ জোগাতে কখনো দিনমজুরি আবার কখনো রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করেছে মারুফ। অন্যের দেওয়া জামা পরে, প্রায় দিন না খেয়ে স্কুল যেতে হয়েছে তাকে। কিন্তু কোনো প্রতিবন্ধকতাই তাঁর স্বপ্ন দেখায় বাধা হতে পারেনি। তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। লেখাপড়ার খরচ কীভাবে চালিয়ে নেবে— তা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় আছেন মারুফ ।

ইকরচালী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, মারুফদের পরিবারের অবস্থা এতই করুণ যে ঠিকমতো দুই বেলার খাবার জোটে না। মারুফের মায়ের নামে এবার ভিজিডি কার্ড করে দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে সরকারপাড়া গ্রামে মারুফদের বাড়ি। সহায় সম্বল বলতে বসতভিটার তিন শতক জমির ওপর একটা দোচালা ভাঙাচোরা টিনের ঘর। সেখানে কোনোমতে মাথা গুঁজে থাকে তিন ভাইবোন ও বাবা-মা। মারুফের বাবা এমদাদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। মারুফের মা মাহামুদা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা আয় করেন, তা দিয়ে দুই বেলার খাবারই জোটে না।

ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গরিব ঘরের ছেলে মারুফ সত্যি মেধাবী। সে অষ্টম শ্রেণিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছিল। দারিদ্র্য তাকে আটকাতে পারেনি। আমাদের স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৩৮ জনের মধ্যে একমাত্র জিপিএ-৫ পেয়ে সবার মুখ উজ্জ্বল করেছে মারুফ।’

মারুফের মা মাহমুদা বেগম বলেন, ‘ছাওয়াটাক তো পেটভরে খাবারে দিবার পাও না। ক্যামন করি পড়াইম কন?’

তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বলেন, মারুফের বাবার কোনো আবাদি জমি নেই। তিন শতক বসতভিটাই সম্বল। মারুফ অনেক কষ্টে পড়াশোনা করছে।

বিকাশ নম্বর: ০১৭৫১০৯৫৯৬৪


সর্বশেষ সংবাদ